শনিবার, 13 সেপ্টেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

জাকসুর নতুন ভিপি ‘স্বতন্ত্র’ জিতু, শিবিরের মাজহারুল জিএস


জাবি প্রতিনিধি : তেত্রিশ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ভিপি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাজহারুল ইসলাম জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন।


শনিবার সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণের দুইদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান। 
প্রথমে ঘোষণা করা হয় হল সংসদে নির্বাচিতদের নাম। পরে কেন্দ্রীয় সংসদে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করা হয়।  
নির্বাচনে ভিপি হওয়া আবদুর রশীদ জিতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। আর জিএস মাজহারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক।  


জাকসুতে অধিকাংশ পদে জয়ের মধ্যদিয়ে ডাকসুর পর আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিল ইসলামী ছাত্রশিবির, যারা এর আগে কখনো জাকসুতে কোনো পদ পায়নি।


ডাকসু নির্বাচনের দুই দিনের মাথায় ঢাকার খুব কাছে সাভারের এই ক্যাম্পাসের ভোটগ্রহণ নিয়ে সারাদেশের মানুষের আগ্রহ ছিল।
জাকসুর ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, আব্দুর রশিদ জিতু ৩৩৩৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ছাত্রশিবিরের আরিফুল্লাহ আদিব ২৩৮৯ ভোট পেয়েছেন।


অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম ৩৯৩০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাসের প্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম পেয়েছেন ১২৩৮ ভোট।


যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের (এজিএস) দুটি পদেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান ২৩৫৮ ভোট এবং আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ৩৪০২ জয় পেয়েছেন।


১৯টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ১৫টি জিতেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। বাকি চারটি পদের মধ্যে ভিপিসহ তিনটি পদে স্বতন্ত্র এবং একটিতে বাগছাস প্রার্থী জয় পেয়েছেন।


কার্যকরী সদস্যের ছয় পদের পাঁচটি জিতেছেন শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা, একটিতে বাগছাসের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
সবমিলিয়ে ২৫টি পদের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবির ২০টি, স্বতন্ত্ররা তিনটি এবং বাগছাস দুটি পদে জয় পেয়েছে।


অন্যান্য পদে যারা জয় পেয়েছেন
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক-আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল), ২৪২৮ ভোট
পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক-মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল), ২৮১১ ভোট
সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক-মো. জাহিদুল ইসলাম বাপ্পী (শিবির প্যানেল), ১৯০৭ ভোট
সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র), ২০১৮ ভোট
সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক- মো. রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল), ১৯৮৬ ভোট
নাট্য সম্পাদক- মো. রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), ১৯২৯ ভোট
ক্রীড়া সম্পাদক- মাহমুদুল হাসান কিরণ (স্বতন্ত্র), ৫৭৭৮ ভোট
সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী)- ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল), ১৯৭৬ ভোট
সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ)- মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল), ২১০৫ ভোট
তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক- মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল), ২৪৩৬ ভোট
সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক-আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস), ১৬৯০ ভোট
সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী)-নিগার সুলতানা (শিবির প্যানেল), ২৯৬৬ ভোট
সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ)-মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল), ২৪৪২ ভোট
স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক-হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল), ২৬৫৩ ভোট
পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক-মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল), ২৫৫৯ ভোট।


কার্যকরী সদস্য
মো. তরিকুল ইসলাম (পুরুষ, শিবির প্যানেল), ১৭৪৬ ভোট
মো. আবু তালহা (পুরুষ, শিবির প্যানেল), ১৮৫৪ ভোট
মোহাম্মদ আলী চিশতি (পুরুষ, বাগছাস), ২৪১৪ ভোট
নাবিলা বিনতে হারুণ (নারী, শিবির প্যানেল), ২৭৫০ ভোট
ফাবলিহা জাহান নাজিয়া (নারী, শিবির প্যানেল), ২৪৭৫ ভোট
নুসরাত জাহান ইমা (নারী, শিবির প্যানেল), ৩০১৪ ভোট।


জাকসুর ফলাফল ঘোষণার আগে ২১টি হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।


প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার দিনভর ভোট শেষে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পড়ে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ভোট গণনা শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে। এই দীর্ঘ সময় পর ফলাফলের ঘোষণা এল।


ভোটগ্রহণে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার অভিযোগের পর অধিকাংশ প্যানেলের বর্জন, দীর্ঘ সময় ধরে ভোটগণনার কাজের মধ্যে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষকের মৃত্যুর মত ঘটনা লেখা থাকবে এ নির্বাচনের আমলনামায়।


তবে মূল বিপত্তি ঘটেছে অভিযোগ থেকে মুখ রক্ষার জন্য ওএমআর মেশিনের বদলে হাতে ভোট গুনতে গিয়ে।
জামায়াত সংশ্লিষ্ট এক কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন কেনার অভিযোগ উঠলে নির্বাচন কমিশন ভোট গণনার কাজটি মেশিনের বদলে হাতে করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তা করতে গিয়েই লেজেগোবরে দশা হয়।


১৯৭২ সালে শুরু হওয়া জাকসু নির্বাচনের এবারের দশম আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ছিল শুরু থেকে। ছাত্র সংগঠনগুলোও ভোটের দাবিতে সোচ্চার ছিল।


২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন পরিস্থিতিতে কয়েক দফা পেছানোর পর জাকসু নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয় ১১ সেপ্টেম্বর। ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাগছাস, বাম-প্রগতিশীল, স্বতন্ত্রদের অন্তত সাতটি প্যানেলসহ অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
গত বৃহস্পতিবার জাকসুর ভোটগ্রহণ করা হয়। ২১টি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ শেষে ব্যালট বাক্স নেওয়া হয় সিনেট হলে। সেখানে প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে ভোট গণনা চলে।


জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। ভোট পড়ে প্রায় ৬৮ শতাংশ। জাকসুর ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭৭ জন প্রার্থী।
কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ১৭৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আটজন এবং যুগ্ম সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। নারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ছয়।


ভোটগ্রহণ শুরুর পর কারচুপির অভিযোগ তুলে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলসহ পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে। বর্জনকারীদের মধ্যে রয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ এবং স্বতন্ত্রদের ‘অঙ্গীকার পরিষদ’।


এ ছাড়া ছাত্র ফ্রন্টের একটি বিভাজিত অংশ এবং কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ভোটগ্রহণ বর্জনের ঘোষণা দেয়।

 

 

সর্বাধিক পঠিত