সোমবার, 15 সেপ্টেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

শুরু হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী বইমেলা

স্টাফ রিপোর্টার :  রাজধানী ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শনিবার  শুরু হলো আন্তর্জাতিক ইসলামী বইমেলা। এবার মেলায় ১৪০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বিদেশি প্রকাশনাও রয়েছে। থাকছে শিশুচত্বর, মিডিয়া কর্নার, নারীদের আলাদা বসার জায়গা, লিটল ম্যাগাজিন ও লেখক কর্নার এবং ইনফরমেশন সেন্টার।


এটি দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী বইমেলা। মেলায় বিদেশি প্রকাশনা, এক ছাদের নিচে দেশি-বিদেশি মানসম্মত শ্রেষ্ঠ বই, কী ধরনের বই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, পাঠকদের জন্য কী চমক থাকছে, পাঠকরা কী বার্তা পাবেন মেলা থেকে ইত্যাদি বিষয়ে ছয়জন প্রকাশকের মতামত নিয়েছেন রায়হান রাশেদ-


মেলায় বিদেশি প্রকাশকদের অংশগ্রহণ এবারই প্রথম

(আহমদ রফিক, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, সিয়ান পাবলিকেশন)

দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী বইমেলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারকইসলামী বই পাঠ ও গবেষণার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য আছে বাংলাদেশে। তবে রাষ্ট্রীয় পরিসরে তা ধারাবাহিকভাবে বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ খুব বেশি ছিল না, বিশেষত বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে প্রশাসনিক জটিলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও নানা রকম চাপের কারণে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (ইফাবা) মানসম্মত ইসলামী বইমেলা আয়োজন করতে পারেনি; কিন্তু সময় বদলেছে। এখন সেই বাধা অতিক্রম করে ইফা এবার আয়োজন করছে একটি চমৎকার ইসলামী বইমেলা, যাকে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।


প্রথমবারের মতো এবার মেলায় বিদেশি প্রকাশকরা অংশ নিচ্ছেন, এটি আমাদের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তাঁদের সঙ্গে দেশের প্রকাশকদের এবং পাঠকদের মেলবন্ধন সুদৃঢ় হবে।

আগের মেলাগুলোর বিভিন্ন মহলের চক্রান্তে সৃজনশীল ও সত্যিকার প্রকাশকদের ন্যায্যভাবে বইমেলায় সুযোগ দেওয়া হতো না। আন্তর্জাতিক প্রকাশকদের আমন্ত্রণ জানানো বা বৃহৎ আয়োজন করার চিন্তা তো ছিল কল্পনারও বাইরে।

আধ্যাত্মিক জ্ঞানচর্চার সমাবেশস্থল

(আহমেদ রোকনুদ্দিন, প্রকাশক, সন্দীপন প্রকাশন)

দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী বইমেলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারকমানবতার মুক্তির জন্য সঠিক জ্ঞানচর্চার বিকল্প নেই! আমাদের তরুণরা ইসলামকে জানতে চায়, শিখতে ও বুঝতে চায়; কিন্তু অনেক সময় সঠিক উপস্থাপনার অভাবে তারা ইসলামের সুমহান, শাশ্বত বাণী ও আলোকিত জ্ঞানের পথ থেকে অন্ধকারে হারিয়ে যায়।

আমরা চাই মেলার মাধ্যমে ইসলামের প্রতি ও ইসলামিক মূল্যবোধের প্রতি তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ ও আলোকিত করতে। পাঠক-লেখক-প্রকাশকের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মেলবন্ধন রচনা করে ইসলামী প্রকাশনাশিল্পকে আরো গতিশীল ও জনসম্মুখীন করা। আন্তর্জাতিক ইসলামী বইমেলাকে আমরা শুধু বই কেনাবেচার জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই না; বরং এটি হবে একটি সমন্বিত বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানচর্চার সমাবেশস্থল।

দেশি-বিদেশি ইসলামী সাহিত্যের সমাহার

(দেওয়ান মাহমুদুল ইসলাম তুষার, স্বত্বাধিকারী, রাহনুমা প্রকাশনী)

দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী বইমেলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারকবাংলাদেশে ৯০ দশকের শেষভাগে সীমিত আকারে শুরু হওয়া এই বইমেলা এরই মধ্যে দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী বইমেলায় পরিণত হয়েছে।


