বৃহস্পতিবার, 14 আগস্ট 2025
MENU
daily-fulki

আগামী দিনে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সরকার গঠনের চাপ আছে বিএনপির ওপর


স্টাফ রিপোর্টার : আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোতে দুটি অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সংবিধান, রাষ্ট্র পরিচালনার সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় সনদের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এই অবস্থান দৃশ্যত বিরোধিতায় রূপ নিচ্ছে। যদিও বিএনপি, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে ভিন্ন কারণ। নির্বাচন নিয়ে বিরোধিতার পেছনে বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল হলেও আদতে আগামী দিনের সরকারে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণের আলোচনা উঠেছে।

বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুষ্ঠিত বৈঠকে একটি বিষয় আলোচনায় গুরুত্ব সহকারে ছিল।


সূত্র জানায়, মূলত এনসিপি ও জামায়াত চাইছে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করে আকাঙ্ক্ষিত সুযোগ তৈরি করে নিতে। বিশেষ করে সরকারের একটি পক্ষ থেকে আগামী দিনের সরকারে জামায়াত ও এনসিপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে বিএনপিকে। এর নেপথ্যে পশ্চিমা কোনও রাষ্ট্রের ভূমিকা রয়েছে কিনা, তা অবশ্য জানা যায়নি।


বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র এ প্রতিবেদককে জানান, আগামী দিনে জনগণের ভোটে বিএনপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে একটি সম্মিলিত জাতীয় সরকার গঠনের সম্ভাবনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে  দিয়েছেন তারেক রহমান। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে জামায়াত ও এনসিপিকে রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বলে দাবি করে দায়িত্বশীল সূত্র।

রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, মূলত জুলাই সনদের শুরুতেই উচ্চকক্ষ নির্বাচনে আনুপাতিক হারে করার অবস্থান থেকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল চাপ সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে উচ্চকক্ষ নির্বাচনে পিআর সিস্টেমের ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ায় বিএনপির পরবর্তী অবস্থান নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কয়েকটি দল।

এক্ষেত্রে এনসিপি, জামায়াতের নির্বাচন নিয়ে নানা হুমকিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির ভাষ্য, ‘বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন দেশ ও দেশের জনগণের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। এটাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোনও তৎপরতাই জাতীয় স্বার্থের বিরোধিতা। এ রকম অবস্থান নেওয়া ঠিক হবে না। কেউ অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইলে সেটাকে তো ফ্যাসিবাদের ইশারা বলে মনে করা হবে।’

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর মনে করেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংকট হচ্ছে নির্বাচনের পদ্ধতি কোনটা চালু হবে। অনেকে আনুপাতিক চেয়েছে। উচ্চকক্ষে অন্তত পিআর করতে অনেক রাজনৈতিক দল ঐকমত্য হয়েছে। আমরা চাই অন্তত এটা বাস্তবায়ন হোক। এটা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে ঘোষণা দেওয়া হোক—পিআর পদ্ধতিতে হবে। যতখানি মৌলিক বিষয়কে আইনি ভিত্তি দেওয়া যায়, জুলাই সনদে এটি জরুরি। এক্ষেত্রে কিন্তু জটিলতা বেশি থাকে না।’

‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না’, এনসিপির নেতা বা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর মন্তব্য বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি না’, বলেন নুরুল হক।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিরোধিতামূলক বক্তব্য মূলত রাজনৈতিক কৌশল। রাজনৈতিক স্ট্যান্ট, আলোচনায় থাকা, বিএনপিকে খানিকটা ম্যালাইন করা, বিএনপি সংস্কারে রাজি না, এগুলো আসলে রাজনৈতিক প্রচারণামূলক বক্তব্য। এসব বক্তব্যকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই।’

এনসিপির কিছু নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্য সিরিয়াস কিছু নয় বলেও মন্তব্য করেন সাইফুল হক।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘মানুষ এখন গুরুত্ব সহকারে এগুলো বিবেচনা করে না। মিডিয়া অনেক সময় ওভাররেটেড করছে এগুলো। মাঠে আন্দোলনের খবর কম, তাই গসিপ চলে আসে।’

বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী দিনের সরকারে জামায়াতকে যুক্ত করার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনীহা রয়েছে। তবে দলের কোনও সিনিয়র নেতা এ বিষয়ে উদ্ধৃত হতে রাজি হননি। পাশাপাশি এনসিপিকে রাখার বিষয়ে আন্তরিকতা রয়েছে বিএনপির শীর্ষ মহলের।

এ বিষয়ে জামায়াতের প্রভাবশালী একজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

গণতন্ত্র মঞ্চের সূত্র জানায়, আগামী দিনের সরকারে বামপন্থি দলগুলো অংশ হতে চায় না। বিশেষ করে যারা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত ছিল, তারা আগামী দিনে বিরোধীদলীয় ভূমিকায় নামতে চায়।

সাইফুল হক অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। তিনি উল্লেখ করেন, এখনও তো নির্বাচনি কোনও উদ্যোগ আসেনি। উপরন্তু, বিএনপির পক্ষ থেকে সবার একটি সরকারের কথা বলা হয়েছে ইতোমধ্যে। ফলে এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করার সুযোগ আসেনি, সময়ও হয়নি।

বিএনপির সূত্র জানায়, আগামী দিনে জামায়াত ও এনসিপিকে সরকারে রাখতে বিএনপির ওপর চাপ রয়েছে। অপরদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে—রিফর্ম হবে কিনা, এ নিয়ে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নির্বাচনি করে তোলার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করে সূত্রটি।

ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির তরফেও রিফর্ম করার ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি জাপার নতুন অংশের নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদও প্রকাশ্যে বলেছেন, তারা পরিবর্তন চান। দলটির সদ্য সাবেক মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু ক্ষমা চেয়েছেন।

বিএনপির সূত্র মনে করে, আওয়ামী লীগ কী রূপে রিফর্ম করবে, তা আওয়ামী লীগের নেতারাই ঠিক করবেন। সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে ফিরলে বিরোধিতা অনেকাংশে কমে আসবে বলে ধারণা করছে সূত্রটি।

যদিও এনসিপি, জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোর একটি অংশের নেতারা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিষিদ্ধের পক্ষে। কোনও কোনও সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে বাইরে রাখার বিষয়ে ঐকমত্যও হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে নানা পক্ষের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী  বলেন, ‘কোনও দলের জন্য নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচন হচ্ছে দেশের জনগণের জন্য, কোনও ব্যক্তির জন্য না, গণতন্ত্রের জন্য।’

সাবেক এই মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে দেশের মালিকানা দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। সে জন্য এত বছর মানুষ সংগ্রাম করেছে। নির্বাচন কোনও দলের জন্য হচ্ছে না, ব্যক্তির জন্য হচ্ছে না, গোষ্ঠীর জন্যও হচ্ছে না।’

 

সর্বাধিক পঠিত