বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

মেধা পাচার বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে

স্টাফ রিপোর্টার : দেশ থেকে মেধা পাচার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত দুই দশকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া শিক্ষার্থী বেড়েছে তিন গুণ। প্রতি বছর গড়ে অর্ধ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছে। তাদের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অন্তত ৫৭টি দেশ। কেউ যান পিএইচডি ডিগ্রি করতে। আবার কেউ মাস্টার্স বা অনার্স ডিগ্রি নিতে।

বিদেশে যাওয়া এসব শিক্ষার্থীদের পেছনে বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। শিক্ষাগ্রহণ শেষে উন্নত কর্মসংস্থান এবং নিরাপদ জীবন যাপনের আশায় সংশ্লিষ্ট দেশে চাকরি নিয়ে স্থায়ী আবাস গড়েন প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী। এর মাধ্যমে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তৈরি করা মেধাবীর সেবায় উন্নত হচ্ছে অন্য দেশ। বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলেন, অনেকটা নীরবেই মেধা পাচারের বিপ্লব ঘটে গেলেও সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই! এই প্রবণতা দেশের মানবসম্পদের বিকাশে এক বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং জাতীয় উন্নয়নকে পিছিয়ে দিচ্ছে।


এদিকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়ে দেশে ফেরেননি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১ শিক্ষক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতি ব্যাচের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদেশ গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য ভিড় করছেন। ফরেন এডুকেশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ফ্যাড-ক্যাব) কর্মকর্তা এবং শিক্ষাবিদরা বলেন, মেধা পাচারের নেপথ্যে রয়েছে, মেধাবী হয়েও এক জন তরুণ এদেশে তার মেধার মূল্যায়ন পান না। অথচ তার চেয়ে কম যোগ্যতার কেউ একজন রাজনৈতিক চেষ্টা-তদবির বা ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে তার কাঙ্ক্ষিত যোগ্য আসনটি দখল করে নিচ্ছেন।

এছাড়া চাকরির নিম্ন বেতন, অনুন্নত কর্মপরিবেশ, দক্ষতা যথাযথভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ না থাকা ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোকেই শেষ ভরসা হিসেবে দেখছেন তারা। বিদেশে উন্নত কর্মসংস্থান, নিরাপদ জীবনযাপন- শিক্ষার্থীদের ওইসব দেশে স্থায়ীভাবে থাকতেও আকৃষ্ট করছে। মেধা পাচারের লাগাম টানতে ট্যালেন্ট পুল গঠনের পরামর্শ দিয়ে দিয়ে শিক্ষাবিদরা বলেন, মেধার পাচার রোধ করতে হলে একটি ‘ট্যালেন্ট হান্ট পুল’ গঠন করা জরুরি। এর মাধ্যমে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উন্নত দেশে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়ে তাদের পুনরায় দেশে ফিরিয়ে এনে কাজে লাগাতে হবে।


এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাত গুণ বেড়েছে : গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। ২০১১-২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩১৪ জন ছিল। ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯। ‘ওপেন ডোরস ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ডাটা’র তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়েছে ২৬ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। ইউনেসকোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য ৫৫টি দেশে গেছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ এবং ২০২১ সালে ছিল ৪৪ হাজার ৩৩৮। আর ২০১৩ সালে বিদেশে গিয়েছিল ২৪ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থী। ২০০৫ সালে ছিল ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। অর্থাত্ ১০ বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। আর ২০ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে তিন গুণের বেশি। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করেন এ সংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বুয়েটে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের ব্যয় ১০ লাখ টাকা : বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ১৯৮৬-এর ব্যাচে মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ৩১ জন। তাদের ২৫ জনই এখন বিদেশে। ১৯৯৪-এর ব্যাচের ৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ জন রয়েছেন দেশের বাইরে। ১৯৯৮-এর ব্যাচের ৬৫ জনের মধ্যে ৩০ জন বিদেশে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের মোট ব্যয় ৫ লাখ টাকার বেশি। অন্যদিকে বুয়েটে এ ব্যয় কমপক্ষে ১০ লাখ এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ১৫ লাখ টাকার ওপর। আর জনগণের দেওয়া করের টাকায় ঐ অর্থ জোগায় সরকার।

