বুধবার, 9 জুলাই 2025
MENU
daily-fulki

উপসর্গ ডেঙ্গু, পরীক্ষায় নেগেটিভ দুশ্চিন্তায় জ্বরে আক্রান্তরা

হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার, মৃত্যু ৫১ ছাড়িয়েছে * ভাইরাল ফিভারে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না

চলতি মৌসুমে বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভাইরাল ফিভার, ডেঙ্গু, করোনাভাইরাস, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড ও ম্যালেরিয়া। তবে ডেঙ্গু ভাইরাসের জন্য দায়ী এডিস মশার উপদ্রব বাড়ায় কারও জ্বর হলে প্রথমেই ডেঙ্গু সন্দেহ করা হচ্ছে। উপসর্গ থাকায় পরীক্ষাও করাচ্ছেন রোগীদের অনেকে। পরীক্ষায় সবার ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে না। ল্যাবরেটরি টেস্টের রিপোর্ট ফলস নেগেটিভ হওয়ায় কী করবেন-তা নিয়ে রোগীরা দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। কেউ কেউ জ্বর চলে যাওয়ায় ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন। এতে হঠাৎ শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়ে বিপদে পড়ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, উপসর্গ থাকলে সঠিক সময়ে পরীক্ষা করাতে হবে। না হলে রোগটি শনাক্ত নাও হতে পারে। ওষুধও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

 

এদিকে সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (২৪ ঘণ্টায়) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু অর্ধশত (৫১ জন) ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২৫ জন। রোগীদের অর্ধেকই বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ১৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১২০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৮ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩৮ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫৫ জন, খুলনা বিভাগে ১৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৮ জন এবং সিলেট বিভাগে একজন ভর্তি হয়েছেন। গত এক দিনে ৩৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৮৬ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর কোনো রোগ নয়; এটি রোগের একটি উপসর্গ। জ্বর হওয়াকে কোনো রোগের সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে। সাধারণত ঠাণ্ডা বা সর্দি-কাশিতে বেশি জ্বর হয়। শরীরের ভেতরে কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ হলেও জ্বর হতে পারে। ডেঙ্গু, করোনাভাইরাস, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নিলে, ফোড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন, পিরিয়ডের কারণে, আকস্মিক ভয় বা মানসিক আঘাত পেলেও জ্বর হতে পারে। তবে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী ও দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্তদের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যথাসময়ে পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এএসএম মাহমুদুজ্জামান মঙ্গলবার বলেন, ডেঙ্গুজ্বর শুরুর প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে এনএস-১ পরীক্ষা করে অ্যান্টিজেন (ভাইরাস) শনাক্ত সম্ভব। ষষ্ঠদিন থেকে রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু হয়। অ্যান্টিবডি শরীরের অ্যান্টিজেন নষ্ট করে ফেলে। ফলে ষষ্ঠদিন থেকে অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে হবে। দশম দিন পর্যন্ত অ্যান্টিবডি এবং আইজিএম টেস্ট করানো যায়। এভাবে দশম দিনে আইজিজি টেস্ট করাতে হবে। টেস্টগুলো জ্বর থাকা বা না থাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কারণ ডেঙ্গুজ্বর থাকে ৪ থেকে ৫ দিন। পরীক্ষাগুলো সময় বুঝে করাতে না পারলে ফলাফল নেগেটিভ আসা স্বাভাবিক। ফলে যেদিনের পরীক্ষা সেদিনেই করানো উচিত।

তিনি আরও বলেন, সব জ্বরই ডেঙ্গু নয়। ডেঙ্গুজ্বরের সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, হাড় বা মাংসে ব্যথা বা শরীরে মারাত্মক ব্যথা, বমি ভাব বা বমি করা ও খাবারে অরুচি দেখা দেয়। অনেকের ভাইরাল ফিভারেও এসব উপসর্গ থাকতে পারে। ফলে পরীক্ষা করালেই ডেঙ্গু ধরা পড়বে বিষয়টা এমন নয়। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে রক্তের সিবিসি টেস্ট করে প্রথমে যে পরিবর্তনটা আসে সেটি হলো টোটাল কাউন্ট (টিসি) ডব্লিউবিসি কাউন্ট ৫ হাজারের নিচে নেমে যাওয়া। অন্যদিকে রক্তের প্লাটিলেট কমতে দুই থেকে তিন দিন সময় নেয়। জ্বরের প্রথম তিন দিন সাধারণ চিকিৎসা নিতে হবে। কোনো কারণে পরিস্থিতি খারাপ হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নিজে থেকে পরীক্ষা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আরেকটি বিষয় হলো-ডেঙ্গুর ভাইরাসের চারটি ধরন (ডেন-১ থেকে ডেন-৪)। এক বছর এক ধরনে আক্রান্ত হয়ে অন্য বছর আরেক ধরন হলে রোগীর জ্বর আসার পরেই শকে চলে যেতে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাবিবুল্লাহ বলেন, কোনো ভাইরাল ফিভারে চিকিৎসকের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার নিয়ম নেই। রোগী নিজে থেকেও অ্যান্টিবায়োটিক খাবে না। তবে জ্বরের ইতিহাস পাঁচ দিনের বেশি হয় তবে রক্তের সিবিসি টেস্ট করে টোটাল কাউন্ট ১১ হাজারের বেশি দেখলে ভাইরাল ইনফেকশনজনিত জ্বর হিসাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তখন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন। টাইফয়েড ও করোনাভাইরাসের সঙ্গে কো-ইনফেকশন হিসাবেও ডেঙ্গু হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক ক্লিনিক্যালি, ল্যাবরেটরি সাপোর্ট অথবা ব্ল্যাড কালচার করে শরীরে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন পেলে তবেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পরেন।

রোগতত্ত্ববিদরা বলেন, ডেঙ্গুর সতর্ক সংকেত হলো-তীব্র পেট ব্যাথা, ক্রমাগত বমি (দিনে তিনবার বা তার চেয়ে বেশি), দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত, চোখে রক্ত জমাট, রক্তবমি, কালো পায়খানা, শ্বাসকষ্ট বা পেটে ভারী বোধ করা, টেস্টে পিসিভি (হেমাটোক্রিট) বেড়ে যাওয়া ও রক্তের প্লাটিলেট দ্রুত কমতে থাকা। এগুলোর মধ্যে যে কোনো ২-৩টি লক্ষণ থাকলেই ডেঙ্গু সন্দেহ করতে হবে। লক্ষণগুলো থাকলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।


News Writer

SB

সর্বাধিক পঠিত