স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আন্দোলন এবং আলোচনা উভয় প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলবে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। মতবিনিময় শেষে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামায়াত আমির সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিদায় নিয়ে চলে যান।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় আমরা বলেছি, পিআরব্যবস্থা হলে কোনো আসনে একজন প্রার্থীর কেন্দ্র দখল করে জেতার প্রয়োজন হবে না। ফলে টাকার প্রভাব ও কেন্দ্র দখলের প্রবণতা হ্রাস পাবে। এ জন্য আমরা বলেছি, অন্তত একবার পরীক্ষামূলকভাবে হলেও পিআরব্যবস্থায় নির্বাচন আয়োজন করা হোক। যদি কার্যকর না হয়, ভবিষ্যতে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আজকে মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না এবং একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কিভাবে নিশ্চিত করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের জানিয়েছি, ৫৪ বছর পর বাংলাদেশের সামনে পরিবর্তনের বিশেষ সুযোগ এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। আমরা সবাই আন্তরিকভাবে সচেষ্ট যে, দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিটি (এনসিসি) গঠন করেছিল এবং দীর্ঘ আলোচনা শেষে অনেক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যও তৈরি হয়েছে। তবে এখনো কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে, বিশেষ করে সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায়।’
আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) ব্যবস্থা উল্লেখ করে ডা. তাহের বলেন, ‘কমিশনে আলোচনায় অংশ নেওয়া ৩১ দলের মধ্যে ২৬টি দল পিআরব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামপন্থী, দক্ষিণপন্থী ও অধিকাংশ বামপন্থী দলও রয়েছে।
তবে মতভেদ রয়েছে—কিছু দল শুধু আপার হাউসে পিআরব্যবস্থা চাইছে, আবার কিছু দল দুই কক্ষেই তা চায়। জামায়াতে ইসলামী স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা উভয় কক্ষেই পিআরব্যবস্থা চায়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫৪ বছরে প্রচলিত পদ্ধতিতে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভোটকেন্দ্র দখল, জোরপূর্বক এমপি হওয়া এবং অপকৌশল প্রয়োগের প্রবণতা এখনো বিদ্যমান। এ মানসিকতা ভাঙতে হলে পিআরব্যবস্থা চালু করা অত্যন্ত জরুরি।’
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন অপেক্ষাকৃত সুষ্ঠু হলেও সেখানে নানা অনিয়ম দেখা গেছে। ফলাফল প্রকাশে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় গড়িমসি করা হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত ফল উল্টাতে পারেনি, কিন্তু এই প্রবণতা যে রয়ে গেছে তা স্পষ্ট হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে এই মনোভাব আরো বড় আকারে প্রতিফলিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
জামায়াতের নায়েবে আমির জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা মনোযোগ দিয়ে তাদের বক্তব্য শুনেছেন। তারা বলেন, ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই পিআরব্যবস্থা চালু রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি কার্যকর হতে পারে।