বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

সরকারি এলপি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব

 

স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি এলপিজির দাম আবারও বাড়তে পারে। সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে সরকারি কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউসুফ হোসেন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত ঐ আবেদন গত সপ্তাহে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দেওয়া হয়েছে।


মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে এলপি গ্যাস লিমিটেড বলেছে, ক্রসফিলিং বন্ধ, ডিলার পর্যায়ে স্থানীয় পরিবহন, অপারেশন খরচ ও চার্জ বৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি কোম্পানির এলপিজির দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ার বিষয়টিও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশের মোট এলপিজি ব্যবহারের ৯৭-৯৮ শতাংশই হয় আমদানিকৃত বিউটেন ও প্রোপেন থেকে, যা বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি বোতলজাত করে বিক্রি করে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। সৌদি সিপিকে (চুক্তি মূল্য) ভিত্তিমূল্য বিবেচনা করা করে বাজার-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিয়ে এলপিজির দর ঘোষণা করা হয়। সিপির দর ওঠানামা করলে ভিত্তিমূল্য ওঠানামা করে। অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকে।

২০২১ সালে বলা হয়েছিল বেসরকারি কোম্পানিগুলো চড়াদামে আমদানি করলেও এলপি গ্যাস লিমিটেড দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে উপজাত হিসেবে বিউটেন ও প্রোপেন অনেক কমদামে সংগ্রহ করে। সে কারণে বিইআরসি ফর্মুলা (না লোকসান না মুনাফা) অনুযায়ী এলপি গ্যাস লিমিটেডের দর ঘোষণা করা হয়। তখন সাড়ে ১২ কেজির দাম ৬৯০ টাকা নির্ধারিত ছিল। এরপর ২০২৫ সালের ৪ মে গণশুনানি ছাড়াই দাম বাড়ানো হয়। তখন বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেছিলেন, সরকারি কোম্পানির এলপি গ্যাসের দামে কিছু প্যারামিটার রয়েছে। সেসব প্যারামিটারে পরিবর্তন এসেছে, সে কারণে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেভাবে আমরা বেসরকারি এলপি গ্যাসের দাম প্রতিমাসে সমন্বয় করছি।


সর্বশেষ গত ৪ মে গণশুনানি ছাড়াই ১২.৫ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৬৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮২৫ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। তখন এর প্রতিবাদ করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। চলতি সেপ্টেম্বরে বেসরকারি পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৭০ টাকা নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নির্ধারিত দামে বাজারে এ রান্নার গ্যাস পাওয়া যায় না। এলাকাভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি খরচ করে কিনতে হয় এটি।

এলপি গ্যাস লিমিটেডের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ হাজার ৭২৩ মেট্রিক টন এলপিজি বিক্রি করেছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীকে ৭২২ মেট্রিক টনসহ মোট ৮৩৪ মে. টন পাইকারি আকারে সরবরাহ করেছে। অবশিষ্ট এলপিজি বোতলজাত করে বিক্রি করেছে কোম্পানিটি। এ বছর করপূর্ব মুনাফা করেছে ১০ কোটি ২ লাখ টাকা, ডব্লিউপিপিএফ ৫০ লাখ এবং আয়কর বাবদ ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা জমার পর করোত্তর নিট মুনাফা করেছে ৬ কোটি ৩৯ টাকা। বিইআরসি ফর্মুলা (না লোকসান না মুনাফা) অনুযায়ী দাম বাড়ানোর কতটা সুযোগ রয়েছে সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর সুরাহা চেয়ে গণশুনানি ছাড়াই দাম বাড়ানো নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্যাব রাষ্ট্রপতির বরাবরে অভিযোগ দিয়েছিল কয়েক মাস আগে। এলপি গ্যাস লিমিটেডের এক কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবে ডিলারদের পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে ডিলাররা পরিবহন খরচ ও কমিশন বাবদ ৪১ টাকা পান। তারা স্বল্প পরিমাণে সিলিন্ডার পেয়ে থাকেন। এতে তাদের খরচ উঠছে না। যে কারণে আরও ১০০ টাকা বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।

দেশে বছরে ১৫ লাখ টনের বেশি এলপিজির চাহিদার বিপরীতে এলপি গ্যাস লিমিটেড ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাত্র ১২ হাজার ৭২৩ টন সরবরাহ দিয়েছে। যদিও খুচরা বাজারে এ এলপিজি দেখা যায় না বললেই চলে। বিপিসির ও কোম্পানিটির একশ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়।

 

সর্বাধিক পঠিত