স্টাফ রিপোর্টার : সাভার সেন্ট্রাল মডেল কলেজের নামে ১০ শতাংশের একটি জমি দান করবেন হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি। সেই জমির নিবন্ধনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সপ্তাহখানেক আগে আশুলিয়া সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান কলেজের শিক্ষক আলতাব হোসেন। তবে দলিল লেখকেরা কার্যক্রম বন্ধ বলে জানান। পরে সাবরেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি যেকোনো জায়গা থেকে দলিল লিখে আনতে বলেন। সাভার থেকে দলিল লিখে গত বৃহস্পতিবার পুনরায় সেখানে গিয়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করেন তিনি।
শিক্ষক আলতাব হোসেন বলেন, ‘কয়েকজন দলিল লেখকের কারণে অযথা আমাদের হয়রানি হয়েছে। সাভার থেকে দলিল লিখে নিয়ে যেতে হয়েছে।’
প্রায় এক মাস ধরে ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের দলিল লেখকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে। আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের বাধায় অনেকে ফিরে যাচ্ছেন।
ভুক্তভোগী ও কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মবিরতি পালনকারীদের অনেকে জমির নিবন্ধন করতে আসা ব্যক্তিদের কার্যক্রম বন্ধ বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তবে আন্দোলকারীদের সহযোগিতা ছাড়াই অনেকে নিজ উদ্যোগে দলিল নিবন্ধনের কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন। জমির নিবন্ধন সম্পন্ন করায় মারধরের শিকারও হতে হয়েছে একজনকে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী।
দলিল লেখকদের দাবি, আশুলিয়ার সাবরেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভুইয়ার স্বেচ্ছাচারিতা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অসম্মান করে কথা বলা এবং দুর্নীতি, ঘুষ নেওয়ার প্রতিবাদে তাঁরা এ কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁরা খায়রুল বাশারের পদত্যাগ চান।
সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানান, চলতি বছরের ২৩ মার্চ সাবরেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভুইয়া যোগ দেন। যোগদানের পর তিনি দলিল নিবন্ধনে জমির শ্রেণি অনুসারে সরকার নির্ধারিত কর আদায় করতে গেলে কয়েকজন দলিল লেখকের সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি হয়। দলিল লেখকদের অনেকে জমির নিবন্ধন করার সময় সরকার নির্ধারিত উৎস কর কমাতে সাবরেজিস্ট্রারের কাছে দাবি জানান।
এ ছাড়া জমির দলিল সম্পন্ন করার সময় ‘ভুয়া’ ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের রসিদ দিলে সেটিও আটকে দেন সাবরেজিস্ট্রার। এসব কারণে দলিল লেখকদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। পরে তাঁরা অন্যদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।
‘ভুয়া’ ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের একটি রসিদ কাছে এসেছে। সরকারি রসিদের মতো দেখতে রসিদের কিউআর কোড স্ক্যান করে দেখা যায়, সেটি সরকারি ডোমেইনে নয়, একটি ডট এক্সওয়াইজেড ডোমেইনে তৈরি ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এই ভুয়া খারিজ দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে সেটি আটকে দিয়েছেন সাবরেজিস্ট্রার।
এদিকে গত ২৩ জুন দুপুরে সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আমির হোসেন ব্যাংকের বন্ধকি দলিল সম্পন্ন করায় ১০-১২ জন দলিল লেখক তাঁকে মারধর করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সাবরেজিস্ট্রার ভীষণ স্বেচ্ছাচারী, ঘুষ ছাড়া তিনি দলিল করতেই চান না। আমাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অসম্মান করে কথা বলেন। এসব কারণে চলতি বছরের ১৭ জুন থেকে সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। জেলা রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন জায়গায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।’
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত করের ক্ষেত্রে পূর্বের সাবরেজিস্ট্রার যেভাবে করেছেন, আমরা সেভাবে করার কথা বলেছিলাম। যদি আমরা ভুল বলে থাকি, তিনি আমাদের বুঝিয়ে দিলেই হতো। তিনি এমন কোনো প্রমাণ কি দিতে পারবেন, যেটাতে আমরা কর কমাতে বাধ্য এবং ভুয়া খাজনা দিয়ে দলিল করতে বাধ্য করেছি।’
সাবরেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভুইয়া বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন। আমি তাঁদের অনুরোধ করব, অন্তত একটা প্রমাণ তাঁরা যেন দেখান। অনেকে তাঁদের ভুল বুঝতে পেরে আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন। দলিল নিবন্ধন করাচ্ছেন। গুটিকয় দলিল লেখকের অযৌক্তিক, অন্যায় স্বার্থের জন্য সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সরকারি নিয়মের বাইরে গিয়ে ভুয়া খাজনার রসিদ দিয়ে এই অফিসে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। নিয়মের মধ্যেই সবাইকে চলতে হবে।’