স্টাফ রিপোর্টার : সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অহরহ ঘটছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। পুলিশের তদারকিও আগের চেয়ে কম। মহাসড়কে ১২১ সিসিটিভি ক্যামেরার থাকলেও সচল মাত্র ৩১টি।
নতুন করে আবারও সামনে এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতার বিষয়টি। মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে এবং বিশেষ অভিযান চালিয়েও বন্ধ করা যাচ্ছে না ডাকাতি, ছিনতাই। অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে ডাকাতি এবং নারীদের শ্লীলতাহানির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে প্রায়ই। গত এক মাসে শতাধিক ছিনতাই ও ডজন ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে। এ সময়ের মধ্যে ছিনতাইকারির ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন ২ জন। আহতের সংখ্যা শতাধিক। এসব অপরাধ কর্ম কেবল রাতের অন্ধকারেই হচ্ছে এমন না, দিনের বেলাতেও হচ্ছে।
এ অপরাধগুলো ঠেকাতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ? অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পুলিশকে ফাঁকি দিতে ডাকাত চক্রের বেশ কিছু কৌশল।
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক দুটিতে মোট ৩৮ কিলোমিটার সড়কে ছিল ১২১ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। এরমধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে মাত্র ৩১টি।
জানা গেছে, ৯০টি ক্যামেরার অধিকাংশই চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তচক্র। বাকি কয়েকটি বিকল ও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও ৫ আগস্ট গণঅদ্ভুত্থানের পর পুলিশের জনবল এবং গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীচক্রের সদস্যরা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দুই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অপরাধীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখছে মহাসড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পুলিশ চেকপোস্টগুলোর অবস্থান। একই সঙ্গে তারা চেকপোস্টগুলোতে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যার বিষয়টিও খোঁজ নিচ্ছে। ডাকাতি করে কোন পয়েন্ট দিয়ে পালালে পুলিশের নজর এড়ানো যাবে, সেটাও তাদের জানা থাকে। এরপর, কয়েকজন যাত্রীবেশে বিভিন্ন বাসে উঠে লুটপাট চালায়। তারা এসব করতে খুব অল্প সময় নিচ্ছে।
সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ মিনিটের ভেতর যা পারছে তাই নিয়ে পূর্বনির্ধারিত স্থানে নেমে পালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ বলছে, আগে সিসিটিভি ক্যামেরা সচল থাকায় অপরাধীদের এসব কর্মকাণ্ড সহজেই মনিটর করা যেত এবং তাদের শনাক্ত করতে খুব বেশি বেগ পেতে হতো না। বর্তমানে সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া না যাওয়ায় এসব অপরাধীকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তাদের চিহ্নিত করতে জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে পুলিশকে। ফলে, অপরাধীদের শনাক্ত করতে এবং ধরতে অনেক বেশি সময় লাগছে।
তারা আরও জানান, এখন যেসব সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রয়েছে, সেসব দিয়ে পুরো এলাকার নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। পুরো এলাকা তদারকি করতে ৯০টি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন প্রয়োজন।
সরেজমিন মহাসড়কের বিভিন্নস্থান ঘুরে দেখা যায়, সিঅ্যান্ডবি, রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ইউটার্ন, ফুলবাড়িয়া, ব্যাংক টাউন এলাকায় নেই কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা। এ ছাড়া এসব স্থান অনেকটাই নির্জন। দুপুর কিংবা বিকেলে মানুষের চলাচল অনেকটাই কম থাকে এখানে।
সাভার ও আশুলিয়া এলাকার বাসস্ট্যান্ডগুলোতে পুলিশের টহল টীম কাজ করলেও এসব নির্জন স্থানে দেখা যায় না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি। স্থানগুলোর একশো ফুটের মধ্যেই উভয় পাশে রয়েছে ফাঁকা মাঠ, বাজার ও বাসস্ট্যান্ড। অপরাধ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে সহজেই পালিয়ে বা মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া সম্ভব। আশপাশে কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় ব্যক্তিগত সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই এসব জায়গায়। ফলে, ডাকাতি করার জন্য এসব স্থানই বেছে নেয় অপরাধীরা।
গোয়েন্দা সূত্র ও স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর থেকেই এসব স্থানে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ জানায়, গত দুই মাসে এসব এলাকায় শুধু ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৭ ও মার্চে ৯ জন। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র।
মহাসড়কে চলাচলরত সাভার পরিবহণ, শুভযাত্রা পরিবহন, রাজধানী পরিবহন, ইতিহাস পরিবহনসহ বিভিন্ন যাত্রীবাহী ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে লুট করা হয় স্বর্ণালংকার, অর্থ মোবাইল ফোনসহ মূল্যাবান মালপত্র।
ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিনুর কবির বলেন, কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে অধিকাংশ ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও পুলিশের জনবল কম। কয়েকদিন আগে, ৭০ জন ফোর্স এবং দু’টি গাড়ি আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আশা করছি এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল না থাকায় অপরাধী শনাক্ত ও মহাসড়ক অপরাধ নির্মূল কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত ক্যামেরা বসালে এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কেউ অপরাধ করার সাহস পাবে না।