স্টাফ রিপোর্টার : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে সব কেনাকাটার প্রস্তুতি শেষ করেছে ইসি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে পারে ৫, ৮ কিংবা ১২ ফেব্রুয়ারি। এই তিনটি তারিখকে চূড়ান্ত করে ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই তারিখগুলোর যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়ার বিষয়ে কমিশন সভায় আলোচনা করা হবে। কমিশন চাইলে ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারিকেও বেছে নিতে পারে। তবে ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা ৫, ৮ ও ১২ ফেব্রুয়ারিকে উপযুক্ত মনে করে কমিশন সভায় উপস্থাপন করবেন।
তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময়
গত ১২টি নির্বাচনের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে সর্বনিম্ন ৩৭ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৬৮ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই যদি এবারের ভোটগ্রহণ ৫ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হয়, তাহলে তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ হতে পারে ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বরে মধ্যে।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়েছে, নভেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ অন্যান্য প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব হবে। তাই ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দেওয়া হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রস্তাবিত তারিখ
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা ভোটের সম্ভাব্য পাঁচটি তারিখের বিষয়ে কমিশনকে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন। এই পাঁচটি তারিখ হলো ৫, ৮, ১০, ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি।
এই তারিখগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের ১২টি সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিনকে কিছুটা আমলে নেওয়া হয়েছে। বিগত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে ৪টি হয়েছে রোববার, ৪টি বুধবার, ২টি মঙ্গলবার ও ২টি বৃহস্পতিবারে। শুক্র, শনি ও সোমবারে কোনো ভোট হয়নি। আগামী বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার, ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি বুধবার এবং ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। এই তারিখগুলোর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারকে ভোটগ্রহণের জন্য আপাতত সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে ইসিতে। এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার মতামতও নাকি ৫ ফেব্রুয়ারির পক্ষে আছে, জানিয়েছে ইসি সূত্র।
এক প্রশ্নে ইসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের পর রোজার আগে অন্তত ১০ দিন সময় হাতে রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন। কারণ, ভোটের দিন অনিয়ম, মারামারি বা হানাহানির কারণে যেসব কেন্দ্রে বা আসনে ভোট বন্ধ অথবা স্থগিত করা হবে, সেসব কেন্দ্র বা আসনে এক সপ্তাহের মধ্যে ভোট শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। সেটা যেন রমজানে গিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে চায় কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের পর যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পাবে তাদের সরকার গঠন করতেও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। সেটাও যেন রমজানের আগে সম্ভব হয় সে সুযোগও রাখতে চায় ইসি।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবে আগামী বছর পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে ১৯ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন কমিশন যদি ১০ দিন হাতে রাখতে চায় তাহলে ৮-৯ তারিখের মধ্যে ভোট নিতে হবে। এদিকে শবে বরাতের সম্ভাব্য তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি। সরকার অন্তত এর আগে নির্বাচন দেবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই শবেবরাতের পর থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের (১৫ তারিখ) মধ্যেই ভোট দিতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি ৫ তারিখ বৃহস্পতিবার শবে বরাতের বন্ধ পড়ে যায় তাহলে এর পরের সপ্তাহের যেকোনো দিন (৮-১২ ফেব্রুয়ারি) ভোট নিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন রোজার আগে ভোট হবে। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হবে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যেই ভোট হবে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
এদিকে, শনিবার রংপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সচিব আখতার আহমেদ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কী বলেছেন, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আগামীকাল রোববার সিইসির সাথে আলোচনা করলে হয়তো জানতে পারব। আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
১২টি সংসদ নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত চিত্র
দেশে এর আগে ১২টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৬ বার, বিএনপি ৪ বার ও জাতীয় পার্টি ২ বার জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ প্রথম, সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে; বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়। সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দ্বাদশ সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। তবে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ তাদের মেয়াদকাল পূরণ করেছে।
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভোট
জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি (৮৭%) ভোট পড়েছিল। অন্যদিকে, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে কম (২৬.৫%) ভোট পড়ে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেন। এই গণঅভ্যুত্থানের ফলে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকার দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, সংস্কারমূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রথম সংসদ নির্বাচন
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন দেশে সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন পেয়ে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ১৪টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়। বিরোধীদের মধ্যে জাতীয় লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন করে এবং স্বতন্ত্র পাঁচজন প্রার্থী বিজয়ী হন। এ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৫.৬১ শতাংশ। এ সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর ছয় মাস।
