স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৭ সালে অনুমোদিত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে পরিবর্তন আসছে ফের। এতে বাড়বে প্রকল্প খরচও। কয়েকটি ভিন্নতা আসছে প্রকল্প নকশায়। পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে- ধউর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি বিলুপ্ত করে ওই অংশ দিয়ে চলাচল, কাওলা রেলক্রসিং এলাকায় স্প্যান দীর্ঘকরণ, বাইপাইল মোড়ে ট্রাম্পেট ইন্টারচেঞ্জ ও বিমানবন্দর টার্মিনালে সরাসরি ওঠানামার জন্য দুটি বিশেষ র্যাম্প নির্মাণকাজ।
সেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের প্রয়োজনে এবং নদী পথ, রেলপথ, সড়কপথ ও বিমানবন্দর সংযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পরিবর্তিত প্রকল্প নকশা বাস্তবায়নের ফলে খরচ কয়েকশ’ কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সেতু বিভাগের সচিব ও সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন হচ্ছে। এ নিয়ে এখনো যাচাই-বাছাই চলছে। বেশ কিছু বিষয় নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে। তাই খরচ অবশ্যই বাড়বে। তবে কতো টাকা খরচ বাড়তে পারে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
সূত্র বলছে, নদীগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। তুরাগ নদীতে পরিবর্তন আসছে। সেটার জন্য আগে সেতুর যে উচ্চতা ধরা হয়েছিল সেটি বাড়াতে হচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ তুরাগ নদীর শ্রেণি উন্নীত করেছে। নৌযানের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে তিনটি সেতুর উচ্চতা এবং স্প্যান দৈর্ঘ্য বাড়াচ্ছে। সেতুর উচ্চতা ৭.৬২ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১২.২ মিটার এবং স্প্যান দৈর্ঘ্য ৩০.৪৮ মিটার থেকে ৯০ মিটার করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিমানবন্দর এলাকার আশকোনা রেলওয়ে ক্রসিংয়ে আগে দুই লাইন ছিল, এখন ছয় লাইন করা হচ্ছে। তাই নিরাপত্তা ও সিগন্যালিংয়ের কারণে এখানে স্প্যান বাড়াতে হচ্ছে।
সূত্র আরও বলছে, বাইপাইলে ইন্টারসেকশনে অনেক যানজট হয়। সেটি নিরসনের জন্য সরকারের দুই বিভাগের সচিবরা বৈঠক করেছে। এখানে বিভিন্ন গ্রেডের সেপারেটর করা হবে এবং তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। বাইপাইল মোড়ে একটি আধুনিক গ্রেড সেপারেটেড ট্রাম্পেট (ইন্টারচেঞ্জ) নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে আশুলিয়া-বাইপাইল-নবীনগরগামী একটি র্যাম্প নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এবং শাহজালাল বিমানবন্দরের যাত্রীদের সুবিধার্থে এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে বিমানবন্দর টার্মিনালে সরাসরি ওঠানামার জন্য দুটি বিশেষ র্যাম্প নির্মাণ করার প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবর্তনগুলো আবশ্যিক ছিল তাই কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তবে আলাদাভাবে এখন কতো টাকা খরচ হবে সেই তথ্য দেয়া যাচ্ছে না। আমরা সংশোধিত প্রস্তাব তৈরি করছি, এটা অনুমোদন হলে জানা যাবে, কি পরিমাণ ব্যয় বাড়ছে। ব্যয় বাড়বে সে বিষয়টি নিশ্চিত। যেমন- পল্লী বিদ্যুতের তার রয়েছে, সেগুলো অপসারণে খরচ বাড়বে, ডলারের দাম বেড়েছে, ভ্যাট বেড়েছে।
যানজট কমাতে রাজধানীকে বাইপাস করে গাড়ি চলাচলে তৈরি হচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল ও ইপিজেডের যোগাযোগ সহজ হবে। এই প্রকল্প ২০১৭ সালে অনুমোদন পেলে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। কিন্তু ২০২২ সালে প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। ফলে মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ৪ বছর। মেয়াদ বাড়ানোর এক বছরের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ২০২২ সালের ১লা জুন তা সংশোধনের পর বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা আছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। তবে, প্রকল্প নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে শেষ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সাড়ে সাত বছরে এর কাজ হয়েছে ৫৫ শতাংশ। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির খরচ বেড়েছে প্রায় ৬৫২ কোটি টাকা। উড়াল সড়ক প্রকল্পটির বর্তমান ব্যয় ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। নতুন করে নকশায় পরিবর্তনসমেত আরও বাড়বে খরচ।