বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

১১ বছর পেরিয়ে গেলেও দগদগে ব্রাজিলের সেই ক্ষত

হেক্সা জয়ের বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। তবে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে স্বাগতিকরা আটকে যায় সেমিতেই। সেবার বেলো হরিজেন্তের মিনেইরো স্টেডিয়াম সেমিফাইনালে জার্মানি গুণে গুণে ৭ বার বল ঢুকিয়েছিল ব্রাজিলের জালে। যা ফুটবল সমর্থকদের কাছে ‘সেভেন আপ’ নামে পরিচিত। ৮ জুলাই ২০১৪, এই তারিখটা দগদগে ক্ষত হয়ে থাকবে ব্রাজিলের ফুটবলে। সেই ম্যাচের ১১ বছর পূর্তি হল আজ। প্রতি বছর এ দিনটা এলেই দগদগে হয়ে ভেসে ওঠে ভয়াবহ সে স্মৃতি। ৭ শব্দটাই একটা ট্রমাতে পরিণত হয় ব্রাজিলের জন্য।

সেদিনের সেই ম্যাচের আগে ব্রাজিলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডির নাম ছিল মারাকানাজো। ১৯৫০ সালের সেই বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে শুধু ড্র হলেই চলত ব্রাজিলের। এমন উপলক্ষ্যে দুই লাখ দর্শক হাজির হয়েছিলেন মাঠে। কিন্তু উৎসবের সেই ম্যাচ বিষাদে পরিণত হয় উরুগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের ২-১ গোলের হারে। লাখো জনতার স্রোতে থেমে যায় সাম্বার উৎসব। ওই ট্রাজেডির ৬৪ বছর পর মিনেইরো স্টেডিয়ামের সেই বিপর্যয়ের পর থেকেই তুলনা চলে, মারাকানাজো নাকি মিনেইরাজো- বিপর্যয়ের মাত্রা বেশি কোনটিতে।

বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল, কিন্তু ব্রাজিলিয়ানরাও জানেন এই ইতিহাস আর পাল্টানো যাবে না। যতবার বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়বে ততোবার ঘুরে ফিরে আসবে ওই গল্প। সেই দিনের হারার যন্ত্রণাময় মুহূর্ত নিশ্চয়ই এখনও বেশ মনে লেগে আছে বহু সেলেসাও সমর্থকের হৃদয়ে। মিনেইরাজোর সেই ট্রমা ব্রাজিলের প্রাণভোমরা নেইমারও ভুলতে পারেননি।

ব্রাজিলের সে সময়ের তারকা স্ট্রাইকার ফ্রেডের বাড়ি ছিল হরিজেন্তেই। জার্মানির কাছে ওমন বিধ্বস্ত হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আমি একটা গর্তে লুকিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। যেখান থেকে আর কখনোই ফিরে আসতে হবে না।’

সেলেসাওদের তখনকার কোচ ছিলেন ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক লুইস ফিলিপ স্কলারি। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আমি সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।’ ম্যাচ শেষে কাঁদতে কাঁদতে জাতির উদ্দেশে ক্ষমাও চেয়েছিলেন অধিনায়ক ডেভিড লুইজ।

ব্রাজিলিয়ান দৈনিক গ্লোবো ম্যাচটার স্মৃতি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিল তখনকার জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। তাদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে এখনও ম্যাচের স্মৃতি তরতাজা জোয়াকিমের, ‘ঘরের মাঠে সেমিফাইনাল খেলাটা সবসময় চাপের। ব্রাজিলও সেই চাপে ছিল। আমি সেই বিশ্বকাপের কথা প্রতিদিনই স্মরণ করি, কারণ এটা বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল। ব্রাজিলের মতো ঐতিহ্যবাহী দেশে বিশ্বকাপ জেতাটা বিশেষ কিছু।’

মারাকানায় ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারানো নিয়ে জোয়াকিম বলেন, ‘ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীত বাজার পর থেকে দর্শকরা আবেগী হয়ে পড়েছিল। প্রথম কয়েক মিনিট ব্রাজিলই ভালো খেলেছে। কিন্তু প্রথম ১০ মিনিটে গোল পেয়ে গেলাম আমরা (১১ মিনিটে করেছিলেন মুলার)। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।’

সেই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেন জার্মানির ক্লোসা, মুলার, ক্রুস এবং ওজিল। সবাই মিলে গোল উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। জার্মানির সেই বিজয়ী দলের খেলোয়াড় ম্যাটস হামেলস পরে জানিয়েছিলেন, তারা ইচ্ছা করেই বিরতির পর আর কোনো জাদুকরি খেলা খেলতে চাননি। তারা শুধু চেয়েছিলেন ম্যাচটি শেষ করতে। ম্যাটস হামেলস বলেন, আমরা শুধু চেয়েছি খেলায় মনোযোগী থাকতে। খেলার মধ্যে সেলেসাওদের কোনোভাবেই অপমান করতে চাইনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, খেলার মধ্যে সিরিয়াস থাকতে হবে। তবে ব্রাজিলকে অপমান করা হয়, এমন কিছু থেকে বিরত থাকব। খেলার মধ্যে জয়-পরাজয় থাকবেই। তবে প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখাতে হবে। আমরা সে কাজ করেছি। দ্বিতীয়ার্ধের পর আমরা কোনো জাদুকরি খেলা দেখাইনি।

যদিও পরবর্তীতে ম্যাটস হামেলসের এমন কথা উড়িয়ে দিয়েছেন জার্মান কোচ জোয়াকিম। তার কথায়, ‘এটা বাজে কথা। বরং আমি মনে করিয়ে দিয়েছিলাম বাছাইপর্বে সুইডেনের কাছে শুরুতে ৪ গোল দিয়ে শেষ ৩০ মিনিট ৪ গোল হজম করার কথা। ফুটবলে যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। তবে খারাপ লাগছিল ব্রাজিলের জন্য। কারণ এর আগে ঘরের মাঠে ২০০৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এভাবে বাদ পড়ার বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদেরও। নিজেদের দলের জন্য গর্ব হলেও ব্রাজিলের জন্য খারাপ লাগছিল আমার।’

সেই হারের ১১ বছর পরও বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেনি ব্রাজিল। গত কোপা আমেরিকায়ও সেলেসাওরা ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। তবু কোয়ার্টারেই থামতে হয়েছে তাদের। উরুগুয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র করার পর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরে আসর থেকেই বিদায় নেয় দরিভাল জুনিয়রের দল।

 

 

সর্বাধিক পঠিত