এবারের মেলায় মিসর, জর্দান, লেবানন, পাকিস্তানসহ বিশ্বের নানা দেশের খ্যাতনামা কিছু প্রকাশক অংশ নিচ্ছেন। ফলে পাঠকরা একসঙ্গে দেশি-বিদেশি ইসলামী সাহিত্য পেতে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে ভবিষ্যতে এই মেলাকে একটা পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বইমেলায় রূপান্তর করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন প্রকাশকরা ও ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। সব কিছু মিলে এবারের ইসলামী বইমেলা পরিণত হচ্ছে জ্ঞানী-গুণীদের আনন্দ আয়োজনে, শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র নয়, বরং এক বৌদ্ধিক উৎসবে। মেলায় দেশি-বিদেশি শ্রেষ্ঠ বইয়ের সমাহার রয়েছে। এখানে পাঠকরা দেশ-বিদেশের সেরা বইগুলো পাবেন।

বৃহত্তম ইসলামী জ্ঞানমেলা

(এস এম আকছারুল হক আনাস, স্বত্বাধিকারী, সমকালীন প্রকাশন)

দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী বইমেলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারকএবারের মেলার পরিসর বহুগুণ বড়। প্রায় দেড় শতাধিক স্টল ও বৈচিত্র্যময় প্রকাশনা একসঙ্গে হাজির হওয়ায় এটি দেশের বৃহত্তম ইসলামী জ্ঞানমেলা হয়ে উঠছে। মেলায় পাঠক ও দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে শিশুচত্বর, মিডিয়া কর্নার, নারীদের আলাদা বসার জায়গা, লিটল ম্যাগাজিন কর্নার, লেখক কর্নার, চা, কফি, ফুড কর্নার ও ইনফরমেশন সেন্টার। এ ছাড়া বিশাল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও অতিথিদের নিয়ে আলোচনা, সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন।

আমরা পাঠক ও সমাজকে এই বার্তা দিতে চাই, ইসলামী জ্ঞানচর্চা জাতীয় উন্নয়ন ও নৈতিক সমাজ বিনির্মাণের মূল ভিত্তি। পাঠকরা এখানে আসবেন, বই দেখবেন, কিনবেন। লেখকদের সংশ্রব পাবেন। বিশুদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে বই পড়ার বিকল্প নেই।


দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী বইমেলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারকএবার মেলার স্টল বায়তুল মোকাররমের পূর্ব গেট থেকে দৈনিক বাংলা মেইন রোড পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এতে পাঠক ও দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে এবং বড় পরিসরে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত বইগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন। আমাদের লক্ষ্য ইসলামী জ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি মিলনমেলার আয়োজন করা, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিক রূপ পাবে। মেলায় পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের জন্য থাকবে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা যেমন—শিশুচত্বর, মিডিয়া কর্নার, নারীদের বসার ব্যবস্থা, লেখক কর্নার, চা-কফি ইত্যাদি। পাশাপাশি মেলার মঞ্চে প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। মেলায় বিশ্বমানের প্রকাশনীগুলোর অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানসম্মত ও গবেষণাধর্মী বইগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে।

এক ছাদে মানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য বই

(রফিকুল ইসলাম, স্বত্বাধিকারী, রুহামা পাবলিকেশন্স)

দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী বইমেলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারকমেলা কমিটি প্রকাশনা নির্বাচনে কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করছে। কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক নির্ভরযোগ্য বই, স্বীকৃত আলেমদের রচনা এবং শিশু-কিশোরদের জন্য সহজবোধ্য অথচ প্রামাণ্য কনটেন্টকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

ইসলামী বইমেলা আজ শুধু একটি মেলার আয়োজন নয়, বরং এটি দমন-নিপীড়নের ইতিহাস পেরিয়ে নতুন মুক্ত বাতাসে জ্ঞানচর্চার সূচনা। দীর্ঘদিনের বাঁধা ও অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে এবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন সেই সুযোগ তৈরি করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, যে সমাজ সত্যিকারের জ্ঞান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন করে, সেই সমাজকে কোনো ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘদিন দমিয়ে রাখতে পারে না। চিন্তায় ও বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চাইলে বই পাঠের বিকল্প নেই। 

 

সর্বাধিক পঠিত