রবিবার, 13 জুলাই 2025
MENU
daily-fulki

কারিগরি শিক্ষায় আসছে নানা পরিবর্তন, লক্ষ্য ‘স্কিলড বাংলাদেশ’


স্টাফ রিপোর্টার : দেশের কারিগরি শিক্ষার যুগোপযোগী উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। আগে থেকে চলমান নানা প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, কারিকুলাম আধুনিকায়ন, ভর্তি নীতিমালায় পরিবর্তন এবং শিল্প খাতের সঙ্গে কার্যকর সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে ‘স্কিলড বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কাটছে শিক্ষক সংকট, গতি ফিরছে পাঠদানে

শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, কারিগরিতে শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় ৪৩তম বিসিএসের (ক্যাডার ও নন-ক্যাডার) মাধ্যমে ১৩১ জন এবং সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও ২ হাজার ৮৮১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট অনেকটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। এছাড়া জুলাই-আগস্টে অতিরিক্ত ১৪৮ জন নবম গ্রেডভুক্ত শিক্ষক দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
একইসঙ্গে, ৪৪তম থেকে ৪৭তম বিসিএসের আওতায় আরও ১ হাজার ৫টি শিক্ষক পদের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৮ জন শিক্ষককে পদোন্নতি এবং ১ হাজার ৭২ জনকে উচ্চতর গ্রেড প্রদান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের জন্য নতুন করে ৯৮টি পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর জন্য ‘নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগবিধি-২০১৫’ সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে।
এ ছাড়া, কারিগরি বিভাগে নতুন করে ১১টি ক্যাডার পদ এবং ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের আরও ২৪টি নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে স্কেল ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।
সরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা

সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী ভর্তিতে চালু হতে যাচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার চিন্তা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সম্ভাব্য এই ভর্তি পরীক্ষায় থাকবে মোট ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন। এর মধ্যে ৭০ নম্বর থাকবে লিখিত পরীক্ষায় এবং বাকি ৩০ নম্বর এমসিকিউ (বহুনির্বাচনি প্রশ্ন) অংশে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে চাই। তাই শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করে তাদের ভর্তি নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে প্রকৃত আগ্রহী ও যোগ্য শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষায় যুক্ত হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে এসএসসি পাস করলেই সরকারি পলিটেকনিকে সরাসরি ভর্তি হওয়া যায়। ফলে অনেক সময় অনাগ্রহী বা অপ্রস্তুত শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পাঠদানের মান ও শিক্ষার ফলাফলে।

 

পদবি পরিবর্তন, প্রকল্প অনুমোদন ও মানোন্নয়নে নতুন কর্মসূচি

কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা উন্নয়ন, অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ এবং শিল্প-সংযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়নে একাধিক বড় পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে বর্তমানে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সম্প্রতি আরও কয়েকটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়েছে।

এ ছাড়া, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ‘ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর’ পদটি ধাপে ধাপে বিলুপ্তির সিদ্ধান্তের আলোকে নতুন নিয়োগ কাঠামো ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

নতুন নিয়োগ কাঠামো অনুযায়ী, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘জুনিয়র ল্যাব সহকারী (টেক)’ পদে ১৬তম গ্রেডে সরাসরি নিয়োগ, ‘ল্যাব সহকারী (টেক)’ পদে ১৩তম গ্রেডে পদোন্নতি এবং ‘সিনিয়র ল্যাব সহকারী (টেক)’ পদে ১১তম গ্রেডে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পদোন্নতি, অবসর, পদত্যাগ বা মৃত্যুর কারণে ধাপে ধাপে বিদ্যমান ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদটি বিলুপ্ত হবে। এ লক্ষ্যে সমসংখ্যক নতুন পদ সৃষ্টি ও সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে অ্যাসেট প্রকল্প (৪৩০০ কোটি টাকা), উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (২০,৫২৫ দশমিক ৬৯ কোটি টাকা), ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি (১৩৯৫ দশমিক ৭০ কোটি টাকা), ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (২৫২০ দশমিক ৪০ কোটি টাকা), ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন (৩৬৫১ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা), ৪টি বিভাগীয় শহরে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন (৪০১ দশমিক ১৪ কোটি টাকা), এবং চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন (১২২২ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা)। এছাড়া ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন প্রকল্প (৩৪০ দশমিক ২৮ কোটি টাকা) চলমান রয়েছে।

সম্প্রতি একনেক সভায় আরও দুটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর একটি হলো- ‘১৫টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্প, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫১৩ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা।

অন্যটি হলো- ‘কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন ৮টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫১ দশমিক ৭ কোটি টাকা। 
আধুনিক কারিকুলাম ও মডেল ইনস্টিটিউট

কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে বড় ধরনের সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির আদলে গাজীপুরে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। ১৫ একর জমির ওপর নির্মিতব্য এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বমানের প্রযুক্তিগত ও ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে।

শুধু অবকাঠামো নয়, কারিগরি শিক্ষার পাঠ্যক্রম ও কোর্সও আধুনিকায়নের পথে হাঁটছে সরকার। এ লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কারিকুলাম উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এবং অস্ট্রেলিয়ান প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য কাঠামো তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (বিএনকিউএফ) এর ১০ স্তরের একটি খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। এই কাঠামো চূড়ান্ত নীতিমালা হিসেবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।
‘এক কোর্স, এক মানদণ্ড’

কারিগরি শিক্ষায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ও গুণগত মান নিশ্চিতে ‘এক কোর্স, এক মানদণ্ড’ নীতিতে অটল রয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের পাঠদান অনুমতি ও নবায়নসংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এলোমেলো অনুমোদনের প্রবণতা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একই এলাকায় একাধিক প্রতিষ্ঠান নয়

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড জানায়, একই এলাকায় একই ধরনের একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পৌর ও শিল্প এলাকায় দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ন্যূনতম এক কিলোমিটার এবং অন্যান্য এলাকায় দুই কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদরের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার একটি ঊর্ধ্বসীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে। এরসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নাম বা স্থান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বোর্ডের পূর্বানুমতি এবং যৌক্তিক কারণ দর্শানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নিয়মও রাখা হয়েছে।  

এ ছাড়া, সরেজমিনে পরিদর্শন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পাঠদানের অনুমতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও দেখভাল করতে বাড়ানো হচ্ছে তৎপরতা।

প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাড়ানো হচ্ছে নজরদারি

প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তদারকি ও মূল্যায়ন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. রুহুল আমীন।

তিনি বলেন, দেশে দক্ষ জনশক্তি গঠনে নতুন মাত্রা যোগ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রকৃত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করা জরুরি।

ড. রুহুল আমীন বলেন, আমরা প্রতিটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মূল্যায়ন ও তদারকি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে শিক্ষার মান উন্নত হয় এবং শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের যেন শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞান না দিয়ে, বাস্তবমুখী ও ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে তারা দক্ষ কর্মী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে এবং বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। আমরা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সক্ষম করে তোলার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।

তিনি আরও বলেন, মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তি। এটি ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান সমস্যা মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করবে। তাই আমাদের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোত্তম শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
‘স্কিলড বাংলাদেশ’ গড়তে বড় ভূমিকা রাখবে কারিগরি শিক্ষা

বিশ্বব্যাপী শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির যে ধারা তৈরি হয়েছে, তাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ. ম কবিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ‘স্কিলড বাংলাদেশ’ গড়ার দায়বদ্ধতায় কারিগরি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এসব উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ‘স্কিলড বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্ন শুধু পূরণই নয়, একটি আন্তর্জাতিক মানের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাও গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

সচিব বলেন, কারিগরি শিক্ষাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সরকার নানামুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করতে নতুন ভর্তি নীতিমালা প্রণয়ন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভর্তির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, তদবির ও অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এবার প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে একযোগে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা কারিগরি শিক্ষাখাতে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এতে মেধার ভিত্তিতে যোগ্য শিক্ষার্থীদের সুযোগ নিশ্চিত হবে, একইসঙ্গে তদবিরবাজ ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস পাবে। এই সংস্কার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যায়সংগত প্রতিযোগিতার মানসিকতা গড়ে তুলবে, যা ভবিষ্যতের দক্ষ ও সচেতন নাগরিক গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

নতুন করে বরাদ্দ বেড়েছে

চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৯৩৪ কোটি টাকা। তিন মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে শিক্ষা খাতকে এবারও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। অতিরিক্ত বরাদ্দের পরিমাণ ৮৯৫ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এ বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া সরকারের শিক্ষাবান্ধব মনোভাবেরই প্রমাণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির যে ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে, এই বরাদ্দ তা আরও ত্বরান্বিত করবে। আমরা এই বাড়তি বরাদ্দকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা বিস্তারে কাজ করব। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী করে তোলাই আমাদের অগ্রাধিকার।

তিনি আরও বলেন, এই বরাদ্দ শুধু সংখ্যা নয়, এটি ভবিষ্যতের দক্ষ জনশক্তি গঠনের ভিত্তি। আমরা যেন এর সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারি, সেজন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
 

 


News Writer

SB

সর্বাধিক পঠিত