স্টাফ রিপোর্টার : দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশটি ৩৯ হাজার ২৫৫টি কর্মী কোটা বরাদ্দ দিলেও বাংলাদেশ পাঠাতে পেরেছে মাত্র ১৪ হাজার ৮২৯ জন। অর্থাৎ কোটা পূরণ হয়েছে মাত্র ৩৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জন্য ১০,৩০০ কোটা নির্ধারণ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এই ১০,৩০০ কোটা বরাদ্দের বিপরীতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১,২৪৪ জন কর্মী গেছেন। অথচ প্রতিবেশী নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান প্রায় পূর্ণ কোটা পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। এর আগে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারীর কারণে কর্মী নেয়ার হার কম ছিল। তবে এর পরের বছর প্রায় শতভাগ কর্মী পাঠাতে পারলেও গত তিন বছর ধরে দেশটিতে কর্মী যাওয়ার হার ক্রমাগতসুযোগ পেয়েও দক্ষিণ কোরিয়ায় কোটা পূরণে ব্যর্থ বাংলাদেশভাবে কমে আসছে।
এ ব্যাপারে, বোয়েসেলের নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. শওকত আলী বলেন, ‘ভাষা পরীক্ষায় পাস করার পর একটি স্কিল টেস্ট হয়। এ পরীক্ষায় পাস করার পর কোরিয়া যোগ্যদের নাম প্রকাশ করে। ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার এ তালিকা আমরা এইচআরডি কোরিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেই। তারা এটি তালিকাভুক্ত করে সেখানকার শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে তারা দেশটির বিভিন্ন জব সেন্টারে তালিকা পাঠিয়ে দেয়। কোম্পানিগুলো যে দেশের লোক চায় সেই অনুযায়ী একজনের বিপরীতে তিনটি প্রোফাইল পাঠায় তারা। তারপর কোম্পানি কর্মী সিলেক্ট করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি কোরিয়ার হাতে, আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তারাই কর্মীর প্রোফাইল দেখে সিলেক্ট করে।’
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিদেশী কর্মী নিয়োগ করা হয় এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) মাধ্যমে। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, নেপালসহ ১৬টি দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় শ্রম চুক্তির মাধ্যমে সেখানে কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতি বছরই অভিবাসী কর্মী নিয়োগে বিভিন্ন দেশের জন্য কোটা নির্ধারণ করে দেশটি। যার মাধ্যমে বছরে নির্দিষ্টসংখ্যক শ্রমিক কাজের সুযোগ পান। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে প্রথম দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হওয়ার মাধ্যমে বোয়েসেল এককভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প, নির্মাণ এবং কৃষি খাতে কর্মী পাঠানো শুরু করে। ২০০৮ সাল থেকে এ প্রক্রিয়ায় দেশটিতে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে।
দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী গেলেও কোটা পূরণ হচ্ছে না। যে কারণে পর্যাপ্ত জনশক্তি রফতানির সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের নির্ধারিত কোটা পূরণ না হলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রমিক পাঠানো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ঠিকই নির্ধারিত কোটার প্রায় সমপরিমাণ শ্রমিক পাঠাতে পারছে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার ইপিএস ব্যবস্থায় যুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংখ্যা তিন শতাধিকের নিচে। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ নিয়োগকর্তাই মাত্র পাঁচজন কর্মী দিয়ে কার্যক্রম চালায়, আর ৫০ জনের বেশি কর্মী রয়েছে এমন কোম্পানি মাত্র ৫ শতাংশ। ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যেসব বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ভিয়েতনামের শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি পছন্দের ছিলেন। এরপরই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও নেপালের অবস্থান। নিয়োগদাতারা জানিয়েছেন, এসব দেশের কর্মীদের ভাষাগত দক্ষতা তুলনামূলকভাবে বেশি। এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইপিএস সিস্টেমে নিয়োগকর্তাদের পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।