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫১.২৯ শতাংশ। এতে বিএনপি ২০৭টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। অন্য দলগুলো পায় ৭৭টি আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯টি, জাতীয় লীগ দুটি, আওয়ামী লীগ (মিজান) দুটি, জাসদ আটটি, মুসলিম ও ডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি, ন্যাপ একটি, বাংলাদেশ গণফ্রন্ট দুটি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল একটি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল একটি ও জাতীয় একতা পার্টি একটি আসন হয়। নির্বাচিত বাকি ১৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ সংসদের মেয়াদ ছিল তিন বছর।
তৃতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন পেয়ে জয় লাভ করে। ভোটের হার ছিল ৬৬.৩১ শতাংশ। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করে। অংশ নেয় মোট ২৮টি রাজনৈতিক দল। জাতীয় পার্টি বাদে অন্য দলগুলো পায় ১১৫ আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ৭৬টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) পাঁচটি, ন্যাপ (মোজাফফর) দুটি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পাঁচটি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) তিনটি, জাসদ (রব) চারটি, জাসদ (সিরাজ) তিনটি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ১০টি, মুসলিম লীগ চারটি ও ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি আসন পায়। বাকি ৩২ আসনে নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ সংসদের মেয়াদ ছিল ১৭ মাস।
চতুর্থ সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫১.৮১ শতাংশ। জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসন পেয়ে জয় লাভ করে। নির্বাচনে আটটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ১৯টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেন সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ)। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ২৫টি, জাসদ (সিরাজ) তিনটি ও ফ্রিডম পার্টি দুটি আসন লাভ করে। এ সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর সাত মাস।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। এ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৫.৪৫ শতাংশ। এ নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসন পেয়ে জয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) পাঁচটি, জাসদ (সিরাজ) একটি, ইসলামী ঐক্যজোট একটি, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, সিপিবি পাঁচটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) একটি, গণতন্ত্রী পার্টি একটি ও ন্যাপ (মোজাফফর) একটি আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনটি আসনে জয় লাভ করেন। সংসদের মেয়াদ ছিল চার বছর আট মাস।
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ অনেকগুলো দল বর্জন করে। ৪১টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপি ২৭৮টি আসন পেয়ে জয় লাভ করে। এর মধ্যে ৪৯টি আসনে বিএনপি প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টি একটি আসন পায়। বাকি ১০ আসনে জয় লাভ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ ছাড়া ১০টি আসনে ফলাফল অসমাপ্ত ছিল এবং একটি আসনের নির্বাচন আদালতের আদেশে স্থগিত করা হয়। এ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ২৬.৫৪ শতাংশ। এ সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।
সপ্তম সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয় লাভ করে। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৪.৯৬ শতাংশ। এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৮১ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। অন্য দলগুলোর মধ্যে বিএনপি ১১৬টি, জাতীয় পার্টি ৩২টি, জামায়াতে ইসলামী তিনটি, ইসলামী ঐক্যজোট একটি ও জাসদ একটি আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় লাভ করেন একটি আসনে। সংসদের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর।
অষ্টম সংসদ নির্বাচন
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। ৫৪টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপি বাদে অন্য দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬২টি, জামায়াতে ইসলামী ১৭টি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১৪টি, জাতীয় পার্টি (না-ফি) চারটি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) একটি, ইসলামিক ঐক্যজোট দুটি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ একটি আসন পায়। বাকি ছয় আসনে জয়লাভ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সংসদের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৫.৫৯ শতাংশ।
নবম সংসদ নির্বাচন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এটি সর্বশেষ ভোট। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়ে জয় লাভ করে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এটি প্রথম ভোট। এতে ৩৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর মধ্যে বিএনপি ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি, জাসদ তিনটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) একটি, জামায়াতে ইসলামী দুটি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) একটি আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয় চার আসনে। নির্বাচনে ভোট পড়ে ৮৭.১৩ শতাংশ।
দশম সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো। ফলে ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করে। এ নির্বাচনে মোট ১২টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আওয়ামী লীগ একাই ২৩৪টি আসন পায়। জাতীয় পার্টি ৩৪টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬টি, জাসদ (ইনু) ৫টি, তরীকত ফেডারেশন ২টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২টি, বিএনএফ ১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসনে জয়লাভ করে। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪০.০৪ শতাংশ।
একাদশ সংসদ নির্বাচন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩৯টি নিবন্ধিত দলের সবাই অংশ নেয়। মোট প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৮৬৫ জন। এ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০.২০ শতাংশ। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৮টি আসন পায়। জাতীয় পার্টি ২২টি এবং মহাজোটভুক্ত অন্য দলগুলো ৮টি আসনে জয়ী হয়। অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত বিএনপি ৬টি, গণফোরাম ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে জয়ী হন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে দেশের ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল অংশ নিয়েছে। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ ১৬টি নিবন্ধিত দল।