ধামরাই প্রতিনিধি : ধামরাইয়ে সাড়ে সাত বছর পর মনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির লাশ (হাড়গোড়) ময়না তদন্তের জন্য উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু লাশ দাফনের স্থানটি শনাক্ত করতে না পারায় উত্তোলন না করে ফিরে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বনেরচর গ্রামের কবরস্থান থেকে লাশ তুলতে যান ধামরাইয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাফফাত আরা সাইদ। তবে সেখানে বাদি ছাড়া নিহতের ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। নিহত মনোয়ার হোসেন ওই এলাকার মৃত আঃ গফুরের ছেলে। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডে চাকরি করতেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাফফাত আরা সাইদ বলেন, লাশ দাফনের স্থান দেখাতে না পারার বিষয়টি মামলার বাদি ও তার ভাই লিখিত দিয়েছেন। বিষয়টি আদালতকে জানানো হবে। আদালতের সিদ্ধান্তে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
নিহতের স্বজন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে সাত বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মনোয়ার হোসেন ২০১৮ সনের ৩ ফেব্রয়ারি মারা যান। ওইদিন নিহতের ছেলে হাফেজ রবিউল ইসলাম স্থানীয় মসজিদের মাঠে তার বাবার জানাজা পড়ান। পরে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিহতের ছেলে রবিউল ইসলাম বলেন, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে আমার বাবা ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রয়ারী মারা গেছেন। আমরা কোন মামলা করেনি। মামলা করেছে আমার ফুফু আসমা আক্তার। আমরা লাশ উত্তোলনের পক্ষেও নই।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের ঘটনায় তাকে নিহত দেখিয়ে মামলা করেন তাঁর বোন জেসমিন সুলতানা ওরফে আসমা আক্তার। ভাইকে নিহতের দাবি করে ওই এলাকার তিনজন পুলিশ সদস্য, ইটভাটার মালিকসহ ধনাঢ্য ৫২ ব্যক্তির নামে ধামরাই আমলি আদালতে মামলা করেন তিনি (আসমা আক্তার)। এই মামলায় বাদির সাবেক স্বামী আওলাদ হোসেন ও স্বামীর সাতজন আত্মীয়-স্বজনকেও আসামি করা হয়। মামলা নম্বর-৬১৫/২৪। আদালতের নির্দেশে গত বছরের ২১ অক্টোবর ধামরাই থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করে। অভিযোগটি আদালতে দাখিল করার পরেই একটি চক্র মামলা থেকে আসামি বাদ দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে গত ৩ জানুয়ারী একটি দৈনিকের প্রথম পাতায় ‘বাণিজ্যের লোভে মামলা ফাঁদ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ধামরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের সময় প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে মনোয়ার হোসেনের মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন তিনি। পরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে ধামরাইয়ের ইসলামপুরে মুন্নু সিরামিক কারখানায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিও করেন। কারখানার প্রধান কার্যালয়ের তথ্যমতে মনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের ১১ দিনের বেতন উত্তোলন করেছেন। এরপর থেকে তিনি আর চাকরি করেননি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধামরাই থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক নাইবুল ইসলাম বলেন, মনোয়ার হোসেন কবে, কখন ও কিভাবে মারা গেছেন তা নিশ্চিত হতে ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোনের আবেদন করা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্বে লাশটি উত্তোলন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাদি লাশ দাফনের স্থান শনাক্ত করতে পারেনি। তিনি জানান, বাদি ও তার ভাই ছাড়া নিহতের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।