মঙ্গলবার, 26 আগস্ট 2025
MENU
daily-fulki

মানিকগঞ্জ হাসপাতালে টেন্ডারকে ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ

ফুলকি ডেস্ক : মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকার টেন্ডারকে ঘিরে শুরু হয়েছে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি সরকারি ক্রয়নীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া শর্ত চাপিয়ে দিয়ে নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের জন্য টেন্ডারের দরজা খুলে দিয়েছেন।

 

গত ১৩ আগস্ট প্রকাশিত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে ওষুধ, সার্জিক্যাল সামগ্রী, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, মনোহারি ও রোগীর খাবার সরবরাহের শর্ত পড়ে হতভম্ব হয়ে যান সাধারণ ঠিকাদাররা। 

শর্তগুলোতে বলা হয়েছে- কম্পিউটার সামগ্রী সরবরাহে সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। মনোহারি ও গজ-বেন্ডিস সরবরাহে সনদ থাকতে হবে। বিপুল অঙ্কের অর্থ দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকে ব্লক রাখতে হবে, শুধু ওষুধের টেন্ডারে প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

একজন স্থানীয় ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শর্ত। আমরা জেলাপর্যায়ে কাজ করি কিন্তু সার্টিফিকেটের দরকার হয় না। এর মানে পরিষ্কার কয়েকজন বড় ঠিকাদারের জন্য এই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।’ 

আরেকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিযোগিতা হোক। এতে সরকারের খরচও বাঁচবে, কাজের মানও ভালো হবে। কিন্তু এসব শর্ত দিয়ে সাধারণদের বাদ দেওয়া হচ্ছে শুধু বড় অংকের কমিশন খাওয়ার জন্য।’ অথচ ২২ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলা সদর হাসপাতালে একই কাজের দরপত্র ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে আহ্বান করা হয়েছে। ওই সরকারি হাসপাতালে কিন্তু দরপত্রে  মানিকগঞ্জের মতো এতো কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়নি।

সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার মূল আইন ২০০৬ ও ২০০৮ একেবারেই স্পষ্ট। সরকারি ক্রয় আইন ২০০৬ ও ২০০৮ অনুযায়ী কোনো টেন্ডারের শর্ত প্রতিযোগিতাকে সীমিত করতে পারবে না (ধারা ২৯(৩))। শর্ত যৌক্তিক ও অ-ভেদাভেদমূলক হতে হবে (১৯)। কোনো কর্মকর্তা নিজের সুবিধার্থে শর্ত বসাতে পারবেন না (৯৮)।  

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অংশগ্রহণকারী এক ঠিকাদার হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়কের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন টেন্ডারে যেসব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলো কোনো পক্ষের হয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দেওয়া হয়েছে। এসব শর্ত প্রত্যাহারের আবেদন করেন ওই ঠিকাদার। প্রতিষ্ঠানটি পছন্দের ঠিকাদারদের জন্য সিন্ডিকেটের খেলা বলে তিনি দাবি করেছেন। 

মানিকগঞ্জের ঠিকাদার মহলে আলোচনায় রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এর মধ্যে আছেন রাজধানীর কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত সাপ্লাইয়ার, যারা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বিভাগের বড় বড় কাজ নিজেদের কব্জায় রাখেন। তাদের সঙ্গে বাহাউদ্দিনের ‘গোপন বোঝাপড়া’ আছে বলে অভিযোগ। 

একজন ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, ‘টেন্ডার জমা দেওয়ার আগেই কে কোন কাজ পাবেন, কত শতাংশ কমিশন যাবে এসব হিসাব আগেভাগেই ঠিক হয়ে যায়। আমরা শুধু দর্শক।’

হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহাউদ্দিন  বলেন, ‘আমার কোনো পছন্দের ঠিকাদার নেই। সরকার নির্ধারিত নিয়ম মেনেই ই-জিপি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।’ 

তিনি জানান, ঠিকাদারদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, কঠিন শর্তগুলো সংশোধনসহ টেন্ডারের টাইম বর্ধিতকরণ করা হয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত