স্টাফ রিপোর্টার : সাভারে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ছিনতাই কিংবা দুর্ধর্ষ ডাকাতি বা হত্যাকান্ডের ঘটনা। এতে মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সাভার অচিরেই আতঙ্কিত উপ-শহরে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
সাভারের ব্যস্ততম ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বারবার ঘটছে ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা। এরমধ্যে সিএন্ডবি থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত মহাসড়ক সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) ভোরে সাভার পৌরসভার শিমুলতলা এলাকায় মহিউদ্দিন আহম্মেদ (৬৫) নামে এক ব্যক্তি ছিনতাইয়ের শিকার হন। এসময় ছিনতাইকারিরা তার বুক ও পেটে ছুরিকাঘাত করে সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও হাত ঘড়ি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ৩ ঘন্টা সময়ব্যাপী অস্ত্রপাচার করা হয়। বর্তমানে তিনি আইসিওতে ভর্তি রয়েছেন। মহিউদ্দিন আহম্মেদ সাভার পৌরসভার স্মরণিকা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। তিনি ফজর নামাজ শেষে হাটতে বেড়িয়ে ছিলেন।
সাভারের বিশমাইল এলাকায় সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে ছিনতাইকারীরা শাহ্্ সিমেন্টের কাভার্ড ভ্যানচালক শামীমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
সাভার উপজেলার হেমায়েতপুরের আলমনগরে সুগন্ধা হাউজিং সোসাইটির নাসির উদ্দিনের বাড়িতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গত ২৩ আগস্ট (শনিবার) রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা বাড়ির সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুটে নিয়ে গেছে।
সাভার পৌরসভার উলাইল ব্রিজসংলগ্ন এলাকা থেকে গত ৩০ জুলাই ছুরিকাঘাতে চাকরীজীবী সারুখ হাসান রাসেল (২২)। সে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর শহীদ আলীর ছেলে।
সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নে পূর্ব শত্রুতার জেরে দুই যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। ২০ জুলাই (রোববার) সন্ধ্যার দিকে বিরুলিয়ার খাগান এলাকার সাত্তার মিয়ার মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়নের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে গত ১৪ জুলাই (সোমবার) পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে এক মাদ্রাসাছাত্রীকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় সাব্বির হোসেন নামে এক কিশোর। তবে অভিযুক্ত বাকি আসামিরা এখনও পলাতক। এই ঘটনাটি শুধু সাভার নয়, পুরো দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো।
সাভারে ভাকুর্তা ইউনিয়নের কান্দিভাকুর্তা গ্রামে গত ২১ জুন (শনিবার) গয়নার কারিগর আব্দুল মালেক (৩৫)কে গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যা করে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ভাকুর্তায় ব্যাবসায়ী মালেক হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের আটক ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
এছাড়া একই দিন গত ২১ জুন (শনিবার) আশুলিয়ার হক অ্যাপারেলস অ্যান্ড টেক্সটাইল কারখানায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১৫-১৬ জনের ডাকাত দল প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
সাভার বাসস্ট্যান্ডের মুরগি পট্টিতে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে গত ৬ জুন রাতে আটটারদিকে সাভার মডেল থানার সোর্স রুবেল মিয়া (৩৬)-কে স্ত্রী সামনেই ছুরি ও হাতুড়ি দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
সাভার পৌরসভার ব্যাংক কলোনি এলাকায় গত ১৯ মে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গ্যারেজকর্মী শাহীন মিয়া (৩৫)। ওই ঘটনায় পরে ২৩ মে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মেহেদী হাসানকে বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪।
সাভার পৌরসভার মজিদপুর এলাকায় গত ৮ মে নিজের বাবা আব্দুর সাত্তারকে (৫৬) ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মেয়ে। পরে পুলিশকে নিজেই ফোন দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে।
সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের সামাইর গ্রাম থেকে গত ৪ মে রং-মিস্ত্রি শুকুর সিকদার (৩৪)-এর গলা ও মুখে গভীর ক্ষতসহ মরদেহ উদ্ধার হয়।
সাভার উপজেলার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের নতুনপাড়ায় ২৩ এপ্রিল (বুধবার) স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বামী সাজ্জাদ হোসেন মানিক। পরে নিজেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে খবর দেন।
সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় গত ২৪ মার্চ (সোমবার) রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগরগামী লেনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ফটক (সিঅ্যান্ডবি) এলাকায় শুভযাত্রা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি হয়। ডাকাতদল বাসযাত্রীদের ছুরিকাঘাত ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০টি মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ ও মূল্যবান মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
সাভার পৌরসভার ডগরমোড়া মহল্লায় গত ১৮ মার্চ ২০২৫ রাতে পূর্ব শত্রুতার জেরে শ্রমিক সুলতান হোসেন সাগর (২২)-কে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুলিশ টাউন এলাকায় গত ২ মার্চ (রোববার) ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুলিশ টাউন এলাকায় সাভার পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইলসহ মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দুই সপ্তাহ আগে একই স্থানে একইভাবে শুভযাত্রা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে তিন যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে যাত্রীদের মোবাইল, মানিব্যাগসহ মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এই ধারাবাহিক খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় সাভারের সাধারণ মানুষ এখন গভীর আতঙ্কে। অনেকে রাতের বেলা বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। কর্মজীবীরা বলছেন, “সাভারে এখন মানুষ নিরাপদে চাকরি বা ব্যবসা করতে পারছে না, প্রতিদিনই ঘটছে নতুন ঘটনা।”
অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে শঙ্কায় আছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশের টহল ও নজরদারি না থাকায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজ জানিয়েছে, ঘটনার দ্রুত বিচার না হলে অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে উঠবে।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞার সঙ্গে আলাপ করলে জানান, আমরা নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাসি করছি। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে পুলিশী অভিযান এবং টহল জোরদার করা হবে। তিনি আরও জানান, অনেক ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকীদের আটক করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই অপরাধীদের আটকের ব্যাপারে আরও জোড়ালো ভূমিকা দেখা যাবে।
সাভার উপজেলার আইন-শৃঙ্খলার অবনতির বিষয় সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শাহীনুর কবিরের কাছে জানতে চাইলে বলেন, সাভারে পুলিশের জনবলের ঘাটতি ছিলো। সোমবার (২৫ আগস্ট) ৭০ জন ফোর্স এবং দু’টি গাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। এখন থেকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। আমরা অপরাধীদের ব্যাপারে জিরোটলারেন্স মনোভাব পোষণ করছি।