বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

সাভারের সাবেক ইউএনও রাহুল চন্দ’র ওএসডি, মিষ্টি বিতরণ



স্টাফ রিপোর্টার : সাভারের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) রাহুল চন্দকে জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের বিস্বশÍ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার ওএসডির খবরে সাভারে মিষ্টি বিতরণ করেছে বিভিন্ন মহলে। 


সাভারে জুলাই আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা এবং ফ্যাসিস্ট বিরোধী জোট তার গ্রেফতার ও ফাঁসি দাবি করেছেন। সাভার পৌর বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জুলাই আন্দোলনে আহত যোদ্ধা নাসির উদ্দিন উকিল জানান, ফ্যাসিস্টদের শিরোমনি সাবেক ইউএনও রাহুল চন্দ ওএসডির খবর পেয়ে আমরা দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সাভার পৌর এলাকায় বিভিন্ন মহল্লায় মিষ্টি বিতরণ করেছি।


জুলাই আন্দোলনকালে সকাল হলেই সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) দপ্তরে দেখা যেত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেলা প্রশাসনের সভার নামে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রায় প্রতিদিন নিয়মিত বৈঠক ও ব্রিফিংয়ের জন্য ডাকতেন। সভায় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহিল কাফি, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান, আশুলিয়া থানার ওসি এএফএম সায়েদ, র‌্যাব সদস্য, এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবি, আনসার সদস্য, বিজিবিসহ অনেকেই উপস্থিত থাকতেন।

 সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের হটাতে প্রায়ই আঙ্গুল উচিয়ে হাত নেড়ে গুলি করার নির্দেশ দিতেন তিনি। সেরকম একাধিক ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। 

জুলাই আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ২০ ও ২১ জুলাই সাভার ও আশুলিয়ায় ফুলকি পত্রিকা অফিসসহ শতাধিক বিএনপি ও জামায়ত নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হামলা, ভাংচুর এবং লুটপাট করা হয়েছিল। এ ঘটনার নেপথ্য নায়কও ছিলেন এ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।


আন্দোলনের দিনগুলোতে ঢাকার উত্তর প্রবেশদ্বার সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ আশুলিয়া থানার গুরত্বপূর্ণ এলাকা বরাবরই ছিল বেশ উত্তাল। 


ছাত্র জনতার আন্দোলনে পুলিশ আর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের হামলার নেতৃত্বে দেখা যেত তৎকালীন ইউএনও ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাহুল চন্দকে। সকাল হলেই তিনি গায়ে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট চাপিয়ে নিতেন। আন্দোলন দমাতে জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ের কথা বলে নিজ কাযালয়ে ডেকে বৈঠক করে আন্দোলন দমাতে সংঘবদ্ধ হয়ে বিপুল সংখ্যক সড়কে নামতেন তিনি। তার সাথে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার কথা চিন্তা করে রাখতেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাসেল নুরকে। 

সাভার ও আশুলিয়া জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা শতাধিক। সকল হত্যাকান্ডে ঘুরে ফিরে আসছে তৎকালীন ইউএনও রাহুল চন্দের নাম।  


তিনি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগামের বাসিন্দা ও ৩৫তম ব্যাচের বিসিএস রাহুল সর্বদা  ছাত্রলীগের নেতা  ছিলেন এমন পরিচয় দিতে স্বস্তি বোধ করতেন। সাভারে তার যোগদানের ঘটনাটি ছিল বেশ নাটকীয়। 


অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ পদোন্নতি পেয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলী হওয়ায় তার স্থলাভিসিক্ত হয়েছিলেন শেখ নুরুল আলম।


২০২৪ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সে সময়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাগুপ্তা হক স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ বদলী সংকান্ত্র আদেশ জারি করা হয়। এ আদেশের প্রেক্ষিতে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে শেখ নুরুল আলম কর্মস্থলে যোগদান করেন।


তার যোগদানের ৩ দিনের মাথায় ১৪ মার্চ  ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাগুপ্তা হক স্বাক্ষরিত পুনরায় এক বদলী সংক্রান্ত্র আদেশ জারি করেন। 


আদেশে বলা হয়, সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলমকে টাঙ্গাগাইল জেলায় মির্জাপুর উপজেলায় বদলী করা হয়। একই আদেশে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে রাহুল চন্দকে নিয়োগ প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অতপর সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন রাহুল চন্দ। এই ক্যারিসম্যাটিক বদলীর পেছনে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও তৎকালীন ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ সরাসরি কাজ করেছেন বলে জানা যায়। 


রাহুল চন্দ এর আগে বান্দরবন জেলার থানচিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে রেভিনিউ কালেক্টর হিসাবে ছিলেন কিছু দিন। পরে তিনি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনের একান্ত সচিব ছিলেন।


এ ছাড়া তার দায়িত্বকালে উন্নয়ন কাজের টেন্ডার ও কোটেশন কাজগুলো ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বেশ কৌশলে ভাগাভাগি করতেন। 


১৮ জুলাই ছাত্র জনতার আন্দোলনে শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন নিহত হন। পুলিশের সাঁজোয়া যানের (এপিসি) ওপর থেকে তাকে টেনে নির্মমভাবে নীচে ফেলে দেওয়া হয়। নেট দুনিয়ার কল্যাণে যা সারা বিশ্ববাসীর হৃদয়ে নাড়া দেয়। এ দিনও ঘটনাস্থলের পাশেই পুলিশের সাথে ইউএনও রাহুল চন্দকে দেখা গেছে। ২০ জুলাই সাভার বাসস্ট্যান্ডে রাজ্জাক কাঁচা বাজারে মুরগীর দোকানী প্রতিবন্ধী কুরবান শেখ ও পাশের দোকান কর্মচারি ফারুক হোসেন নিহত হন। ২১ জুলাই পুলিশ ও ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ৬ জন। 


এ দিন সাভার পৌর বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মীর বাসায় লুটতরাজ করা হয়। স্থানীয় দৈনিক ফুলকি অফিসেও এ দিন ভাংচুর ও লুটপাট করে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী। এ সকল প্রায় প্রতিটি অভিযানে এবং ছাত্র জনতার আন্দোলন ভুন্ডুল করতে রাহুল চন্দ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে সাভারে নিহত হন ৩০ ছাত্র জনতা। 


এদিন সকাল থেকে রাহুল চন্দকে পুলিশসহ অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে দেখা গেছে। সকল হত্যাকান্ডে ঘুরে ফিরে আসছে তৎকালীন ইউএনও রাহুল চন্দের নাম। সকল হত্যাকান্ডের সময়ে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাভার বাসস্ট্যান্ডে পাকিজা মোড়ে একাধিক হত্যাকান্ড ঘটেছে। এ রকম একটি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তার নামে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা রয়েছে। সাভার ডেইরী ফার্ম উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র আলিফ আহম্মেদ সিয়াম ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখী লং মার্চ কমসূচীতে অংশ নিতে যাওয়ার পথে সাভার বাসস্ট্যান্ডে পাকিজা মোড়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত সিয়ামকে হাসপাতালে ভতির পর ৮ আগস্ট তিনি মারা যান। এ ঘটনার সময় ইউএনও রাহুল চন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন। 


অভিযোগ রয়েছে, তার নির্দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশসহ নিয়োজিত অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনী ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লং মার্চের বিশাল মিছিলে নির্বিচারে এদিন গুলি বর্ষণ করে। এ ঘটনার ১০ মাস ১৪ দিন পর গত ২৪ জুন নিহতের বাবা বুলবুল কবীর বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন।


জামায়াতে ইসলামের ঢাকা জেলার রাজনৈতিক সেক্রেটারি ও সাভার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর হাসান মাহবুব মাস্টার জানান, জুলাই আন্দোলনকালে ২১ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা তার সাভার পৌর এলাকার ডগরমোড়ার বাসায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনার সময় সাবেক ইউএনও রাহুল চন্দ ঘটনাস্থলের কাছেই একটি গাড়িতে বসেছিলেন। একাধিক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে বসে থাকতে দেখেছেন। 


রাহুল চন্দ ওএসডি’র এ বিষয়ে আলাপকালে ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর খোরশেদ আলম বলেন, ইউএনও রাহুল চন্দ সাভারে সকল হত্যাকান্ডে জড়িত। আন্দোলনের দিনগুলোতে প্রতিদিন তিনি পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন।


সাভার পৌর বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও আহত জুলাই যোদ্ধা নাসির উদ্দিন উকিল বলেন, ফ্যাসিস্টদের শিরোমনি সাবেক ইউএনও রাহুল চন্দ ওএসডির খবর পেয়ে আমরা দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সাভার পৌর এলাকায় বিভিন্ন মহল্লায় মিষ্টি বিতরণ করেছি। তার যথাযথ শাস্তির দাবি জানান তিনি।


মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে ঢাকা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আমলে সাভারের ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ অনেক সরকারি কর্মকর্তা জড়িত। আইনের ফাঁক গলিয়ে তারা কেহ রেহাই পাবেন না। এ সকল মামলার দিকে তীক্ষè নজর রাখা হচ্ছে। 


তিনি বলেন, ইউএনও রাহুল চন্দ দাড়িয়ে থেকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন যার প্রমাণ রয়েছে। এ সব বিষয়ে জানতে বতমানে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলা থেকে ওএসডি হওয়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার রাহুল চন্দকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি বারবারই  ফোন কল কেটে দেন।

 

সর্বাধিক পঠিত