বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

সরকারকে সহায়তা করতে সর্বদলীয় কমিটির প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানেই এই কমিটি গঠনের প্রস্তাব আসে। বৈঠকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান এবং পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দেন, আগামী নির্বাচন হবে অনন্য। 
গত শুক্রবার কয়েকজন পুলিশ ও সেনাসদস্য গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুরকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করায় সৃষ্ট রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে রোববার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল ড. ইউনূস ইসলামী আন্দোলন, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন এবং গণফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতারাও।

ড. ইউনূস বৈঠকে দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘যারা নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে চায় না, তারা যত রকমভাবে পারবে বাধা দেবে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে নির্বাচন বানচাল করতে। এগুলোর কিছু কিছু লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত সরকারের হাতে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করব। নিজের ভূমিতে দেশ পরিচালনার নির্বাচন। এই নির্বাচনে অন্য কোনো দেশের থাবা মারার কোনো সুযোগ যেন না থাকে।’


সর্বদলীয় কমিটির প্রস্তাব
আইনশৃঙ্খলার অবনতি নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে মন্তব্য করে বৈঠকের পর গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, তারা দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টাকে। একটি হলো নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি। দুই বিচার ও সংস্কার। সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন করতে পারেনি। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। 
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জুলাই সনদ ও সংস্কার বাস্তবায়ন জরুরি। যেসব বিষয় সংবিধান-সংশ্লিষ্ট নয়, কিন্তু দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো বর্তমান সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর করুক। পরবর্তী সংসদ তা বৈধতা দেবে। সংবিধান-সংশ্লিষ্ট কিন্তু ঐকমত্য হয়নি, এমন সংস্কারের ফয়সালা জনগণ করবে।’

পিআর ও গণভোট দাবি 
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট চেয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার কথা তুলে ধরেন।
পিআর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, উনারা নোট রেখেছেন। বলেছেন, চিন্তাভাবনা করবেন। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

পরিস্থিতির উন্নতি ছাড়া ভোটের সংশয় কাটবে না
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে অভিযোগ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, কেন্দ্রীয় এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে কমিটি গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারপ্রধানকে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সংকট মোকাবিলায় সব মত-পথের দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। 
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে জানিয়ে মজিবুর রহমান বলেন, অতীতে যাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি আছে– এ রকম সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের এবং আমলাতন্ত্রের মধ্যে যদি এ রকম লোক থাকে, তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে হলেও কাজ করানো যায়।

জাপা ‘ষড়যন্ত্রে’ বিস্মিত প্রধান উপদেষ্টা
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, জাতীয় পার্টির ওপর ভর করে শেখ হাসিনা ফিরতে পারেন। জাপাকে প্রধান বিরোধী দল করার ষড়যন্ত্রের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
বৈঠকে রাশেদ খান ছাড়াও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার লুনাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের বিষয়ে রাশেদ খান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চেয়েছি– আমলারা কি সরকারের প্রতি অনুগত? কারণ অনেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। সংবিধান ও গণভোটের বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করেছে গণঅধিকার। সচিবালয়ে আওয়ামী আমলাদের রেখে সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা– তাও জানতে চেয়েছি।

শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেয়নি হেফাজত 
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের একজন দিয়েছেন। তিনি গোপালগঞ্জের লোক। বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব ছিলেন তিনি। হেফাজত এই উপাধি দেয়নি।

 

সর্বাধিক পঠিত