বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

১৪ লাখ প্রবাসীর হাতে ই-পাসপোর্ট


স্টাফ রিপোর্টার : দেশে বসবাসকারীদের পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ই-পাসপোর্টের আওতায় আনতে কাজ করছে পাসপোর্ট অধিদফতর। ইতোমধ্যে দেশের বাইরে ৬৫টি দূতাবাসের মাধ্যমে ১৪৪টি দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের ই-পাসপোর্টের আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সর্বশেষ আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

এই ৬৫টি দূতাবাসের মাধ্যমে চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি প্রবাসীকে ই-পাসপোর্টের আওতায় আনা হয়েছে।


এ বিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার বলেন, ‘‘আমরা সব প্রবাসীর ই-পাসপোর্টের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সব দূতাবাসেই এই কার্যক্রম চালু করা হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপে বসবাসরত প্রায় ১৪ লাখ প্রবাসীকে ই-পাসপোর্টের আওতায় আনা হয়েছে। শিগগিরই সব প্রবাসী এর আওতায় আসবেন।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বড় বড় প্রায় সব দেশেই আমাদের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। কিছু ছোট ছোট দেশ আছে, যেখানে অল্পসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, তাদেরও আমরা ই-পাসপোর্টের আওতায় আনবো।’’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

ই-পাসপোর্ট চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৯তম দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বলে সেই অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়।

প্রথম ধাপে রাজধানীর আগারগাঁও, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের সব পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে দেওয়া শুরু হয়।

পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশের পর গত ৫ বছরে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দেশের প্রতিটি আঞ্চলিক অফিসে এই কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দেশের বাইরে যেখানে উল্লেখযোগ্য প্রবাসী থাকেন, সেখানেও এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

ই-পাসপোর্ট কী

বর্তমানে এমআরপি বা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য রয়েছে, যদিও বই একই।

এমআরপিতে প্রথমে দুই পাতায় যে তথ্য থাকতো—ই-পাসপোর্টে তা থাকে না। ই-পাসপোর্টে রয়েছে পালিমানের তৈরি একটি কার্ড ও অ্যান্টেনা। কার্ডের ভেতরে চিপ। সেখানে সংরক্ষিত থাকে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য।

ডাটাবেজে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ থাকে। ফলে ভ্রমণকারীর তথ্য সহজেই জানতে পারে কর্তৃপক্ষ।

অতিরিক্ত সুবিধা বা পার্থক্য

এমআরপি দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসারের মাধ্যমে একজন যাত্রী বন্দর পার হতে পারেন। তবে অত্যাধুনিক ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—ভ্রমণকারীরা খুবই দ্রুত এবং সহজে ই-গেটের মাধ্যমে নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দেশের বাইরে যেতে পারেন। বিভিন্ন বিমানবন্দরে তাদের ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় না।

দেশের বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। ই-পাসপোর্টধারীরা নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট পাঞ্চ করে ই-গেটের সামনে দাঁড়ালে সেখানে স্থাপিত ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ছবি তুলে নেয়। এরপর ই-গেটের মনিটরে আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন। যদি পাসপোর্টধারীর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকে বা তার তথ্য ও ছবিতে মিল না থাকে, তবে ই-গেটে লালবাতি জ্বলে উঠবে।

ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি ই-পাসপোর্ট গেট বসানো হয়েছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আরও ৫০টি ই-গেট স্থাপন করা হবে। সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এসব ই-গেট স্থাপন করলেও এগুলো পরিচালনা করবে ইমিগ্রেশন বিভাগ।

এক মিনিটেরও কম সময়ে ইমিগ্রেশন

ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে একজন বিদেশগামী কারও সাহায্য ছাড়া নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন। পুরো প্রক্রিয়াটি এক মিনিটেরও কম সময়ে সম্পন্ন হবে। এটিই সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিরাপদ ও অত্যাধুনিক পাসপোর্ট হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের ১১৮টি দেশে ই-পাসপোর্টের ব্যবহার রয়েছে।

 

সর্বাধিক পঠিত