ফুলকি ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বর্ধিত কমিটি ও হল কমিটি প্রকাশের পর বিতর্কিতদের অপসারণ ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ত্যাগীদের মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে শাখা ছাত্রদলের একাংশ বিক্ষোভ করেছে। এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করায় ১৩ নেতাকে শোকজ দিয়েছে ছাত্রদল। তবে কমিটিতে থাকা হত্যা মামলার আসামি, সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্বপদে বহাল আছেন।
ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার শাখা ছাত্রদলের ৩৭০ সদস্য বিশিষ্ট বর্ধিত কমিটি ও ১৭টি হল ও একটি অনুষদসহ ৮৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হত্যা মামলার ৩ পলাতক আসামি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন সময় মাদক ও ছিনতাইয়ের কারণে বহিষ্কার হওয়া বিতর্কিত অনেকেই স্থান পেয়েছেন কমিটিতে।
ওই দিন রাতে ছাত্রদলের হল কমিটি থেকে বিতর্কিতদের অপসারণ ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ত্যাগীদের মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে শাখা ছাত্রদলের একাংশ বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ১৩ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল রোববার বিকেলে ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শোকজপ্রাপ্তরা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, মো. হোসাইন আল রাসেদ বাদল, মমিনুর রহমান লাজু, আলাউদ্দিন দেওয়ান, রাজুয়ার হোসাইন, মো. জোবায়ের হোসাইন, মাহবুবুর রহমান মুরাদ এবং সদস্য জাকিরুল ইসলাম, সাদিকুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, মির্জা আবু বকর সিদ্দিক সোহাগ, মাসুদ রানা পাইলট মিন্টু ও আবেশ আল মুবিন নাফি।
শোকজপ্রাপ্ত একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, হল কমিটিতে যাদেরকে রাখা হয়েছে এরা বেশিরভাগই আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের লোক। তাদের বলয়কে শক্তিশালী করার জন্য এই দুইজন ত্যাগীদের কমিটিতে রাখেননি। কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি, ছাত্রলীগ এমনকি ছিনতাইকারী রাখা হয়েছে, যা আমাদের সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমরা এই কথাগুলো কেন্দ্রকে জানাব। এত বড় অন্যায় আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করবে আর আমরা প্রতিবাদ করবো না, তা হয় না।
কমিটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লা হত্যার মামলার তিনজন পলাতক আসামি পদ পেয়েছেন। ওই ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় তাদের ছয় মাসের জন্য বহিষ্কারও করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শামীম মোল্লা হত্যার ঘটনার পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল— অভিযুক্তরা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবুও মামলার ৮ আসামির মধ্যে হামিদুল্লাহ সালমান, রাজু আহমেদ ও মোহাম্মদ রাজন মিয়া নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে হামিদুল্লাহ সালমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সভাপতি ও বর্ধিত কমিটির সদস্য, রাজু আহমেদ বর্ধিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মোহাম্মদ রাজন মিয়া আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছেন।
মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে৷ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান বাপ্পী জানান, এ মামলায় এখন পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। গ্রেপ্তাররা হলেন জাবি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান রায়হান (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪) এবং সাইফুল ইসলাম ভুইয়া (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। এছাড়া আতিক নামে আরও একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বাকিরা এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
যাদের বিরুদ্ধে হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং যারা পলাতক—যাদের ব্যাপারে ঘটনার পর ছাত্রদল নিজেই জানিয়েছিল যে তারা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। তাদের পদপ্রাপ্তি বিষয়ে জানতে চাইলে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, তিনজনের দীর্ঘদিনের ত্যাগ, শ্রম ও মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।