স্টাফ রিপোর্টার : শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীতে গতকাল বুধবার মন্দির-মণ্ডপে বেজেছে আনন্দ-বেদনার মিশ্রসুর। দেবীদুর্গার বন্দনায় ছিল ভিন্ন এক আবহ। উৎসবের আনন্দের পাশাপাশি ভক্তের হৃদয়ে মেঘ জমেছে দেবীকে বিদায় দেওয়ার কথা ভেবে। আজ বিজয়া দশমীর পূজা-অর্চনার পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবটি।
কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মাধ্যমে গতকাল সকালে শুরু হয় নবমীর আনুষ্ঠানিকতা। পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন করেন। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখা তুঙ্গে ওঠে এদিন। তুলনা চলে বিভিন্ন এলাকার প্রতিমার গড়ন আর মণ্ডপের সাজসজ্জা নিয়েও। দুর্গতিনাশিনী দেবীর আগমনে দেশের মন্দির-মণ্ডপে আনন্দের যে লহর বইছিল, আজ দশমী তিথিতে তা শেষ হবে অশ্রুজলে। এদিন সরকারি ছুটি।
দশমীতে সকাল থেকেই ঢাকের বাদ্য, শঙ্খনাদ আর উলুধ্বনিতে পূজামণ্ডপে চলবে দেবীর আরাধনা। আনন্দ উৎসবের এই মুহূর্ত বিকেলে শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
দশমীর তাৎপর্য জানতে চাইলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত রাজীব চক্রবর্তী বলেন, ‘দেবীদুর্গার সঙ্গে যুদ্ধে মহিষাসুর পতন ঘটেছে আর মায়ের বিজয় হয়েছে বলেই আজ শুভ বিজয়া।’
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পিতৃগৃহ থেকে পুত্র-কন্যা নিয়ে দেবী দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাসে তাঁর স্বামীর ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণিতে। পূজা শুরুর কয়েক দিন আগে মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভুজা দেবীদুর্গা। আর দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাঁকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। দেবীর এই আগমন ও প্রস্থানের মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। দেশজুড়ে এবার ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মন্দির-মণ্ডপে পূজা হয়েছে।
দেবীর বাহন একেকবার একেক রকম হয়। পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর দেবীর আগমন গজ বা হাতিতে, যা সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। তবে দেবীর প্রত্যাবর্তন দোলায় বা পালকিতে, যা শাস্ত্রমতে শুভ নয়। এটিকে মহামারি বা মড়কের ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হয়।
ঢাকেশ্বরী মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিজয়া দশমীতে তাদের কর্মসূচিতে রয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং বিকেল ৩টায় শোভাযাত্রা। পরে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।