মেধার মূল্যায়ন না পেরে সুইডিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন তানিয়া আহমেদ: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগে একটি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন তানিয়া আহমেদ নামে এক ছাত্রী। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি বিবেচিত হননি। একটি ছাত্র রাজনৈতিক দলের বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী তারই সহপাঠী নিয়োগটি পেয়েছেন। এরপর তানিয়া ক্ষোভ ও অপমানে সুইডেনে বৃত্তি নিয়ে চলে যান লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে। তিনি বর্তমানে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সুইডিশ নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন।

তরুণদের ভাবনায় পরিবর্তন লক্ষণীয় : দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে নিশ্চিত জীবন যাপনে এক বছর সরকারি চাকরি ছিল পছন্দের শীর্ষে। দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ভর্তির পর পরই একাডেমিক বই বাদ দিয়ে বেছে নিতেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি। বলতে গেলে দেশের নব্বই শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশীই বিসিএস প্রস্তুতি নিতেন। যদিও বছরে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীই বিসিএস ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হতে পারেন। গত এক দশক ধরে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন এসেছে তরুণদের ভাবনায়। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এখন পড়াশোনা শেষে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িত্ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ থেকে ২০২৪ সালে বিএসসি শেষ করেন রফিকুল ইসলাম। এখন উচ্চতর পড়াশোনা ও ‘নিরাপদ কর্মসংস্থানের’ খোঁজে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় তিনি। তার মতে, পড়াশোনা শেষে দেশে অনেক কাজের সুযোগ থাকলেও যোগ্যতা অনুযায়ী তা যথাযথ নয়। শুধু রফিকুল ইসলাম নয়, প্রতি বছর এমন হাজার হাজার তরুণ উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে কর্মসংস্থান নেই—এ অজুহাতে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার গড়তে বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছেন।

অনেকে সন্তানদের মাধ্যমে পাচার করছেন অর্থ : সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আছে দুর্নীতিবাজদের সন্তান। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার নামে তারা অনেকেই বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন বৈদেশিক মুদ্রা। ঐ টাকায় সংশ্লিষ্ট দেশে গাড়ি-বাড়ি কিনে কিংবা ব্যবসায়ী সেজে স্থায়ী বসবাসের (পিআর) অনুমতি নিচ্ছেন। এরপর শুরু হয় তাদের উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন। অবশ্য বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ‘ফান্ডিং’ (ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি) কিংবা ‘মেধাবৃত্তি’ নিয়ে পড়তে যান। আবার বাবা-মায়ের সর্বশেষ সম্বল বিক্রি করে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

রিভার্স ব্রেন ড্রেন জরুরি : শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন সম্প্রতি রাজধানীতে এক সেমিনারে বলেন, ‘আশা করেছিলাম, আমাদের নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা একটা ট্যালেন্ট পুল করবেন। সেই পুল থেকে ট্যালেন্টদের বিভিন্ন দেশে পাঠাবেন। সেসব ট্যালেন্ট শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের জন্য উপযোগী শিক্ষা অর্জন করবেন। তারপর আমাদের ট্যালেন্টরা আমাদের, মানে তাদের নিজের দেশে ফিরে আসবেন। দেশের সেবা করবেন। তাদের পুরো পড়াশোনার খরচ দেবে সরকার। তারপর পড়াশোনা শেষে তাদেরকে উচ্চসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনবে। উপযুক্ত কাজে লাগাবে। এটাই রিভার্স ব্রেন ড্রেন। আমাদের দেশের শিক্ষার জন্য এটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

