স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স (স্নাতক) শেষ করা প্রতি তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন সর্বোচ্চ দুই বছর ধরে বেকার ছিলেন। এছাড়া প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত চাকরি পাননি। অপরদিকে, প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বেকার ছিলেন।
এই তথ্য এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত শ্রমশক্তি জরিপ থেকে।
সরকারি এই সংস্থা চলতি মাসে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
চাকরি বিশেষজ্ঞরা স্নাতকদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার থাকার বিষয়টিকে গুরুতর উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব তরুণদের কর্মজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যারা এক থেকে দুই বছর দেরিতে কর্মজীবন শুরু করেন, তারা পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই পিছিয়ে থাকার ঝুঁকিতে থাকেন।
শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে দেশে মোট ২৬.২৪ লাখ বেকার ছিল, যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ছিলেন ৮.৮৫ লাখ। প্রতিবেদনে চাকরিপ্রার্থীরা কীভাবে কাজ খুঁজছেন এবং সামগ্রিক শ্রমবাজারের অবস্থা কেমন—তা বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৩৬ শতাংশ বেকার তরুণ প্রধানত আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের উপর নির্ভর করেছেন চাকরি খোঁজার জন্য। প্রায় ২৬ শতাংশ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আবেদন করেছেন।
প্রায় ১২ শতাংশ সরাসরি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যোগাযোগ করেছেন এবং ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি আবেদন পাঠিয়েছেন। আরো ৫.৫ শতাংশ বলেছেন, তারা শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন দেখার পর আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন, আর ৩.৫ শতাংশ চাকরির জন্য ‘ওয়াক-ইন ইন্টারভিউ’-এর চেষ্টা করেছেন।
এসব বিষয়কে নিয়ে জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মসংস্থান খাতের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ছয় মাসের পরেও যদি কাজ না মেলে, সেটিই উদ্বেগজনক। এটি স্পষ্টতই প্রতিভা ও সম্পদের অপচয়। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে একে আমরা বলি ‘সম্পদের ভুল ব্যবহার’ বা ‘দক্ষতার অপ্রতুল ব্যবহার’।
দীর্ঘমেয়াদে এটি আরো বড় সমস্যা।
চাকরি খোঁজার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ছিল, যেমন—পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বা প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা। এখন বেশিরভাগ চাকরি অনুসন্ধান অনলাইনে চলে গেছে, ফলে অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্কিংয়ের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষণা ফেলো বদরুন নেসা আহমেদ বলেন, শিক্ষার মানের দুর্বলতা ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের ঘাটতি অন্যতম কারণ। স্নাতকদের ক্ষেত্রে মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মান সত্যিই বড় পার্থক্য গড়ে দেয়।
স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্ব প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এটি আমাদের অর্থনীতির কঠিন বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। এর কারণ হলো কর্মসংস্থান তৈরির জন্য আমাদের অর্থনীতিতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ হচ্ছে না।
বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি গত সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ না করে থাকেন বা অস্থায়ীভাবে কাজ থেকে বিরত থাকেন এবং বর্তমানে কাজের জন্য প্রস্তুত থাকেন কিংবা গত চার সপ্তাহে কাজ খুঁজে থাকেন বা ব্যবসা বা খামার শুরু করার চেষ্টা করে থাকেন, তবে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
বাংলাদেশে সপ্তাহে মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করে বেঁচে থাকা কার্যত অসম্ভব। এছাড়া প্রায় এক কোটি মানুষ যারা পছন্দসই কাজ পাচ্ছেন না, তারা আংশিক বেকার বা ছদ্মবেশী বেকার হিসেবে শ্রেণিভুক্ত।