স্টাফ রিপোর্টার : সাভারের হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড, কাঁচাবাজার, পরিবহন স্ট্যান্ড ও ফুটপাত থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন মশা ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে, নিজের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে কোনো জায়গায় সরাসরি, আবার কোথাও সন্ত্রাসী পাঠিয়ে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। এসব অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে মোশারফ হোসেন মশাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ বিএনপি থেকে বহিষ্কার করেছে দলটি।
মঙ্গলবার ৮ জুলাই বিএনপির মিডিয়া সেলে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে দলের সহ-দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “দলের আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মোশারফ হোসেন মশাকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বহিষ্কৃত মোশারফের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একাধিক চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সহিংসতার মামলা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের গডফাদার আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরল আলম রাজীবের ব্যবসা এবং সম্পদ দেখাশুনা করছে এই মোশারফ হোসেন মশা। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের পরিচয় ত্যাগ করে বিএনপির ওয়ার্ড স্তরের পদ নিয়ে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন মশা ও তার ভাইয়েরা। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, মশা বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয় মশা এখন অপরাধ জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
এলাকাজুড়ে গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা, কাঁচাবাজার, পরিবহন স্ট্যান্ড, এমনকি ময়লা ব্যবস্থাপনাও বাদ যায়নি তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে।
সাভারের হেমায়েতপুর, যাদুরচর, জয়ানাবাড়ি, হরিণধরা, তেঁতুলঝোড়া এলাকাজুড়ে চলমান এই দখলবাজি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে স্থানীয়রা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এক ডিশ ব্যবসায়ী বলেন, “আমার কাছ থেকে মোশারফ ৫ লাখ টাকা নিয়েছে এবং আমার ডিশ ব্যবসা দখলের চেষ্টা করছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন পাঁচ লাখ টাকার মতো চাঁদা উঠছে ফুটপাত ও বাজার থেকে। কাঁচাবাজার থেকে প্রতিদিন গড়ে তিনশত টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয় প্রতিটি দোকান থেকে। হেমায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মার্কেটের একাধিক দোকানদার জানান, টাকা না দেওয়ায় কয়েকজনকে দোকান ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
চাঁদাবাজিতে বাধা দিলে বেপরোয়া হামলার অভিযোগও রয়েছে। সেন্টমার্টিন পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আরিফ বলেন, “৫ তারিখে মোশারফ বাহিনী এক অসহায় পরিবারের মালপত্র লুট করতে গেলে আমি বাধা দিই। তখন তারা হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আমার হাতের তিন জায়গা ভেঙে দেয়।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন বলেন, “ভাবছিলাম ক্ষমতার পরিবর্তনে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে। কিন্তু মোশারফ ও তার ভাইয়েরা বিএনপির নাম ব্যবহার করে নতুন করে ত্রাস কায়েম করেছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে বিএনপির পরিণতি আওয়ামী লীগের চেয়েও খারাপ হবে।”
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সকল স্কুল পরিচালনা কমিটি বিলুপ্তির নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে হেমায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়েছেন মোশারফের ভাই শরীফুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের জায়গায় নির্মিত শতাধিক দোকান থেকে প্রতিদিন ২শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে শরিফুলের লোকজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুবকর সরকার বলেন, “নতুন পরিপত্র অনুযায়ী ইউএনও পদাধিকারবলে সভাপতি। রাজনৈতিক পরিচয়ে কোনো ব্যক্তি কমিটির সভাপতি হতে পারে না।”
স্থানীয়দের দাবি, মোশারফ হোসেন মশা ও তার ভাইদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটিয়ে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।