জাবি প্রতিনিধি : নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। দীর্ঘদিনের নীরবতা কাটিয়ে নতুন মুখের আগমনে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে সবুজে ঘেরা এই শিক্ষাঙ্গনে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু হয় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের। এদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, ক্যাফেটেরিয়া, টারজান পয়েন্ট, শহীদ মিনার এলাকা, ছবি চত্বর, মুরাদ চত্বরসহ বিভিন্ন লেকপাড়ে নবীনদের উপস্থিতি চোখে পড়ে।
ছোট ছোট দলে তাঁরা আড্ডা দিচ্ছেন, সিনিয়রদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন এবং ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
বিভাগগুলোয় পৃথকভাবে বিভাগীয় প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস।
এ সময় নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করতে ফুল, ব্যাগ ও কলম উপহার দেয় বিভাগগুলো। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল উপহার দিয়ে স্বাগত জানান শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাসুম মিয়া বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় সাত মাস পরে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে। এত সময় পর হলেও নিজের ক্যাম্পাসে আসতে পেরে ভালো লাগছে। নতুন বন্ধু, বিভাগের শিক্ষক ও সিনিয়ররা সবাই খুব আন্তরিক। আশা করি, সামনের দিনগুলো ভালো যাবে।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজনীন আক্তার তারিন বলেন, ‘শুরুতে একটু জড়তা থাকলেও প্রথম দিন ক্লাস করে অনেক ভালো লাগছে। প্রত্যাশা থেকে আরও বেশি কিছু পেয়েছি। বিভাগের শিক্ষক, সিনিয়রদের আচরণে সত্যিই মুগ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন ভালোভাবে শেষ করতে চাই—এটাই চাওয়া।’
এদিকে প্রথম দিনেই হলে নিজেদের বৈধ সিটে উঠতে পেরেছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তাঁদের বৈধ সিট বুঝিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে হল প্রশাসন ও নবনির্বাচিত হল সংসদের প্রতিনিধিরা।
মাওলানা ভাসানী হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক হৃদয় পোদ্দার বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনেই নতুনদের তাদের সিটে উঠিয়ে দিতে পেরেছি। আমাদের হলে কোনো সিট-সংকট নেই। জাহাঙ্গীরনগর তার পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তকমা, সেটা আবারও ফিরে পাচ্ছে বলে আমি মনে করি।’
এ ছাড়া নবীন শিক্ষার্থীরা যেন র্যাগিংয়ের শিকার না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ রেজাউল রাকিব বলেন, ‘র্যাগিংয়ের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি। প্রতিটি হলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের ইমার্জেন্সি নম্বর দেওয়া আছে। যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে পাবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি জাকসুর প্রতিনিধিরা এখানে কাজ করবে।’
এদিকে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনবার্তা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। অভিনন্দনবার্তায় তিনি বলেন, আবাসিক হলগুলোয় নবাগত সব শিক্ষার্থীর সিটের ব্যবস্থা করতে পারায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনন্দিত। দীর্ঘদিন ধরে গণরুমের যে অপসংস্কৃতি ছিল, তা বিগত শিক্ষাবর্ষ থেকে বর্তমান প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দূর করতে পেরেছে। আবাসিক হলে ও একাডেমিক ভবনগুলোতেও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
উপাচার্য আরও বলেন, দল-মত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হবে সহাবস্থানের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।