তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিএফপি’র মিডিয়া তালিকাভুক্ত ঢাকা জেলার একমাত্র স্থানীয় পত্রিকা

মানবতাবিরোধী অপরাধ: ১৪ বছরে মৃত্যুদণ্ড ১০৬, কার্যকর ৬

- Advertisement -

স্টাফ রিপোর্টার : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ১৪ বছরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫৫টি মামলার রায় দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল বিভিন্ন মামলায় ১০৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও সাজা কার্যকর হয়েছে মাত্র ছয়জনের। বর্তমানে বিচারকাজ চলছে ৩০টির। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় তদন্তাধীন রয়েছে ২০টি অভিযোগ।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সর্বোচ্চ আদালতে (আপিল বিভাগ) নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৫৩টি আপিল। একটি রিভিউ বিচারাধীন রয়েছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও আইনজীবীরা বলছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সাড়ে আট বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা অপর ট্রাইব্যুনালটি পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সরকার যদি মনে করে বিচার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ট্রাইব্যুনাল অপ্রতুল, তাহলে আরেকটি বাড়ানো যেতে পারে। আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করা উচিত। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। শুরুতে একটি ট্রাইব্যুনাল থাকলেও ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়। মামলা কমে যাওয়ায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রাইব্যুনাল-২ নিষ্ক্রিয় করা হয়।

গত ১৪ বছরে দেওয়া ৫৫টি রায়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে এসেছে ৪৪টি এবং ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে এসেছে ১১টি। এসব মামলায় আসামি ১৬৯ জন। তাঁদের ১৮ জন রায়ের আগেই মারা যান। রায়ে মৃত্যুদণ্ড হয় ১০৬ জনের। তাঁদের ৫০ জনই পলাতক। আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া ২৫ জনের মধ্যে ১২ জন পলাতক। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ১২ জনের। বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড হয় ৬ জনের। রায়ে খালাস পান দুজন। এর মধ্যে একজন ঘটনার সময়ে শিশু বিবেচনায় খালাস পান। আপিল নিষ্পত্তির আগেই মারা গেছেন ৯০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম।

ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর এ পর্যন্ত ৯টি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। আপিল-রিভিউ নিষ্পত্তির পর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ছয় আসামির। তাঁরা হলেন জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দলটির নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আমৃত্যু কারাদণ্ড হওয়া জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গত বছরের আগস্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

বর্তমানে ৫৩টি আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। আপিল নিষ্পত্তির পর রিভিউ বিচারাধীন রয়েছে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের। জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার রিভিউ নিষ্পত্তির আগেই ২০২২ সালে মারা গেছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করাসহ চার দফা দাবিতে গত ৩০ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের কাছে স্মারকলিপি দেয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটিরের দায়িত্বে থাকা সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল, তা সফল হয়েছে। বিচারপ্রার্থীরা বিচার পেয়েছেন। বর্তমানে যে পরিমাণ মামলা বিচারাধীন আছে, তাতে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন।’

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৪ মার্চ পর্যন্ত ১৪ বছরে সংস্থায় সারা দেশ থেকে ৪ হাজার ২৮৩ জনের বিরুদ্ধে ৮৩৩টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ৮৯টির তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্ত চলছে ২০টি অভিযোগের। তদন্তের অপেক্ষায় রয়েছে ৪৯৬টি অভিযোগ। এগুলোতে অভিযোগ আছে ৩ হাজার ৩৬৩ জনের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে না পড়ায় ১৬১টি অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে। ১২টি অভিযোগ ফেরত দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সানাউল হক বলেন, ‘যে প্রত্যাশা নিয়ে শুরু করেছিলাম তার বেশির ভাগই পূরণ হয়েছে। কিছু অপ্রাপ্তি আছে। যেমন অনেকে বিচার শেষ হওয়ার আগেই মারা গেছে। আপিল বিভাগে থাকা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, বড় অপরাধীদের বিচার হয়ে গেছে। এখন ছোটদের হচ্ছে।

- Advertisement -

এ বিভাগের আরও সংবাদ