বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

শিশু নির্যাতন রোধে সমাজের দায়িত্ব

ফুলকি ডেস্ক : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহে পরিবারের শিশুদের পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়? অনেক সময় তারা শারীরিকভাবে জখমও হয়; প্রাণহানির ঘটনাও বিরল নয়। কিন্তু যেখানে পরিস্থিতি অতদূর গড়ায় না, সেখানে শিশুর মানসিক ক্ষত কেমন হয়? সেটা তো খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এই ক্ষত শিশুকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। তার স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়।

দাম্পত্য কলহ থেকে বিচ্ছেদের ঘটনাও দেশে কম নেই। নির্যাতনও ঘটে থাকে। নির্যাতিত ব্যক্তিরা লোকলজ্জার ভয়ে এসব ঘটনা আড়াল করে রাখে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। পরিবারের শিশুরা সমাজে সবার কাছে হেয় হয়ে বেঁচে থাকে। কখনও কখনও তাদের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ থাকে না। 
এ ছাড়া শিশুরা বাবা-মা, অন্য কোনো অভিভাবক যেমন দাদা-দাদি, মামা, খালা, ফুফু, চাচা-চাচি প্রতিবেশী, প্রতিষ্ঠানের মালিক, শিক্ষকের নির্যাতনের শিকার হয়। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক-মানসিক অত্যাচার, অবহেলা, দুর্ব্যবহার, এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে গত আট বছরে তিন হাজার ৪৩৮টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৩৯ জনের বয়স ছয় বছরের কম।

 

ইউনিসেফের তথ্যমতে, বিশ্বে ৩৭ কোটি নারী অর্থাৎ প্রতি আটজনে একজন ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
শিশুরা প্রতিরোধ করতে বা পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারে না। তাই তাদের নির্যাতন ও নিপীড়ন করা সহজ। নির্যাতকরা ভয়ও পায় না। কারণ অপরাধ করার পর শাস্তি হচ্ছে না। পারিবারিক সম্মান রক্ষায় অনেকে শিশু নির্যাতনের ঘটনা লুকিয়ে রাখে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনকারীরা শিশুর পরিচিত। নিকটাত্মীয়ের প্রতি যে বিশ্বাস থাকে, তা ব্যবহার করেই এ ধরনের কাজ করা হয়।

ধর্ষণের শিকার হয় ছেলেশিশুরাও। কারণ, আমাদের আইনে ছেলে শিশু ধর্ষণের ব্যাপারে অস্পষ্টতা রয়েছে বা কিছু বলা নেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, কেবল ২০২৪ সালেই ছেলেশিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৬টি; মামলা হয়েছে ২৪টি। ধর্ষণচেষ্টা হয়েছে তিনটি।
শিশু নির্যাতনের বিষয় কি শুধুই আইনের? কারণ আইনে কঠোর শাস্তির বিধান থাকা সত্ত্বেও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। আবার কোথাও কোনো একটি নৃশংস ঘটনা ঘটলে তার পরপর একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার প্রবণতা দেখা যায়। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও বিকৃত মানসিকতার কারণে অপরাধকারীরা নৃশংস ও নির্মম অপরাধের অনুকরণ করে অসুস্থ বিনোদনে মেতে উঠছে।
সাম্প্রতিক সময়ে শিশু নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনায় শিশুদের প্রতি নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণ প্রকাশ পেয়েছে।
আসলে সামাজিক দায়িত্বটাই মূল। প্রথমত দায়িত্ব পরিবারের। তাদের শিশুকে যথাযথভাবে লালন-পালন করতে হবে। তার প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে। একজন মানুষ আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অন্যকে সহমর্মিতা দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আছে সন্তান যে স্কুলে যাচ্ছে সেখানকার শিক্ষকদের একটি বড় দায়িত্ব তাকে ন্যায়পরায়ণতা, দায়িত্ববোধ, সততার শিক্ষা দেওয়ার। শুরুটা যেহেতু পরিবার থেকে করতে হবে; দাম্পত্য কলহ যেন শিশুর ওপর প্রভাব না ফেলে, সে জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

 

সর্বাধিক পঠিত