বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

শৈশবের ভুলও কি গুনাহ হিসেবে গণ্য হবে?

 

শৈশবে মানুষ অনেক সময় এমন কিছু ভুল ও পাপ করে যা তাকে পরিণত বয়সে অনুশোচনায় ভুগায়। এই পাপগুলো নিয়ে মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে। শৈশবে ঘটে যাওয়ার ভুলের একটি ঘটনা নিয়ে একজন জানতে চেয়েছেন—


আমি যখন ছোট ছিলাম, বালেগ হওয়ার আগে আমার এক বড় কাজিনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। তখন আমি বুঝতাম না—কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল।

কিন্তু বুঝতে পারার পরই আমি তা বন্ধ করে দেই। তারপর থেকেই খুব অনুশোচনায় ভুগছি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি। তবুও সেই স্মৃতিগুলো আজও আমাকে কষ্ট দেয়। আমি কি অপবিত্র? এর জন্য কি আমাকে হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে?

 

এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ইসলামি স্কলারদের মতামত হলো— প্রথমেই একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলা দরকার, শৈশব বা বালেগ হওয়ার আগের কোনো গুনাহের হিসাব লেখা হয় না। ইসলামী বিধান অনুযায়ী—শিশুরা সৎ কাজ করলে তার সওয়াব পায়, কিন্তু কোনো ভুল করলে তার জন্য তাদের কোনো শাস্তি নেই।

শৈশবে যখন আপনি ভালো-মন্দ, সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখেননি, সেই সময়ের গুনাহ বা ভুলের জন্য আপনাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে না।


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আপনি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে সেই কাজ বন্ধ করেছেন, অনুশোচনা করেছেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে ঘোষণা করেছেন :

বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আয-যুমার, আয়াত : ৫৩)

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট—আল্লাহ তায়ালার রহমতের দরজা সবসময় খোলা। আপনি আন্তরিকভাবে তওবা করেছেন, তাই আশা করা যায় আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করেছেন।

এখন আপনার করণীয় হলো—অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া। অতীত নিয়ে বারবার চিন্তা করা শয়তানের কুমন্ত্রণা, কারণ, এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হয়ে পড়ে। তাই এ ব্যাপারে একেবারেই চিন্তা না করে ইবাদত, দোয়া এবং ভালো কাজে মনোযোগী হওয়া জরুরি।

আরেকটি প্রশ্ন ছিল—আপনি অপবিত্র কি না?—না, কখনোই না। আল্লাহর কাছে তওবা করার পর আপনি আগের মতোই পবিত্র।

আর ভবিষ্যতে বিয়ের সময় যদি কেউ আপনার অতীত সম্পর্কে জানতে চায়, সেক্ষেত্রে কোনো গোপন পাপ প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই।

আলেমরা স্পষ্ট বলেছেন—আল্লাহ যখন বান্দার গুনাহ ঢেকে রেখেছেন, তখন তা আর কারও কাছে খোলাসা করা উচিত নয়।

সুতরাং নিশ্চিন্ত থাকুন। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করেছেন, ইনশাআল্লাহ। এখন আপনার উচিত নিয়মিত নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, দোয়া করা এবং ইতিবাচক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। এতে অতীতের দুঃখ ভুলে নতুনভাবে জীবন সাজাতে পারবেন।

আল্লাহ আপনার জন্য সহজ করুন—আমিন।

 

সর্বাধিক পঠিত