সোমবার, 4 আগস্ট 2025
MENU
daily-fulki

একের পর এক উধাও হচ্ছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি

ফুলকি ডেস্ক : অনলাইনে উড়োজাহাজের টিকিট বুকিং খাতে বারবার জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। গ্রাহক ও এজেন্সির কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হচ্ছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ)। সর্বশেষ গত শনিবার হুট করে বন্ধ হয়ে গেছে টিকিট বুকিংয়ে দেশের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’। এতে বিপাকে পড়েছেন হাজারো গ্রাহক ও টিকিট বিক্রেতা এজেন্সি।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকিট বুকিং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ‘অবাস্তব’ অফার দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। পরবর্তী সময়ে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করে ভেগে যায়। এসব ঘটনায় মামলা হলে দুয়েকজন গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু জালিয়াতি বন্ধ হয় না। কারণ, এই খাত নিয়ন্ত্রণে কোনো নীতিমালা নেই। সরকার শুধু লাইসেন্স দিয়েই দায় শেষ করে। 

 

ফ্লাইট এক্সপার্টের জালিয়াতি

২০১৭ সালে চালুর পর কম খরচে টিকিট বিক্রির কারণে দ্রুততম সময়ে বাজার দখল করে নেয় ফ্লাইট এক্সপার্ট। শনিবার হুট করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেশ ছাড়েন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সালমান বিন রাশিদ শাহ সাঈম। এ ঘটনায় রাতেই রাজধানীর মতিঝিল থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক বিপুল সরকার। পরে প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন– ফ্লাইট এক্সপার্টের হেড অব ফিন্যান্স সাকিব হোসেন, চিফ অপারেটিং অফিসার এ কে এম সাদাত হোসেন ও চিফ কমার্শিয়াল অফিসার সাঈদ আহমেদ।

মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন বলেন, মামলার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুই আসামি হলেন– সালমান বিন রাশিদ শাহ সাঈম ও তাঁর বাবা এম এ রাশিদ।

পুলিশ জানায়, বিক্রেতা এজেন্সিসহ বহু গ্রাহক অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের জন্য ফ্লাইট এক্সপার্টে অর্থ পরিশোধ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত এমন ১৭টি ভুক্তভোগী এজেন্সির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।

উধাও হয়েছে আরও কয়েক কোম্পানি

ওটিএ প্রতিষ্ঠানের এমন জালিয়াতি নতুন নয়। এর আগেও একাধিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করে উধাও হয়েছে। ২০২০ সালে ‘হালট্রিপ’ নামে একটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি হুট করে বন্ধ হয়ে যায়। এর চেয়ারম্যান ছিলেন আলোচিত ব্যবসায়ী পি কে হালদার। হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে গ্রাহকদের টাকার কোনো সুরাহা না করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। 

২০২১ সালে বন্ধ হয় ‘২৪ টিকিট ডটকম’ নামের আরেকটি ওটিএ। উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রির নামে গ্রাহক ও ৬৭টি এজেন্টের চার কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয় প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আব্দুর রাজ্জাকসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করে সিআইডি। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। 

২০২৩ সালে ‘লেটস ফ্লাই’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৩৮টি ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল রামপুরা থানা পুলিশ। 

নেই নীতিমালা-তদারকি

দীর্ঘদিন ধরেই ওটিএ পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন বা বিধিমালা প্রণয়নের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। রোববার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ওটিএর প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া লোভনীয় প্যাকেজ ও অধিক মূল্য ছাড়ের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য ট্রাভেল এজেন্সি ও সাধারণ যাত্রীদের সতর্ক করে ছিল তারা।

আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, ‘আমরা এয়ারলাইন্সগুলো থেকে ৭ শতাংশ কমিশনে টিকিট পাই। সেখানে ওটিএগুলো ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে টিকিট বিক্রি করে। এসব অনিয়ম বন্ধের জন্য সরকার ও এয়ারলাইন্সগুলোকে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।’

ওটিএ ব্যবসায় জালিয়াতির ঘটনা বাংলাদেশের বিমান ও পর্যটনে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা দেখছেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এভাবে হুট করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে যাত্রীয় ও গ্রাহকদের আস্থার সংকট তৈরি হবে।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. সাফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্লাইট এক্সপার্টের বিষয়ে আমরা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আয়াটা) কাছে জানতে চেয়েছি।’

এ বিষয়ে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন অনুবিভাগের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব এ কে এম মনিরুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য মেলেনি।

সর্বাধিক পঠিত