স্টাফ রিপোর্টার : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে রোল মডেল বা আদর্শ বলা হলেও তা পুরোপুরি ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আবদুল ওয়াদুদ। বিগত বছরগুলোতে দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা সফলতার সঙ্গে কমানো গেলেও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি কয়েকগুণ বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সবমিলিয়ে দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এখনো অনেক কিছুই অনুপস্থিত বলে মত দেন অতিরিক্ত সচিব।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর এক হোটেলে ব্র্যাক আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশন উইমেনের (ইউএন উইমেন) সহযোগিতা এবং সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির (সিডা) আর্থিক সহায়তায় ব্র্যাকের ‘জেন্ডার রেসপন্সিভ ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ (জিআরডিআরআরআইবি)’ শীর্ষক প্রকল্পের সূচনা উপলক্ষ্যে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা যেভাবে করা হয়েছে তা কতটা ঠিক-এমন প্রশ্ন তুলে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, যদি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তাহলে আমাদের অনেক কিছু মিসিং (অনুপস্থিত), আমরা এখনো শুরুই করতে পারিনি। আমাদের যখন রোল মডেল (আদর্শ) বলা হয়, আমি মনে মনে খুব হাসি। হ্যাঁ, আমাদের যে সবই ব্যর্থতা তা তো নয়।
লস অব লাইফের (প্রাণহানি) সংখ্যা খুব ট্রিমেন্ডাসলি (অসাধারণভাবে) আমরা কমিয়েছি। কিন্তু ইকোনমিক লস (অর্থনৈতিক ক্ষতি), সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি সেটা অনেকগুণ বেড়েছে। এখানে আমরা কোনোকিছুই ম্যানেজ করতে পারিনি। সুতরাং, যদি আমি মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনাকে ধরি, তাহলে আমি বিরাট সফল মানুষ।
আর যদি আমি ইকোনমিক লস ধরি, তাহলে আমি চরম ব্যর্থ।
গত বছরের আগস্টে ফেনীসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা সবসময় রেসপন্সটাকে (সাড়াদান) বড় করে দেখাই। মানে আমি ক্রেডিট (কৃতিত্ব) দিতে চাচ্ছি যে, আমি তো রিলিফ (ত্রাণ) দিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছি। ইস্টার্ন ফ্লাডে (পূর্বাঞ্চলের বন্যা) মোট ক্ষয়ক্ষতি আমরা হিসাব করেছিলাম ১৪ হাজার কোটি টাকা। আমরা টোটাল রিলিফ-টিলিফ যা দিয়েছি, এর বাদে এই বছরে (২০২৫) বন্যার সময় আমরা যখন দেখতে গেলাম যে, এই ১৪ হাজার কোটির মধ্যে কত মাঠে গেছে।
আমরা কিন্তু এটা ৫০০ কোটিও পেলাম না।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রস্তুতি গ্রহণ এবং পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্যোগ ঝুঁকি বিমা চালু, সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে দুর্যোগের জন্য বাজেট বরাদ্দের ওপর জোর দেন অতিরিক্ত সচিব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএন উইমেন বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ নবনিতা সিনহা বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও সহনশীলতায় অগ্রণী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখানে দুর্যোগ মোকাবিলায় জেন্ডার (লিঙ্গভিত্তিক) সমতাকে গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক অঙ্গীকার রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে নারীরা ইতোমধ্যেই সম্মুখসারিতে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তাদের আরো শক্তিশালী নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, দুর্যোগকালীন ঝুঁকি কমাতে নারী, শিশু, প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে যেন এসব ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মতামত শোনা যায় এবং নারীরা এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন।
ব্র্যাকের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও নগর উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালক মো. লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি মাতিলদা স্ভেনসন, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী গোলাম তৌসিফ প্রমুখ।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জিআরডিআরআরআইবি প্রকল্পের লিড আব্দুল লতিফ খান।
কর্মশালায় বলা হয়, যে কোনো দুর্যোগে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে।
‘বাংলাদেশের নারীদের উপর রেমালের প্রভাব’ শীর্ষক সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক নানা বিধিনিষেধ আর পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধের কারণে নারীরা দেরিতে আশ্রয়কেন্দ্রে যান, যা তাদের আরো বেশি দুর্যোগের ঝুঁকিতে ফেলে।
জিআরডিআরআরআইবি প্রকল্পটি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের নীতিমালা ও কার্যক্রমে লিঙ্গভিত্তিক সমতার দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করে বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্বলতাগুলো কমিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে।