রবিবার, 14 সেপ্টেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

সংবিধান সংশোধনে গণভোট চায় ৮১ শতাংশ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধান সংশোধনে গণভোট চায় ৮১ শতাংশ মানুষ। এর মাধ্যমে তারা সংস্কার প্রক্রিয়ায় নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। আগামী সংসদ নির্বাচনে ৭৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ ব্যালটে ‘না’ ভোট রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। এ ছাড়া ৮৩ শতাংশ মানুষ সংসদের উচ্চ কক্ষের পক্ষে। তারা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চায়।

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) পরিচালিত এক জরিপে এসব মতামত উঠে এসেছে। ঢাকাসহ ১৩ জেলার রাজনৈতিক নেতাকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, নারী, যুবক, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের দেড় হাজার প্রতিনিধির ওপর জরিপটি করা হয়। গত নভেম্বর থেকে আগস্ট পর্যন্ত জরিপের তথ্য সংগ্রহ করে আলোচনা, সংলাপ ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মূল প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।


‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, জনমানুষের ভাবনা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনটি রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল শনিবার প্রকাশ করা হয়। বিইআইর সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। জরিপটির উদ্দেশ্য, জুলাই আন্দোলন, স্বৈরতন্ত্রের পতন, অন্তর্বর্তী সরকার ও সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা জানা।

জরিপের ফল

গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন– এ প্রশ্নে ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছে নির্বাচন, ১৯ শতাংশ চায় সংস্কার কার্যক্রম আর বাকি ৫৭ শতাংশ নির্বাচন ও সংস্কার দুটিই একসঙ্গে চলার পক্ষে। অথচ জরিপের শুরুতে গত নভেম্বরে ৫৯ শতাংশ মানুষ সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছিল। তখন নির্বাচনের কথা বলেছে মাত্র ১২ শতাংশ উত্তরদাতা। ওই সময় ২৯ শতাংশ মানুষ দুটিই একসঙ্গে চলার পক্ষে মত দেয়। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা গণভোটের কথা বলেছে। সংসদের উচ্চ কক্ষের পক্ষে ৮৩ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছে। তারা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চায়।  ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করে এক ব্যক্তি একসঙ্গে এক পদের বেশি থাকতে পাররে না।

রাজনৈতিক সংস্কার প্রশ্নে ৯৬ শতাংশই  উত্তরদাতা দলের ভেতর গণতন্ত্রের পক্ষে মত দিয়েছে। ৯৪ শতাংশ দলের ভেতর জবাবদিহির কথা বলেছে। ৭৬ শতাংশ মানুষ মনে করে দলের কাঠামোয় নারী, যুব, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ প্রয়োজন। অন্যদিকে ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতা সংসদ সদস্যদের পদক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত  স্থানীয় সরকারের পক্ষে মত দিয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা দলনিরপেক্ষ স্থানীয় সরকারের কথা বলেছে। ৮৩ শতাংশ মনে করে স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা ও ক্ষমতা বাড়ানো দরকার।

বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের চাহিদা ও সমস্যাগুলোর প্রতি কতটা মনোযোগ দিচ্ছে– এ প্রশ্নে মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ মনে করেন দলগুলো যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছে। বাকি ৮৮ শতাংশ ভিন্ন মত দিয়েছেন। ৩৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের চাহিদা এবং সমস্যার দিকে একদমই মনোযোগ দিচ্ছে না। কিছুটা মনোযোগ দিচ্ছে বলে ৫৪ শতাংশ মানুষের মত।

অন্তর্বর্তী সরকার গণ-আকাঙ্ক্ষা কতটুকু পূরণ করতে পারছে– এ প্রশ্নে ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ মাঝামাঝি বলে মত দেন। ২১ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন প্রত্যাশার চেয়ে কম, ১৭ দশমিক ২ শতাংশের মতে অনেক কম, ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন বেশি ও অনেক বেশি মনে করেন ২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ।

জরিপে জনগণের প্রত্যাশার চিত্রও তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, জুলাই আন্দোলনে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার, বৈষম্যবিরোধী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা নিয়ে হতাশা রয়েছে। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ও সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন চান।

শুধু একটা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব নয়: আলী রীয়াজ

আলোচনায় ড. আলী রীয়াজ বলেন, শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব নয়। কেউ জিতল, কেউ হারল তাতেই গণতন্ত্র হয় না। সেটা সম্ভব হলে দেশের প্রথম তিনটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, এ দেশে কোনো বিরোধী দল নেই। শেখ হাসিনাও সেই অবস্থান নেন। এ কারণে দিনের ভোট রাতে, ডামি প্রার্থীর মতো নির্বাচন দেখতে হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্বৈরাচারের ফেরা ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা প্রয়োজন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে গণতন্ত্রের চর্চা আবারও আগের জায়গায় ফেরত যাবে, যা কাম্য নয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখে জনবান্ধব রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, বিইআই পরিচালিত জরিপ বলছে, ৯০ শতাংশ মানুষ নির্বাচনে ‘না’ ভোট দিতে চায়, এর অর্থ তারা প্রচলিত রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করতে চায়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে সহজ সমাধান। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে বিভাজন বাড়ছে। এর মধ্যে নির্বাচন না হলে রাজপথে নৈরাজ্য বাড়তে পারে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, জাতি একটা যুগসন্ধিক্ষণে আছে। জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, এনডিএম মহাসচিব মমিনুল আমিন প্রমুখ। 

 

সর্বাধিক পঠিত