মেধা পাচার প্রতিরোধে চীন-ভারতের মতো উদ্যোগ নিতে হবে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেন, কোনো দেশের উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য ও দক্ষ অংশ যখন অন্য দেশে চলে যায় এবং সেখানেই চাকরি করে; ফিরে আসে না সেটাকে আমরা মেধা পাচার বা ব্রেইন-ড্রেইন বলি। উন্নত প্রযুক্তি ও পরিবেশে লেখাপড়া-গবেষণা আর বৈশ্বিক জ্ঞানভান্ডারের সঙ্গে পরিচিত হতে বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে যাওয়াটা অপরাধ নয়, বরং জরুরি। ফিরে এসে তারা দেশের জনশক্তিকে বৈশ্বিক মানে তৈরি করতে পারেন। চীন-ভারত প্রতি বছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েটকে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা-যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশে পাঠাচ্ছে। এজন্য তাদের বিনিয়োগের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাও আছে। অনেকে ব্যাংক ঋণ পান। তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে—যারা পড়তে যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগ আবার ফিরে এসে নিজ দেশে সেবা করছেন।

দেশের তিন ক্ষতি : উচ্চশিক্ষা শেষে বিদেশে স্থায়ী হওয়া শিক্ষার্থীর প্রকৃত সংখ্যার বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। সংশ্লিষ্টরা বলেন, মেধাবীরা বিদেশে পড়তে গেলে মোটা দাগে তিনটি ক্ষতি হয় দেশের। একটি হচ্ছে, জাতি তার সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যারা ফিরে না আসে তারা দেশে কোনো অর্থ পাঠান না। বরং অনেকে নিজের সহায়-সম্বল যা আছে তা বিক্রি করে চলে যান। আর শেষটি হচ্ছে, তাদের মাধ্যমে এ দেশ থেকে দুর্নীতিবাজ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ অন্যরা বিদেশে টাকা পাচার করেন। এই অর্থের বড় অংশ যায় অনানুষ্ঠানিক (হুন্ডি) পথে।

১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ৫৫ শতাংশেরই ইচ্ছা বিদেশে পাড়ি জমানো : ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালনায় ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ৫৫ শতাংশেরই ইচ্ছা বিদেশে পাড়ি জমানো। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ৩০ উপজেলা ও শহরের ৪ হাজার ২০০ জনের ওপর ‘যুব জরিপ ২০১৮’ পরিচালনা করে। জরিপে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সি প্রায় ২০ শতাংশ উন্নত জীবন ও কাজের জন্য বিদেশে যেতে আগ্রহী। শিক্ষাবিদরা বলেন, তরুণ প্রজন্ম একটা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ। তরুণ প্রজন্মের সঠিক পরিচর্যা ও তাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ ও মূল্যায়নের ওপরই নির্ভর করে একটা রাষ্ট্রের ভবিষ্যত্ কেমন হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে তরুণ প্রজন্ম, মেধাবী প্রজন্ম ওভাবে পরিচর্যা পান না, পান না তার কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন। এখানে মেধাবী হয়েও একজন তরুণ তার মেধার মূল্যায়ন পান না। অথচ তার চেয়ে কম যোগ্যতার কেউ একজন রাজনৈতিক চেষ্টা-তদবির বা ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে তার কাঙ্ক্ষিত যোগ্য আসনটি দখল করে নিচ্ছেন।

‘যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না’ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক বলেন, তরুণ প্রজন্ম একটা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ। তরুণ প্রজন্মের সঠিক পরিচর্যা ও তাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ ও মূল্যায়নের ওপরই নির্ভর করে একটা রাষ্ট্রের ভবিষ্যত্ কেমন হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে তরুণ প্রজন্ম, মেধাবী প্রজন্ম ওভাবে পরিচর্যা পায় না, পায় না তার কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন। দেখা যায়, লবিং ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে মেধাবী যোগ্যজনকে নিয়োগ না দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় অযোগ্যজনকে। একজন মেধাবী যখন দেখেন, তিনি তার মেধা- যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন পান‌ না কিংবা তার চেয়ে কম যোগ্য, অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য কেউ একজন যখন সে সুযোগ-মূল্যায়ন পেয়ে বসেন, তখন যৌক্তিক কারণেই তিনি সেটা মেনে নিতে পারেন না। ফলে সিস্টেমের প্রতি, সার্বিকভাবে দেশের প্রতি তার একটা অনীহা জন্মে যায়। তখন তিনি দেশত্যাগে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এক্ষেত্রে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটা কালজয়ী কথা মনে পড়ছে, ‘যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না।’

 

সর্বাধিক পঠিত