স্টাফ রিপোর্টার : প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের রীতি থাকলেও এবার তা এগিয়ে ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। গত বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে এক চিঠিতে এ দাবি জানিয়েছেন তারা। ওই চিঠির কপি সমকালের হাতে এসেছে।
এতে দেখা গেছে, তিনটি সম্ভাব্য সময়ের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। তা হলো- ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি এবং ৫ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি।
সম্ভাব্য সময়সূচির ব্যাখ্যা হিসেবে তারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ওই মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বইমেলার নিরাপত্তায় বাড়তি মনোযোগ দিতে পারবে না। ফলে ফেব্রুয়ারির আগেই মেলা আয়োজনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ একমত হয়েছে।
প্রকাশকরা মনে করছেন, ফেব্রুয়ারির পরে বইমেলার ‘আমেজ’ থাকবে না। তখন আবহাওয়াও মেলার উপযোগী থাকবে না। আবার নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তারও ঠিক নেই।
সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির পরিচালক ও বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক আবুল বাশার ফিরোজ শেখ জানান, আমরা লিখিত আকারে মেলা কর্তৃপক্ষকে আমাদের প্রস্তাব জানিয়েছি। ফেব্রুয়ারির পরে বইমেলা হলে আবহ থাকবে না। তাই ডিসেম্বর বা জানুয়ারিই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
এদিকে বইমেলার মেয়াদ নিয়েও ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছেন বই বিপণনকেন্দ্র ও প্রকাশনা সংস্থা বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাশ। তার মতে, বইমেলা ১৫ দিনের হোক, মাসব্যাপী মেলার প্রয়োজন নেই। পৃথিবীর কোথাও এত দীর্ঘ সময় ধরে বইমেলা হয় না। ১৫ দিনই যথেষ্ট। এতে প্রকাশকদের খরচ কমবে, রাষ্ট্র ও আয়োজকদেরও সাশ্রয় হবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৮৩ সালে সামরিক শাসক এরশাদের আমলে আন্দোলনের কারণে একবার বইমেলা বন্ধ হয়েছিল। এরপর আর এমন ঘটেনি। তবে করোনা মহামারির কারণে ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে মেলার সময় পরিবর্তন করে মার্চ মাসে নেওয়া হয়েছিল।
প্রকাশকদের ভাষ্য, সে সময়কার আয়োজন মান হারিয়েছে, ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে, একই সাথে সেই ধাক্কা থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠা যায়নি এখনও।
চিঠিতে প্রকাশক সমিতি লিখেছে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বইমেলা তার ঐতিহ্য ও বাণিজ্যিক সাফল্য হারাচ্ছে। এতে সৃজনশীল প্রকাশকরা কার্যত পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছেন।
প্রকাশকদের মতে, মার্চে ঈদ থাকায় রাজধানী ঢাকায় পাঠকসমাগম কমে যাবে। এপ্রিল এলে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম শুরু হবে, বইমেলার আবহ হারাবে। তাই ফেব্রুয়ারির পর মেলা আয়োজন অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ফেব্রুয়ারির আগেই মেলা আয়োজনের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা ও মানুষের অংশগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। আবার এপ্রিলের দিকে গেলে ঝড়-বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী ডিসেম্বর-জানুয়ারিই সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত সময়।
তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।