ফুলকি ডেস্ক : নেপালে জেনারেশন জেড আন্দোলনের সহিংসতায় কয়েক শ’ কোটি রুপির সম্পত্তি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নেপাল ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (এনআইএ) জানিয়েছে, বীমা দাবির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন রুপি ছাড়াতে পারে। অন্যদিকে হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপাল জানিয়েছে, জেনারেশন জেড আন্দোলনের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় দুই ডজন হোটেল, যার ক্ষতির অংক প্রাথমিক হিসাবে ২৫ বিলিয়ন রুপি ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জেনারেশন জেড আন্দোলনের সহিংসতা নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ আর্থিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
এনআইএ জানিয়েছে, প্রাথমিক হিসাবে সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি ২০১৫ সালের ভূমিকম্প–পরবর্তী বীমা দাবিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এনআইএ–এর সভাপতি চাঙ্কি ছেত্রী স্থানীয় গণমাধ্যম রিপাবলিকাকে বলেন, এবার ক্ষতির অঙ্ক হয়তো সেই রেকর্ডকেও অতিক্রম করবে। করপোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক খাতসহ ব্যবসায়ীদের বাসভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির তালিকায় রয়েছে হিলটন হোটেল, ভাটভাটেনি সুপারমার্কেট, এনসেল, সিজি ইলেকট্রনিকস, গ্লোবাল কলেজ, উলেন্স স্কুল ও সেন্ট্রাল বিজনেস পার্ক।
ভাটভাটেনি সুপারমার্কেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পনু দত্ত পাওডেল জানিয়েছেন, তাংল, মহারাজগঞ্জ, চিতওয়ান, চুচ্ছেপাটি ও কোঠেশ্বরের আউটলেটগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কোম্পানিটি এখনও আর্থিক ক্ষতির হিসাব করছে।
এ ছাড়া নেপাল শিল্প ও বাণিজ্য মহাসংঘের সভাপতি চন্দ্র প্রসাদ ধাকালের মালিকানাধীন চন্দ্রাগিরি ও মৌলাকালিকা কেবল কার প্রকল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সাবেক সভাপতি শেখর গোলছার বাসভবনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
ব্যাংক খাতও রক্ষা পায়নি। নেপাল ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, অন্তত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা আক্রান্ত হয়েছে—রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ব্যাংক নিউ বানেশ্বর, হিমালয়ান ব্যাংক বাটিসপুতালি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক চিতওয়ান ও মোরাং এবং গ্লোবাল আইএমই ব্যাংক থাপাথলি। এছাড়া একাধিক এক্সটেনশন কাউন্টার ভাঙচুর করা হয়েছে।
এনবিএ সভাপতি সন্তোষ কৈরালা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেপাল রাষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশজুড়ে ক্ষতির হিসাব সংগ্রহ করা হচ্ছে। নেপালের অ-জীবন বীমা কোম্পানিগুলো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০দশমিক ৩৪ বিলিয়ন রুপি প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ২০ দশমিক ৭১ বিলিয়ন রুপি দাবি পরিশোধ করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রিমিয়াম বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন রুপি, দাবি কমে আসে ১৭ দশমিক ৯০ বিলিয়নে। কিন্তু চলমান সহিংসতা এ চিত্র মুহূর্তেই পাল্টে দিয়েছে। বীমা খাত বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন কারণ “সাবোটাজ ও টেরোরিজম” কভারেজের প্রিমিয়াম তুলনামূলকভাবে কম, ফলে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতির বিপরীতে বীমা দাবির চাপ মোকাবিলা করা কঠিন হবে।
হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপাল (এইচএএন) জানিয়েছে, রাজধানী কাঠমান্ডুসহ পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া, ঝাপা, বিরাটনগর, ধনগড়ি, মহোত্তরী ও দাং–তুলসিপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিচিত দেশী–বিদেশী ব্র্যান্ড হোটেলে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
এইচএএন–এর হিসাবে, শুধু কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেলেই ক্ষতি হয়েছে ৮ বিলিয়ন রুপির বেশি। সারা দেশে মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়নেরও বেশি। সংগঠনটি জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হোটেলগুলোর অনেকগুলোই মেরামত ও পুনর্গঠন ছাড়া আবার চালু করা সম্ভব হবে না। ফলে ২,০০০–এরও বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়েছে।
এক বিবৃতিতে এইচএএন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, আর্থিক ক্ষতির কারণে হোটেলগুলো ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়বদ্ধতা পূরণে ব্যর্থ হতে পারে। তাই তারা ধ্বংসযজ্ঞ তদন্তে একটি ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে।
এইচএএন আরও বলেছে, সরকারের উচিত দ্রুত একটি অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা, যাতে হোটেলগুলোর মেরামত ও পুনর্গঠন সম্ভব হয়। সংগঠনটির মতে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখা এবং পর্যটন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এই পদক্ষেপ অপরিহার্য। তারা সতর্ক করে দিয়েছে, সময়মতো সহায়তা না এলে নেপালের পর্যটন খাত ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।