স্টাফ রিপোর্টার : গতবছরের জুন শেষে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ৪২টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র প্রায় ৫ শতাংশ। ওই অর্থবছরে (২০২৩-২৪) টাকার অংকে জিডিপি’র মোট পরিমাণ ছিল ৫০ লাখ ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আর্থিক ঝুঁকি (লাভজনকতা, তারল্য ও ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা) বিবেচনায় সম্প্রতি ১০১টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাকে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে শ্রেণিবিন্যাস করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ। শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী- ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ক্যাটাগরিতে ১৪টি, ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ক্যাটাগরিতে ২৮টি, ‘মাঝারি’ ক্যাটাগরিতে ৩৭টি, ‘কম ঝুঁকিপূর্ণ’ ক্যাটাগরিতে ২০টি এবং ‘অত্যন্ত কম ঝুঁকিপূর্ণ’ ক্যাটাগরিতে মাত্র দু’টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
অর্থ বিভাগ বলছে, ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ১৪টি প্রতিষ্ঠনের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বড় ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে ক্যাটাগরিভিত্তিক কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়নি অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে।
অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, ২০২৪ সালের জুন শেষে চিহ্নিত ১০১টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে চলতি দায়ের পরিমাণ ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা (মোট ঋণের ৩৯ শতাংশ), সাবসিডিয়ারি ঋণ চুক্তির আওতায় নেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা (মোট ঋণের ২৬ শতাংশ); ঋণ চুক্তির আওতায় নেওয়া হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা (মোট ঋণের ১৬ শতাংশ) এবং অবশিষ্ট ১ লাখ ২১ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা (মোট ঋণের ১৯ শতাংশ) অন্যান্য ঋণ।
অর্থ বিভাগ বলছে, মোট ঋণের ৪২ শতাংশ হচ্ছে সরকারের বিনিয়োগকৃত ঋণ বা ইক্যুইটি। টাকার অংেক এর পরিমাণ ২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ঋণ এসেছে দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ হিসেবে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো যদি নিজেরা পরিচালনায় ব্যর্থ হয় বা মূলধন হারায়, তাহলে সরকারকে পুনঃমূলধন যোগান বা পুনর্অর্থায়নের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হতে পারে, যা সরকারের জন্য সম্ভাব্য একটি আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করত পারে।
অর্থ বিভাগ বলছে, গত ২০২৪ সালের জুন শেষে ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ১৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা এবং ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ২৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৫৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। দুই ক্যাটাগরির ৪২টি প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৪০ হাজার ১২৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
সংস্থাটির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো সরকারের জন্য মাঝারি মাত্রার আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। সার্বিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের আর্থিক অবস্থার ওপর তিনভাবে প্রভাব ফেলে। প্রথমত, সরকার যদি এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের জন্য গ্যারান্টি দেয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারের তা পুনর্ভরণসহ আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। এটি ঘটতে পারে- যদি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যায় কিংবা তাদের প্রকল্পগুলো আশানুরূপ উৎপাদনশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি না হলেও যদি ক্রমাগত লোকসান করে, তাহলে তাদের সচল রাখতে সরকারকে বাড়তি পুঁজির যোগান দিতে হতে পারে। তৃতীয়ত, যদি এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত মুনাফা না করতে পারে- তাহলে সেটিও সরকারের রাজস্ব আয়ের চাপ বাড়াতে পারে।
এদিকে বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪ সালে জুন শেষে সরকারের কাছে ১৪২টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট দায় (ডিএসএল) দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এছাড়া এই সময়ে ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৬৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রাষ্ট্রায়ত্ত ১২টি প্রতিষ্ঠান মোট ১৯ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
বাজেট উপাত্তে দেখা যায়, চলতি ২০২৫ সালের জুন শেষে ৫৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার দেশি-বিদেশি গৃহীত ঋণের বিপরীতে সরকারের সাবভৌম গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২ কোটি টাকা। তবে গ্যারান্টির আওতায় গৃহীত ঋণ খেলাপি হয়নি বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ।