ময়মনসিংহ সংবাদদাতা : নিয়ম ভেঙে পদোন্নতি পাওয়ায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩৩ কর্মকর্তাকে আট বছর পর পূর্বের পদে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০১৮ সালে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে এই কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ও এ নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছিল। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এত দিন তাঁরা পদ বহাল রাখতে পারলেও, গত ১১ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁদের পদাবনতি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম মিয়াকে দুই ধাপ নিচে নামিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী করা হয়েছে। একইভাবে নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল হক, জীবন কৃষ্ণ সরকার, জসিম উদ্দিন, শফি কামাল, জিল্লুর রহমানকে এক ধাপ নিচে নামিয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এইচ কে দেবনাথ এবং প্রধান হিসাবরক্ষক অসীম কুমারসহ মোট ৩৩ কর্মকর্তাকে পূর্বের পদে ফিরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে কর্মকর্তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং তাঁদের দপ্তরের নেমপ্লেট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এর ফলে চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ভাটা পড়েছে বলে জানা গেছে। তবে পদ হারানো কর্মকর্তারা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পদ ফিরে পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. শাফি কামাল বলেন, ‘নিয়ম মেনেই আমরা উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়েছিলাম। কিন্তু একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের পদ খর্ব করা হয়েছে, যা আমাদের মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।’ তবে তিনি দাবি করেন, এর কারণে সিটি করপোরেশনের কোনো কাজে স্থবিরতা আসছে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল বলেন, ‘অযোগ্য কর্মকর্তারা রাজনৈতিক প্রভাবে পদ দখল করে রাখায় সিটি করপোরেশনে প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি। উপসহকারী থেকে সহকারী প্রকৌশলী না হয়ে সরাসরি নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়ায় তাঁদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল, যার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে।’
গণসংহতি আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাজীব বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ছিল। আজকে যাদের পদ থেকে সরানো হয়েছে, তারা দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এখন দ্রুত দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে উন্নয়নকাজ দ্রুত করা উচিত।’
এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. মোখতার আহমেদ বলেন, ‘আগের মেয়র এসব কর্মকর্তাকে “চলতি দায়িত্বে” রেখেছিলেন, যা নিয়মের ব্যত্যয়। যেমন—একজন সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী এবং পরে আবার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করা হয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত। নিয়ম অনুযায়ী, চলতি দায়িত্ব ছয় মাসের বেশি হতে পারে না এবং তা দিতে হলে মেয়রের সভাপতিত্বে মিটিং করতে হয়। কিন্তু এখানে সেসব নিয়ম মানা হয়নি। এসব অনিয়মের কারণে তাদের পূর্বের পদে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, যে পদ পাওয়ার কথা, তারা সেই পদেই থাকবেন।’