ফুলকি ডেস্ক : সকালে ঘুম ভাঙার পর আপনি দিনটা শুরু করতে চাচ্ছেন; কিন্তু হঠাৎ বুঝতে পারলেন কোমর ব্যথায় নড়াচড়াই কষ্টকর! পরিচিত লাগছে তো?
এ সমস্যাটা এখনকার সময় অনেকেরই জীবনে ঘটে—আর সবচেয়ে হতাশাজনক হলো, রাতভর ঘুমিয়েও বিশ্রামের বদলে ব্যথা নিয়ে উঠতে হচ্ছে। কেন এমন হয়? আর এর সহজ সমাধানই বা কী?
চলুন জেনে নেই, বিশেষজ্ঞদের মতে কোন কোন সাধারণ কারণে সকালে কোমর ব্যথা হতে পারে এবং কীভাবে আপনি সহজ কিছু অভ্যাস বদলেই এই অস্বস্তিকর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
সকালে কোমর ব্যথার ৪টি সাধারণ কারণ
১. ভুল ভঙ্গিতে ঘুমানো
আমরা প্রতিদিনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে কাটাই। ভুল ভঙ্গিতে ঘুমালে পিঠ বা কোমরে চাপ পড়ে, ফলে সকালে ব্যথা হতে পারে। সবচেয়ে ভালো ঘুমের ভঙ্গি হলো পাশ ফিরে হালকা বাঁকা হয়ে ঘুমানো। পেটের ওপর শোয়ার অভ্যাস থাকলে সেটি বদলে ফেলুন — এতে ঘাড় ও পিঠের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে।
২. দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে শোয়া
রাতভর একইভাবে শোয়ার ফলে পেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে। সকালে উঠে নড়াচড়া করার সময় তখন ব্যথা বেশি অনুভূত হয়, যেমনটা হয় অনেকক্ষণ বসে থাকলেও।
৩. গদি বা বালিশ সঠিক না হওয়া
খুব নরম বা পুরোনো গদি কোমরের ব্যথার বড় কারণ হতে পারে। আবার শক্ত গদিও আরামদায়ক নয়। মাঝারি শক্তি ও সাপোর্টিভ গদি এবং উপযুক্ত বালিশ ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো।
৪. কিছু শারীরিক সমস্যা
যেমন স্পাইনাল আর্থ্রাইটিস, সায়াটিকা, ডিস্কজনিত সমস্যা বা ফাইব্রোমায়ালজিয়ার মতো অসুস্থতাও সকালে কোমর ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। গর্ভাবস্থায়ও এই ব্যথা দেখা দেয়, বিশেষ করে ওজন ও ভারসাম্যের পরিবর্তনের কারণে।
কীভাবে সকালকে ব্যথামুক্ত করবেন?
ঘুমের গদিতে খেয়াল রাখুন : ৬-৮ বছর পর গদি বদলানো উচিত। যদি গদি নিচের দিকে দেবে যায় বা শুয়ে অস্বস্তি হয়, তবে দেরি না করে গদি বদলান।
বালিশ ব্যবহার করুন : পাশ ফিরে শোয়ার সময় হাঁটুর মাঝে বালিশ দিন। পিঠের ওপর শুলে হাঁটুর নিচে বালিশ রাখলে কোমরে চাপ কমে।
হালকা স্ট্রেচিং দিন শুরু করুন : ঘুম থেকে উঠেই বিছানায় হালকা স্ট্রেচ করুন। এক পা বুকে এনে কয়েক সেকেন্ড রাখুন, তারপর অন্য পা। এতে পেশি ধীরে ধীরে সচল হবে।
প্রয়োজনে হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন : পেশিতে ব্যথা বা শক্তভাব থাকলে হিটিং প্যাড দিয়ে গরম দিন। এটা রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি আপনার কোমর ব্যথা প্রতিদিন সকালে হয়, আর তা এক-দুই মাসেও কমে না বা দিনে দিনে বেড়ে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক ব্যায়াম, থেরাপি বা ওষুধ এই সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। দেরি করলে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে।
সকালের কোমর ব্যথা খুব সাধারণ হলেও তা সারাদিনের কার্যক্ষমতা ও মন-মেজাজে প্রভাব ফেলে। তবে ঘুমের ভঙ্গি ঠিক করা, গদি ও বালিশ বদলানো এবং হালকা কিছু স্ট্রেচিং—এসব ছোট ছোট অভ্যাসেই ব্যথা অনেকটা কমানো যায়।
সময়মতো সচেতনতা ও যত্ন নিলে ভবিষ্যতের জটিলতা থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।