স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি জিটিও’র ব্রিটিশ-মার্কিন সাংবাদিক মেহদি হাসানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা যেকোনো সময় তুলে নেওয়া হতে পারে’ এমন কথা বলেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়। সেটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তবে বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।
বাংলাফ্যাক্ট জানায়, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বলেননি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাফ্যাক্ট আরও জানায়, আলোচিত সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদতে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ‘কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না’। এমনকি আগামী নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবে না। তার ভাষায়, ‘দলটির বৈশিষ্ট্য দেখে এবং তারা যে পুরো নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে সেই সম্ভাবনা বুঝে নির্বাচন কমিশন ভেবেছে যে, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি না দেওয়াই ভালো’।
স্পষ্টতার খাতিরে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যথায়, আমরা নির্বাচন করতে পারবো না।’ তবে একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়টিকে তিনি ‘আপাতত’ বা ‘ফর দা টাইম বিয়িং’ বলতে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত’ কথাটা বুঝিয়েছেন।
এ বছরের ১০ মে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধের সেই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ থাকবে।
সুতরাং মেহদি হাসানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত’ সময়টাকেই ‘ফর দা টাইম বিয়িং’ হিসেবে বলেছেন। এবং ‘কোনো এক সময় এটা (কার্যক্রম) চালু হতে পারে’ বলে তিনি এই বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়ার পরের সময়কেই বুঝিয়েছেন; বর্তমান সময় বা নির্বাচনকালীন সময় নয়।
কী ছিল সাক্ষাৎকারে ?
মেহদি হাসান: হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, আপনার সরকার তার সাবেক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, তাদের নিবন্ধন স্থগিত করেছে, ফলপ্রসূভাবে তাদের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ আপনারসহ-নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, যাকে আপনি খুব ভালো করে চেনেন; তিনি লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছিলেন, এটি কেবল আগের সরকারের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে। তারা ক্ষমতায় এসে তাদের বিরোধীদের নিষিদ্ধ করেছিল। আপনি শুধু সেই চক্রেরই পুনরাবৃত্তি করছেন। সেন এবং অন্যদের এ ধরনের সমালোচনার জবাবে আপনি কী বলবেন?
ড. ইউনূস: এটা তাদের নিজস্ব সমালোচনা, কারণ আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি।
মেহদি হাসান: মানে বোঝাতে চাইছি, আপনারা তাদের নিবন্ধন স্থগিত করেছেন।
ড. ইউনূস: না, নিবন্ধন নয় (আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা হয়নি, বরং ইসি কর্তৃক স্থগিত করা হয়েছে)। কেবল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
মেহদি হাসান: এর কী অর্থ দাঁড়ায়?
ড. ইউনূস: এর মানে হলো, তারা কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
মেহদি হাসান: তাহলে আপনারা তো মূলত... মানে, তারা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না।
ড. ইউনূস: না, না। দলটি তো এখনও আছে।
মেহদি হাসান: তারা কি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে?
ড. ইউনূস: এখন নয়। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মেহদি হাসান: ঠিক আছে, তাহলে অমর্ত্য সেন যার বিরুদ্ধে সতর্ক করছেন, এটা কীভাবে সেটাই নয়?
ড. ইউনূস: অতএব তারা, তারা একটা দল হিসাবে বহাল থাকছে।
মেহদি হাসান: আচ্ছা।
ড. ইউনূস: তবে আপাতত কার্যক্রম স্থগিত।
মেহদি হাসান: আর কী...
ড. ইউনূস: মানে, কোনো এক সময় এটা (কার্যক্রম) চালু হতে পারবে।
মেহদি হাসান: মানে আপনি তাদের স্থগিতাদেশ তুলে নিতে পারেন?
ড. ইউনূস: স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া। এটা একটা সম্ভাবনা।
মেহদি হাসান: তাহলে আপনি দলটিকে নিষিদ্ধ করেননি, আপনি শুধু বলেছেন, আপাতত তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
ড. ইউনূস: ঠিক তাই।
মেহদি হাসান: কিন্তু একটি গোষ্ঠীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা কীভাবে গণতান্ত্রিক?
ড. ইউনূস: দেখুন...দলটির বৈশিষ্ট্য দেখে এবং তারা যে পুরো নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে সেই সম্ভাবনা বুঝে নির্বাচন কমিশন ভেবেছে যে, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি না দেওয়াই ভালো।