বুধবার, 6 আগস্ট 2025
MENU
daily-fulki

সাভারে ৫ আগষ্ট বিজয় মিছিলে নির্বিচারে গুলি বর্ষন ৩০ জনকে হত্যা


স্টাফ রিপোর্টার :  দেশ থেকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা গত বছর ৫ আগষ্ট দুপুরে পালিয়ে দিল্লী যাওয়ার পর  পুলিশ ও তার দোসর ফ্যাসিবাদ আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা সাভারে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।  বিজয় মিছিলে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামীলীগের গুলিতে অন্তত : ৩০ জন শাহাদাত বরন করেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় দু’শতাধিক।  ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্মিত ও হতবাক হয়ে পড়েন সাভার বাসী। বিক্ষুব্ধ জনতা এ সময় সাভার থানা অভিমুখে রওয়ানা হলে থানা রোডে মুক্তি মোড়ে পুলিশ বন্দুক তাক করে হ্যান্ড মাইকে ছাত্র জনতাকে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়। অপ্রতিরোধ্য ছাত্র জনতা তখন পিছু না হটে লাঠি সোঠা হাতে সামনে এগুতে থাকে। তারা গত কয়েক দিনে আটককৃতদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ জানায়। 

এক পর্যায়ে পুলিশ উপুর্যপুরি গুলি ছুড়ে তাদের ছত্র ভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কিছুটা পিছু হটে থানার মোড়ে গিয়ে অস্ত্র মাটিতে রাখেন এবং দুই হাত উচু করে আত্ম সমর্পণ করে। কিন্ত স্বজন হারানো মানুষ তাদের ক্ষমা করতে রাজী হননি। ছাত্র জনতা বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। এভাবেই বেলা ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রথমে মুক্তির মোড় পরে থানার মোড়ে শত শত মানুষ সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে। পুলিশের গুলিতে ততক্ষনে ২০/২২জন শহীদ হন। উপয়ান্ত না দেখে সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে পুলিশ,র‌্যাব,বিজিবি,আনসারসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীগন গুলি করতে করতে সাভার ক্যান্টনমেন্ট অভিমুখে পালাতে থাকে। তখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে অকাতরে রক্ত ঝড়িয়ে শহীদ হন আরও ১০/১২জন। সর্ব মোট ৫ আগষ্ট কমপক্ষে ৩০ জন শহীদ হন। বছর পেরিয়ে গেলেও ঘাতকদের বিচার শুরু হয়নি। জুলাই আন্দোলনে ৫ আগষ্ট শহীদদের আজও ভুলতে পারেনি তাদের পরিবার। স্বজন হারা মানুষেরা নির্মম নিষ্ঠুর প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেছেন। 


২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার একটি মিছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের সামন থেকে শিক্ষকদের নেতৃত্বে ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ টু ঢাকা কেন্দ্রিয় কর্মসূচীতে পদ যাত্রায় রওয়ানা হয়। এ পদযাত্রায় সাভার আশুলিয়া এবং ধামরাইয়ের লাখো মানুষ সামিল হন। মিছিলসহ পদযাত্রাটি সাভার বাসষ্ট্যান্ডের নিকট ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফি,সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুর রহমান,সাভার মডেল থানার ওসি শাহ জামান আশুলিয়া থানার ওসি এএফএম সায়েদ এর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের বাধার সম্মুখীন হয়। দুপুর ১২ টা নাগাদ সাভার বাসষ্ট্যান্ডে পুলিশ মিছিলে গুলি বর্ষন করে এবং কিছু সময়ের জন্য মিছিলটি ছত্র ভঙ্গ করে দেয়।  এক পর্যায়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ অধিক সংখ্যায় একত্রিত হয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেয়া জন সাধারনের ওপর আগ্নেয়ান্ত্র নিয়ে বেপরওয়া গুলি চালায়। 

এ সময় সাভার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় শহীদ হন কুমিল্লা বিশ্ব বিদ্যালয়ের মাষ্টার্সের ছাত্র আবদুল কাইউম,কলেজ ছাত্রী নাফিসা হোসাইন মারওয়াসহ ৩জন। একই সময় আওয়ামী সন্ত্রাসী,পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সাভার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ব্যাপক গুলি বর্ষন করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ছাত্র জনতা পূনরায় সংগঠিত হয়ে পাকিজা মোড় ও সাভার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেয়। দুপুর গড়িয়ে যেতে না যেতেই খবর আসে হাসিনা দিল্লীতে পালিয়ে গেছে। এ সময় লাখো মানুষ পাকিজা মোড়,সাভার বাসষ্ট্যান্ড,থানা বাসষ্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মানুষ চারিদিক থেকে স্রোতের মতো ভেসে এসে এনাম মেডিকেল কলেজের সামনে দিয়ে সাভার থানার দিকে ছুটতে থাকে। বিপদ আঁচ করতে পেরে পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা মুক্তির মোড়ে যুদ্ধাং দেহী মনোভাবে অবস্থান নেয়। ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের একটি অংশ যারা যারা রাজপথে ছাত্র জনতার মুখোমুখী হয়েছিলেন তারাসহ বিভিন্ন পদ পদবীর নেতৃস্থানীয়গন গলি পথ ধরে সাভার থানায় আশ্রয় নেয়। বেলা ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রথমে মুক্তির মোড় পরে থানার মোড়ে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে ততক্ষনে ২০/২২জন শহীদ হন। এ সময় বেশ কিছু পুলিশ সদস্য সাভার থানা সংলগ্ন বংশাই নদীর তীরে পোশাক রেখে সাতরে ধামরাইয়ের ফুড নগর হয়ে পালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে থানার চারপাশ ছাত্র জনতা ঘেরাও করে রাখে। উপয়ান্ত না দেখে সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে পুলিশ,র‌্যাব,বিজিবি,আনসারসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীগন গুলি করতে করতে সাভার ক্যান্টনমেন্ট অভিমুখে পালাতে থাকে। গাড়ী বহরের পাশাপাশি অনেকে পায়ে হেটে ক্যান্টনমেন্ট পৌছে যান। ঢাকা আরিচা মহাসড়ক ধরে ক্যান্টনমেন্ট অভিমুখে যেতে যেতে তারা শত শত রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। 

এ সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দলটি সাভার থানা রোড ও সাভার বাসষ্ট্যান্ডে ছাত্র জনতার প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। তাদের এলোপাথারি গুলিতে আরও ১০/১১জন মৃত্যুবরন করে। সব মিলিয়ে এ দিন অন্তত: ৩০ ছাত্র জনতা শহীদ হন। আহত হন কমপক্ষে ২’শ জন। তাদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরন করেছেন। দেশের জন্য তারা বুক চিতিয়ে দিয়েছেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে অকাতরে রক্ত ঝড়িয়ে নাম লিখিয়েছেন শহীদের তালিকায়। হতাহত পরিবারের সদস্যরা হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার দাবি করেছেন। তারা প্রতিটি হত্যাকান্ডে দোষীদের ফাঁসির দাবি করেছেন।

সর্বাধিক পঠিত