বয়স অনুপাতে আপনার শরীরের হাড় মজবুত রাখা উচিত। কারণ আমাদের শরীরের কাঠামো বা স্টাকচার ভিন্ন ভিন্ন বয়সে হাড়ের পুষ্টির চাহিদা একরকম নয়। সে জন্য হাড় মজবুত রাখতে নিয়মিত ওজন বহন করার ব্যায়াম যেমন হাঁটা কিংবা জগিং করা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডিসমৃদ্ধ খাবার দুধ, সবুজ শাকসবজি, মাছ খাওয়া উচিত।
এটি মূলত বয়স অনুপাতে খাওয়া উচিত। তাই শরীরের ওজন একটি স্বাস্থ্যকর মাত্রায় বজায় রাখুন। আর বাড়ন্ত বয়সের সঠিক পুষ্টি আর প্রাপ্তবয়স্কদের হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে শরীরের চাহিদাগুলো বুঝে খাওয়া উচিত।
আর এ কাজটি শুরু করতে হবে ছোটবেলা থেকেই। নিয়মিত দুধ, ডিম, মাছ ও শাকসবজি খেলে হাড়ের ভিত শক্ত হবে। বয়স বাড়লে সচেতন খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম আর প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সাপ্লিমেন্ট—এসবই হাড়কে দীর্ঘস্থায়ী মজবুত রাখবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, বয়স অনুপাতে হাড় মজবুত ও সুস্থ রাখতে কী খাবেন–
৬ মাস থেকে ২০ বছর: শিশুকিশোর
জন্মের ছয় মাস থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত হাড়ের গঠন বৃদ্ধি করে। এ সময় হাড় দ্রুত বৃদ্ধি হয়। সাধারণত ২০ বছর বয়সের মধ্যে হাড় তার সর্বোচ্চ ঘনত্বে পৌঁছায়। একে বলে ‘পিক বোন মাস’। এ সময় যথেষ্ট ক্যালসিয়াম, ভিটামিন–ডি ও সুষম খাবার খাওয়া উচিত। তা খেলে বাকি জীবন হাড় শক্ত থাকে। এ সময় নিয়মিত খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ বা লাফঝাঁপও হাড়ের জন্য ভীষণ উপকারী।
এ সময় সন্তানের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত— দুধ, দই, পনির, ডিম, ছোট মাছ, পালংশাক, কচুশাক, ভিটামিন ডি'যুক্ত খাবার।
২১–৩০ বছর: তরুণ বয়স
২১ থেকে ৩০ বছর বয়স সময় থেকে নিয়মিত ব্যায়াম ও ভালো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ বয়সে হাড় সবচেয়ে মজবুত হয়। আর ভবিষ্যতেও ঝুঁকি কমে যায়।
এ সময় যেসব খাবার খাওয়া দরকার— প্রতিদিন দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে। বাদাম, তিল ও ডাল, সামুদ্রিক মাছ, ফলমূল খাওয়া উচিত। বিশেষ করে ভিটামিন-সি'যুক্ত ফল।
৩১–৫০ বছর: মধ্য বয়স
৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সে আপনার খাদ্যতালিকায় বদল আনতে হবে। কারণ ৩০ পার হওয়ার পর থেকে আপনার হাড় ধীরে ধীরে পাতলা হতে শুরু করে। তাই এ সময়ে ধূমপান আর মদপান এড়িয়ে চলা উচিত। আর পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন–ডি গ্রহণ করা উচিত।
এ ছাড়া নিয়মিত হাঁটা কিংবা ওজন তোলার মতো ব্যায়াম করা খুব দরকার। সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন রাখুন— ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ দুগ্ধজাত খাবার। সয়াবিন, তিল, ডিমের কুসুম ও সামুদ্রিক মাছ, ডাল, মাছ, মুরগি।
৫০ থেকে ৬৫: প্রবীণ বয়স
এ বয়সে নারীর শরীরে হঠাৎ অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। কারণ ৫০ পার হলে নারীর ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। একে মেনোপজ বলে। আর মেনোপজের পর হাড় দ্রুত দুর্বল হতে থাকে। আবার পুরুষেরও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একই ঝুঁকি তৈরি হয়।
এ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত বোন ডেনসিটি টেস্ট করানো উচিত। সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত— ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বা ফোর্টিফায়েড খাবার। বাইরে বের হওয়া না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন–ডি সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত খাওয়া উচিত। আর ওমেগা–৩ সমৃদ্ধ মাছ বা সামুদ্রিক মাছ, বেশি করে শাকসবজি ও ফল খাওয়া উচিত।
৬৫ বছরের পর: বার্ধক্য
এ বয়সে হাড় ভাঙার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। সে কারণে ব্যায়ামের পাশাপাশি ভারসাম্য রক্ষার অনুশীলন করা উচিত। বাড়িতে হোঁচট খাওয়ার মতো ঝুঁকি কমানো জরুরি। ৬৫ বছরের বেশি নারীর জন্য বোন ডেনসিটির খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঝুঁকি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ বা বিশেষ চিকিৎসা নিতে হবে। এ সময় লক্ষ্য থাকে ভাঙন প্রতিরোধে।
সে কারণে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত— হালকা প্রোটিন, যেমন ডিম, ডাল, মুরগি, দুধ, দই বা ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট। আর ভিটামিন–ডিসমৃদ্ধ খাবার ও সাপ্লিমেন্ট, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।