শনিবার, 16 আগস্ট 2025
MENU
daily-fulki

পিআর পদ্ধতির বিতর্কে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ


স্টাফ রিপোর্টার : সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। যা আলোচনার টেবিল থেকে ছড়িয়ে পড়ছে রাজপথে। যদিও অপ্রচলিত এই পদ্ধতির নির্বাচন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর। তারপরও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ সমমনা কয়েকটি দল। তারা সভা-সমাবেশে পিআর পদ্ধতির দাবিতে জোরালো বক্তব্যের পাশাপাশি জনমত গঠনে তৎপর। এজন্য ধারাবাহিক সভা- সমাবেশ এবং গোলটেবিল বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে ইতিমধ্যে।

সর্বশেষ বুধবার রাজধানীর বিজয়নগরে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। তবে এক ধাপ এগিয়ে ইসলামী আন্দোলন একই দিন সিইসি’র সঙ্গে দেখা করে এই ইস্যু নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার দাবি জানায়। একই সঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ‘গলায়  গামছা কোমরে রশি লাগতে পারে’ বলে মন্তব্য করেছে দলটি।

অপরদিকে বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো এই পদ্ধতির ঘোর বিরোধী। তারা বলছেন- আপাতত অপ্রচলিত এই পদ্ধতির নির্বাচনের সুযোগ নেই। কারণ ভোটাররা এই পদ্ধতির নির্বাচনের সঙ্গে পরিচিত নয়। এ অবস্থায় রাজনৈতিক টানাপড়েনের কবলে পড়ছে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন।  এনিয়ে চলছে নানামুখী গুঞ্জন। বাড়তি যোগ হয়েছে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না’ মন্তব্য।

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের  একটি সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষিত হয়েছে সম্প্রতি। তবে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষের বক্তব্য রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে জামায়াতের  সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ৫৩ বছর দেশে আসনভিত্তিক নির্বাচন হয়েছে, আমরা এবার দলভিত্তিক নির্বাচন চাই। এতে প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়ন হবে। তিনি বলেন, এত বছর ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতি চলে আসছে। বর্তমান সরকার সংস্কারের মাধ্যমে জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে ওয়াদাবদ্ধ। সরকারের সেই ওয়াদা পূরণ করতে হলে পিআর মানতে হবে। অন্যথায় দেশ তো অনিশ্চয়তার দিকে যাবেই। হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার নয়, শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত যেসব সুপারিশ অতি জরুরি, অন্তত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত, সেগুলোর সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গণহত্যার বিচার ছাড়া জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের পক্ষে নয়। তিনি আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়; এটি একটি বিপ্লব-পরবর্তী জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের সুযোগ। ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্যদিয়েই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।

প্রসঙ্গত, পিআরের পক্ষে জনমত গঠনে গত ২৮শে জুন রাজধানীর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন। সেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে তুলে ধরেন বিভিন্ন দলের নেতারা। সেদিন ডান ঘরানার ১০টি রাজনৈতিক দল একমঞ্চে উঠে পিআর পদ্ধতির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেছেন, এ পদ্ধতি না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। মূলত ওই দিন থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত। যদিও ওইদিনই বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলেছেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে পিছিয়ে দিয়ে জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে। তবে এই দাবির পক্ষের দলগুলো তাদের অবস্থানে অনড়। গত ১২ই জুলাই পিআর প্রায়োগিক প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে এবং দেশের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও অংশীজনদের মধ্যে বোঝাপড়া আরও নিবিড় করতে রাজধানীর একটি হোটেলে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করছে ইসলামী আন্দোলন। বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সমাজের নানা পেশার অংশীজনেরা সেই গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন।

জানা যায়, গত ১৩ই জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের ফলে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী নেপথ্যে থেকে ইসলামী দলগুলোকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে নিজেদের মধ্যে কয়েক দফায় আলোচনা করে অবশেষে ২৮শে জুন ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে এক মঞ্চে ওঠেন তারা। ওই মঞ্চ থেকে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন কথা বলেন বক্তারা। তবে ওইদিনই এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, তাদের উদ্দেশ্য আছে। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এদিকে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে গত  ১৯শে জুলাই রাজধানীর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী বিশাল শোডাউন করে। সেখানেও পিআর দাবি জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়।

পিআর নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মতো একটি গৌরবোজ্জ্বল গণ-অভ্যুত্থানের পরও আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তিনি বলেন, একটি চেতনাদীপ্ত রক্তস্নাত অভ্যুত্থানের পরে দেশের রাজনীতিতে এই সহিংসতার মূল কারণ অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আমাদের অবশ্যই শঙ্কিত হতে হয়। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুস্থ করতে এবং রাষ্ট্রপরিচালনায় দেশের সকল নাগরিকের মতামতের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে পিআর নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সুতরাং জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সরকারকে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

সর্বাধিক পঠিত