বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

আশুলিয়া থানার সামনে ৬ লাশ পোড়ানোর পর কেউ সেগুলো মসজিদের সামনে রেখে আসে


স্টাফ রিপোর্টার : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে ছয়জনের লাশ পোড়ানো হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন ভাঙারি ব্যবসায়ী মতিবর রহমান (বুইদ্দা)। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে পোড়া লাশগুলো রেখে আসে।


গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মতিবর রহমান জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে তিনি এ জবানবন্দি দেন।


জবানবন্দিতে মতিবর রহমান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা দুইটার পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে, তখন ছেলেরা মিছিল বের করে। আশুলিয়া থানার সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় পুলিশ গুলি করে। এরপর গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের লাশগুলো (একজন জীবিত ছিলেন) থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে রেখে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত গুলি চলতে থাকে। পরে সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ গুলি করতে করতে সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে চলে যায়।


সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই জায়গাতেই (আশুলিয়া থানা) ছিলেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান। তিনি বলেন, রাতের বেলা তিনি বাসায় চলে যান। এই লাশগুলো থানার সামনেই পোড়ানো হয় এবং কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে রেখে আসে।


পরদিন ৬ আগস্ট দুপুর ১২টার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আসেন এবং বেলা দুইটার সময় সেনাবাহিনী আসে বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছয়টি লাশ গাড়ি থেকে বের করে পলিথিনে প্যাকেট করি এবং জানাজা পড়ানো হয়।’


এরমধ্যে চারজনের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায় এবং তাঁদের অভিভাবকদের ফোন করা হলে তাঁরা এসে লাশ নিয়ে যান বলে জানান মতিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুটি লাশের অভিভাবকদের পাওয়া যায়নি। সেগুলো আমতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। একদিন পর আবুলের স্ত্রী হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া কোনো লাশ দাফন করেছি কি না, জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি যে হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া একটি লাশ পেয়েছি এবং দাফন করেছি।’


সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেন
এ মামলায় সপ্তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন বাইপাইলের বাঘাবাড়ি বাজারের ফল ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট তাঁরা বাইপাইল থেকে নবীনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অবস্থান করেন। বেলা একটার দিকে তাঁরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোড়েন। সে সময় সাইফুল ইসলাম, তাঁর সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ একত্র হয়ে বাইপাইল এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন। ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র-জনতা নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন তিনি।

আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর বাইরে আরও একজন গুলিতে গুরুতর আহত হন। একজনকে জীবিত ও পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় প্রথমে একটি ভ্যানে তোলা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি গাড়িতে তোলে পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে এই ছয়জনকে (যাঁর মধ্যে একজন জীবিত) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।
এ মামলায় মোট ১৬ জন আসামি। এর মধ্যে আট আসামি গ্রেপ্তার আছেন। মঙ্গলবার তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁরা হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান ও শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। তাঁদের মধ্যে শেখ আবজালুল হক ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন।

 

সর্বাধিক পঠিত