স্টাফ রিপোর্টার, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) : মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে অজ্ঞাতনামা এক নারী (৪০) রাস্তার মধ্যে পিতৃপরিচয়হীন সন্তান প্রসব করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতককে রেখে পালিয়ে যায় মা। ঘটনাটি সুবার্তা ট্রাস্ট নামের একটি বেসরকারি মানব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক সেলিনা আক্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে গত ১০ আগস্ট মানিকগঞ্জের সিংগাইর প্রেসক্লাবকে নিশ্চিত করেন।
সুবার্তা ট্রাস্ট জানায়, মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে ওই নারী গত ২ আগস্ট দুপুরের দিকে ঢাকার ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের বহুতকূল গ্রামের জোড়া ব্রিজে খোলা পরিবেশে এক পুত্র সন্তান প্রসব করে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় তানভীর পাশা তার সহযোগীদের নিয়ে ৯৯৯ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতায় মা ও নবজাতককে বিকেল সোয়া ৪ টারদিকে পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এ সময় সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগকে অবগত করলে তিনি বেসরকারি প্রবীণ সেবা সংস্থা সুবার্তা ট্রাস্টের সহযোগিতা চান। এতে সংস্থাটি আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তাদের নার্স ফারহানা আক্তার হীরাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠান। শিশুটির কম ওজন ও জন্ম জটিলতায় কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ঢাকা শিশু হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে সুবার্তা ট্রাস্টের নার্স ফারহানা শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স করে রাত ৮ টারদিকে ঢাকাস্থ শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং সংস্থাটি তাদের যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ওই দিন রাত ১১ টারদিকে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে নবজাতককে রাখা হয় হাসপাতালের ৩ নং শিশু ওয়ার্ডের ২৩ নং বেডে।
এদিকে, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে সুবার্তা কেয়ার সেন্টারে এনে তার পরিচর্যা সম্পন্ন করে রাত সোয়া ১২ টারদিকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশু ওয়ার্ডের বাইরে অভিভাবকদের অবস্থানরত জায়গায় ওই নবজাতকের মা কে শুইয়ে রাখা হয়। হাসপাতাল থেকে ভোর সাড়ে ৬ টার আগেই ওই নারী পালিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে গত ৪ আগস্ট সুবার্তা ট্রাস্টের পক্ষ থেকে শেরে বাংলানগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। যার নম্বর-২৬০।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সুবার্তা ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে নবজাতক শিশু হাসপাতালের এনআইসিইউ’র ৪নং বেডে চিকিৎসাধীন আছে। শিশুটির চিকিৎসা কাজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করছে বলে সুবার্তা ট্রাস্টের ম্যানেজার (প্রশাসন ও মানব সম্পদ) সঞ্জয় কুমার দাস মঙ্গলবার (১২ আগষ্ট) দুপুরে জানিয়েছেন ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখা, তারপর তার মাকে খোঁজে পিতৃ পরিচয় বের করা। তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে,দেশে শিশু আইন থাকলেও নিরাপদ প্রসব আইন পাচ্ছি না।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, সুবার্তা ট্রাস্ট ও হাসপাতাল সমাজ সেবা শিশুটির চিকিৎসায় আর্থিক সাপোর্ট দিচ্ছে। এ ছাড়া শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও যাতে কিছু ছাড় দেয় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা সবাই চাই বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে উঠুক, বেঁচে থাক।