জাবি প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদ নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে মিশ্র ফলাফল দেখা গেছে।
শনিবার রাতে জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময়ই হলগুলোর ফলাফল ঘোষণা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট হলের নির্বাচনি কর্মকর্তারা। কিন্তু সেদিন সেই ফলাফলের আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র সংবাদকর্মীদের সরবরাহ করা হয়নি। রোববার গভীর রাতে ফলাফল সংবাদকর্মীদের সরবরাহ করা হয়।
কয়েকটি হলে সম্পাদকীয় পদে ভোটের হেরফের হওয়ার কারণে তা সংশোধন করে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশে কিছুটা দেরি হয় বলে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য।
প্রায় ৩৩ বছর পর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। ফল ঘোষণা শুরু হয় শনিবার বিকালে; ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর। ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
জাকসুর ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ১৫টিতে বিজয়ী হয়েছেন ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। বাকি চারটি পদের মধ্যে ভিপিসহ তিনটি পদে স্বতন্ত্র এবং একটিতে বাগছাস প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
জাকসুতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ভিপি পদে এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের মো. মাজহারুল ইসলাম জিএস পদে জয় পেয়েছেন। এজিএস দুটি পদও পেয়েছে ছাত্রশিবির।
অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে নির্বাচন চলাকালে ও পরে ছাত্রদল, বামপন্থিসহ অন্তত পাঁচটি প্যানেল ও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি দুজন নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা তিনজন শিক্ষক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
২১টি হলে কোনো সংগঠনই পরিপূর্ণ প্যানেল দিতে পারেনি। জাকসুতে অধিকাংশ পদে জয় পাওয়া ইসলামী ছাত্রশিবির হলগুলোতে নিজেদের নামে কোনো প্যানেল দেয়নি।
তাদের সদস্য ও অনুসারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বা অন্যদের সঙ্গে মিলে হলে নির্বাচন করেছেন। তাদের অনেকে জিতেছেনও।
যেমন শহীদ রফিক-জব্বার হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ভিপি-জিএস পদে যারা জয় পেয়েছেন তাদেরকে শিক্ষার্থীরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনুসারী হিসেবেই চেনেন। কিন্তু তারা স্বাতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছেন।
অপরদিকে ছাত্রদল হলে হলে প্যানেল দিয়েছে। অনেক ছাত্রদল নেতাকর্মী বিদ্রোহী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের কেউ কেউ জিতেছেন।
যেমন শহীদ সালাম বরকত হলে ভিপি-জিএস পদে ছাত্রদলের বিদ্রোহী জয়লাভ করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম হলে এজিএস পদে ছাত্রদলের বিদ্রোহী একজন প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
আবার ২১ নম্বর হলে (সাবেক শেখ রাসেল হল) যিনি ভিপি পদে জয় পেয়েছেন তিনি কোনো সংগঠনের নন।
ক্যাম্পাসের একজন প্রাক্তন ছাত্রনেতা বলছিলেন, হলগুলোতে মিশ্র ফলাফল এসেছে। প্রাকাশিত ফলাফলে মনে হচ্ছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী হিসেবে জয় পেয়েছেন। অপরদিকে কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন–এমন অনেকেও জয় পেয়েছেন।
যেমন নবনির্বাচিত ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু আল বেরুনি হলের আবাসিক ছাত্র। তার হলে ভিপি ও জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। কিন্তু তারা জিতুর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত।
একইভাবে মীর মশাররফ হোসেন হল, আ ফ ম কামাল উদ্দীন হল, সাবেক বঙ্গবন্ধু হলেও জিতু-ঘনিষ্ঠরা জয় পেয়েছেন।
তবে এনসিপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস থেকে কেউ হলে জয় পাননি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সংগঠকদের একটি প্রভাব সবসময় থাকে। জাকসুতে তারা বিশেষ প্রভাব রাখতে না পারলেও হলে হলে বেশকিছু সংগঠক জয় পেয়েছেন।
সাবেক ওই ছাত্রনেতা বলছিলেন, হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভোট দেন মূলত পরিচিত ও মুখ দেখে। ফলে এখানে ছাত্র সংগঠনের তুলনায় কার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, সেটি বিবেচনা করা হয়। তারই প্রতিফলন ঘটেছে এ নির্বাচনে।