ধামরাই প্রতিনিধি : ধামরাইয়ে পপুলার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালে প্রসূতিদের সিজার পদ্ধতিতে ডেলিভারি করার পর অনেকে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগটি ছোয়াছে হওয়ায় ওই হাসপাতালের ওটি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। এরপরও সেখানে বিভিন্ন ধরণের অপারেশন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত আট মাসে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে চারশ জন প্রসূতিকে সিজার পদ্ধতির মাধ্যমে ডেলিভারি হয়েছে ওই হাসপাতালে। এতে অনেকের অপারেশন স্থানের স্কিনে ক্ষত রয়েছে। র্দীঘদিনেও তাদের ক্ষত শুকায়নি। তাদের মধ্যে কয়েকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করেন। এতে পরীক্ষায়-নীরিক্ষায় ধরা পড়ে তারা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে চলছে তোলপাড়।
ধামরাইা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ধামরাইয়ের কালামপুর বাজারে অবস্থিত ‘পপুলার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালটি’ দশ শয্যাবিশিষ্ট। সেখানে চলতি বছরের জানুয়ারী-আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে সিজার পদ্ধতির মাধ্যমে ডেলিভারি হয়েছে ৪০১ জন প্রসূতি। এরমধ্যে তাদের অনেকে দীর্ঘদিন উচ্চমাত্রায় এন্টিবায়োটিক ওষধ সেবন করলেও অপারেশনের স্থানের ত্বকে পুঁজ জমতে থাকে। ক্ষতস্থানে দীর্ঘদিন পুঁজ জমে থাকার কারণে এক পর্যায়ে তারা যোগাযোগ করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরে সাতজনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এতে ধরা পড়ে তারা সাতজনেই যক্ষ¥া সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে। বাকীরা এখনো হাসপাতালে যোগাযোগ করেননি। এ ঘটনা পপুলার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালের ওটি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এসব প্রসূতির যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানের নিমিত্তে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা (আইইডিসিআর) প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মঞ্জুর আল মুর্শেদ চৌধুরী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, কালামপুর বাজারে পপুলার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালে গত দুই মাস আগে ১৪-১৮ হাজার টাকা দিয়ে তারা সিজার হয়েছেন। তারা নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ওষধ সেবনও করছেন কিন্তু অপারেশনস্থলে তাদের ঘা শুকায়নি। এ অবস্থায় তারা চিন্তিত।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মঞ্জুর মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক পরীক্ষা নীরিক্ষায় সাতজন প্রসূতি যক্ষা সংক্রমনে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আক্রান্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে উর্ধ¦তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আর পপুলার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের ওটি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, অপারেশনের পর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। যেমন-অপারেশনের সময় ব্যবহৃত টিস্যু বা সরঞ্জাম থেকে সংক্রমণ হতে পারে। অথবা অপারেশন কর্মকান্ডে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে অস্ত্রোপচার করা জায়গায় যক্ষার সংক্রমণ হতে পারে,বিশেষত যদি যন্ত্রপাতিগুলো সঠিকভাবে জীবানুমুক্ত করা না হয়।
এদিকে পপুলার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,্ আমাদের হাসপাতালের ওটির যন্ত্রপাতি অনেক ভালোমানের। এছাড়া তিনি বলেন, সিভিল সার্জনের পরামর্শক্রমে পুরাতন ওটি বন্ধ করে নতুন ওটি খোলা হয়েছে। এখন সেখানে অপারেশন করা হয়।
তবে এ বিষয়ে জানতে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হলো না।