শনিবার, 13 সেপ্টেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

রাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকলে বাস্তুতন্ত্র নিরাপদ থাকবে: তারেক রহমান

স্টাফ রিপোর্টার : রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গণতন্ত্র এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে বাস্তবিকভাবেই বাস্তুতন্ত্র নিরাপদ থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘প্রাণী ও প্রাণের মিলন মেলা’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, প্রাণীর নিরাপত্তা, অধিকার রক্ষা, মানব সভ্যতার উৎকর্ষতা এবং বিকাশের পর্যায় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রাণীর নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষার বিষয়টি নির্ণয়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি মনে করি, প্রাণী অধিকারের যে বিষয়টি, শুধুমাত্র প্রাণীদের প্রতি মানবিক দায়িত্বই নয় বরং জীব বৈচিত্রের সংরক্ষণ বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা, মানবজাতির নিজেদের সুস্থ এবং টেকশই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাও কিন্তু অত্যাবশ্যক। আমাদের বোধহয় এটাও জেনে রাখা প্রয়োজন, নানা ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা কিংবা দৃশ্যত ব্যর্থতা থাকলেও সকল শুভ উদ্যোগকে আমাদের প্রতিদিনের চর্চায় এবং আলোচনায় রাখা দরকার। আমি মনে করি ব্যক্তিগতভাবে, গণতন্ত্রের সঙ্গে মানুষের অধিকারের সম্পর্কটা যেমন, বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে পশুপাখি এবং বন্য প্রাণীর অধিকারের সম্পর্কটা তেমন। সুতরাং রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গণতন্ত্র এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে বাস্তবিকভাবেই বাস্তুতন্ত্র নিরাপদ থাকে।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র মানবিক কিংবা সামাজিক কারণেই নয়, সৃষ্টিকূলে পশুপাখি, প্রাণীর কথা সকল আমাদের সকল ধর্মেই, শুধু ইসলাম ধর্ম নয়, ইসলাম ধর্ম ছাড়াও অন্যান্য সকল ধর্মেই কিন্তু ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। প্রাণীজগতকে প্রকৃতি এবং পৃথিবীর সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে কিন্তু চিহ্নিত করা হয়েছে। সেটি ধর্মের অবস্থান থেকেও করা হয়েছে। বিভিন্ন মনীষেও বিভিন্ন সময়ে সেটি তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।


পশুপাখি কিংবা বন্যপ্রাণী অর্থাৎ সৃষ্টি জগতের প্রতিটি সৃষ্টি একে অপরের জন্য উপকারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, জগতের সৃষ্টি একটার জন্য একটা অপরের উপকারী। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে কিন্তু এডিস যে মশাবাহিত যে ডেঙ্গি ডেঙ্গু জ্বর, এটা কিন্তু বেশ মারাত্মক রূপ নিয়েছে কখনো কখনো। প্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে আপনারা যারা কাজ করছেন, আপনাদের প্রত্যেকেরই ধারণা আছে, ব্যাঙ কিন্তু এই এডিস মশার লার্ভাটা খেয়ে থাকে, মশার বিস্তারটা রোধ করতে সাহায্য করে ন্যাচারাল উপায়, প্রাকৃতিক উপায়ে। সুতরাং এই বিষাক্ত মশার বিস্তার রোধের জন্য বিশেষ করে শহরে-নগরে ব্যাঙের জন্য নিরাপদ আবাস আমরা এখানে ফড়িং, জোনাকি পোকা, প্রজাপতির বিভিন্ন বিষয় কেন প্রয়োজন, মৌমাছির কেন প্রয়োজন, আমি যেটি বলছি, এটা অনেকেরই আপনাদের কমবেশি ধারণা আছে যে- ব্যাঙের জন্য নিরাপদ যে আবাস অর্থাৎ জলাশয় থাকা প্রয়োজন। ঠিক একইভাবে ফড়িং বা জোনাকির প্রয়োজন।

তিনি বলেন, মানব সমাজের নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রত্যেকটা প্রাণীর নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি আমাদের। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন গণতন্ত্রের চর্চা বা সুরক্ষার প্রয়োজন, ঠিক একইভাবে প্রাণীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা প্রয়োজন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ এন্ড ন্যাচারাল রিসোর্স অর্থাৎ আন্তর্জাতিক প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের একটি সংস্থা আছে। যে প্রায় এক দশক আগে তাদের যে রিপোর্ট আছে, সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে- এই দেশে ১৬০০-এর বেশি প্রজাতি প্রাণী রয়েছে। এই ১৬০০-এর ভিতরে প্রায় ৩৯০টি প্রজাতি কিন্তু বিলুপ্তির মুখে চলে গিয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের আরও অনেক দেশেই কিন্তু মানুষের সৃষ্টি পরিস্থিতির কারণে অনেক প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গর্ব যেটা, আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বাঘও এখন মনে হয় বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। আমার যতটুকু মনে আছে, যতটুকু দেখেছি, আমি ধারণা আছে- ৮০’র দশকে বাংলাদেশে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল খুব সম্ভবত ৪০০-এরও বেশি। প্রায় ৫০০-এর কাছাকাছি। সর্বশেষ যে জরিপটা হয়েছে, সেই জরিপে যতটুকু আমার ধারণা আছে, সেই বাঘের সংখ্যা কমতে কমতে এখন ১০০’র কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। হাতির সংখ্যাও এখন কমে ২০০-এর নিচে চলে এসেছে। ঠিক এভাবে বাংলাদেশের আরও অনেক প্রাণী কিন্তু ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে এই বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।

তারেক রহমান বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নদী, জলভূমি ভরাট, বন উজারসহ নানা কারণে একদিকে জীব-বৈচিত্র যেরকম হুমকির মুখে পড়ছে, ঠিক একইভাবে বন্য প্রাণী পাচারের ঘটনাও কিন্তু বেশ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আর এ সকল কারণেই বন্য প্রাণী, জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের যে আবাসস্থল, এগুলেও অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, খুব সম্ভবত প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, জীব বৈচিত্র রক্ষা আইন, পরিবেশ উন্নয়ন আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের অনেকগুলো আইন রয়েছে। জনগণের রায় বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পশুপাখি, বন্যপ্রাণী তথা বাস্তুতন্ত্রের নিরাপত্তার জন্য- এই আইনগুলোকে আমরা ইনশআল্লাহ সময় উপযোগী করব। এই আইনের অনেকগুলোর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন প্রয়োজন আছে। 

তারেক রহমান বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার হারানোর কারণে আমাদের অনেকের মনে হয়তো এক ধরনের অসহিষ্ণতার জন্ম নিয়েছে। এই অসহিষ্ণুতা কাটিয়ে একজন মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার জন্য, মনুষ্যত্ব অর্জন আর পশুত্ব বর্জনই হোক আমাদের অঙ্গীকার। মানুষ হিসেবে আমরা রাষ্ট্র এবং সমাজে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে অন্য সকল প্রাণীর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারেও আমরা আরো সতর্ক থাকব।

প্রদর্শনীতে আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক আদনান আজাদের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনি, আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য মুস্তাকিম বিল্লাহ ও লোভা আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন তুহিন, বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উদ্যোক্তা আতিকুর রহমান রুমন, বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

সর্বাধিক পঠিত