তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিএফপি’র মিডিয়া তালিকাভুক্ত ঢাকা জেলার একমাত্র স্থানীয় পত্রিকা

বাতাস বিশুদ্ধ করবে স্পিরুলিনা, জোগাবে মানুষের সব পুষ্টি উপাদান

- Advertisement -

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানী ঢাকায় ক্রমাগত বায়ুদূষণ বাড়ছে। দিন যত যাচ্ছে ততই, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠছে। দিনের শুরুতে পত্রিকা খুললেই প্রায়ই দেখা যায় দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান শীর্ষে অথবা প্রথম পাঁচের মধ্যে।

ঢাকার আশপাশে নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরের বাতাসেরও একই অবস্থা। মারাত্মক দূষিত বায়ু নগরবাসীর শরীরে নিয়মিত প্রবেশ করায় তাদের গড় আয়ু কমছে সাত থেকে আট বছর। এদিকে অত্যধিক জনসংখ্যার চাপ ও আবাসন সংকটের কারণে ক্রমাগত ছোট হয়ে যাচ্ছে শহরের রুমগুলো। পাশাপাশি গা-ঘেঁষে বিল্ডিং তৈরি হওয়ায় রুমে প্রাকৃতিক বাতাসের স্বাভাবিক চলাচল কমছে ক্রমাগত। অতিমাত্রার দূষিত বায়ু থেকে স্বস্তি এবং রুমে স্বাভাবিক অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে নগরবাসী ঝুঁকছে ইনডোর প্ল্যান্টের দিকে।

গবেষণায় দেখা যায়, ইনডোর প্ল্যান্ট ক্ষতিকারক পদার্থ যেমন কার্বন মনোক্সাইড, ফর্মালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইডসহ আরও অনেক কিছু দূর করে। এগুলো মূলত মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অসুস্থতা ও অ্যালার্জির কারণ হিসেবে পরিচিত। ঘরে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট যুক্ত করা হলে বাতাসের গুণমান বাড়ে এবং বাতাস আরও পরিষ্কার হয়।

বাতাস বিশুদ্ধ করবে স্পিরুলিনা, জোগাবে মানুষের সব পুষ্টি উপাদান

নগরবাসীর ইনডোর প্ল্যান্টের চাহিদা ও স্বস্তির বাতাস পেতে একই সঙ্গে পুষ্টিসমৃদ্ধ সুপার ফুড পেতে আবদ্ধ স্থানে স্পিরুনিলা চাষের মডেল তৈরি করছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আবুল ফয়েজ জামাল উদ্দিন ও তার গবেষক দল। মডেলটির নাম দিয়েছেন তিনি ‘লিকিউড প্ল্যান্ট’।

অধ্যাপক জামাল বলেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়ছে। বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমাদের ঘরে ফ্রিজ, এসি, ওভেন চুলা ব্যবহারে এবং শহরের বায়ুদূষণের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে চলছে। আমরা যখন বদ্ধ ঘরে থাকি তখন আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অস্বস্তি বাড়ে এবং ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে কীভাবে বায়ুদূষণ কমানো যায়, সেদিকে আমাদের অনেকেরই লক্ষ্য রয়েছে। সেই লক্ষ্যে আমরা একটা মডেল তৈরি করেছি, যে কীভাবে ঘরের বাতাসকে পরিষ্কার করবো।

‘আমরা শেকৃবিতে দীর্ঘদিন ধরে স্পিরুলিনা নিয়ে গবেষণা করছি। স্পিরুলিনা হচ্ছে সুপার ফুড। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যতগুলো পুষ্টি উপাদান দরকার, সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সঠিক অনুপাতে আছে স্পিরুনিলাতে। স্পিরুলিনা তৈরিতে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড লাগে। এটি কার্বন ডাই অক্সাইডকে অক্সিজেনে রূপান্তর করে পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়।’

বাতাস বিশুদ্ধ করবে স্পিরুলিনা, জোগাবে মানুষের সব পুষ্টি উপাদান

তিনি আরও বলেন, আমরা স্পিরুলিনা এয়ার পিউরিফায়ারে ঘরের বাতাস, তথা কার্বন ডাই অক্সাইডকে স্পিরুনিলার খাবার এবং শক্তির উৎস হিসেবে সূর্যের আলোর পরিবর্তে এলইডি লাইট ব্যবহার করেছি। কার্বন ডাই অক্সাইড অক্সিজেনে রূপান্তর হয়ে পাশের পকেট দিয়ে বেরিয়ে আসে, যার তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। এখানে একটি ছোট আকারের কাচের পাত্রের মধ্যে এক লিটার পরিমাণ পানি ও স্পিরুনিলা থাকলে ২০টা ইনডোর প্লান্টের সমান কার্বন ডাই অক্সাইড খায়। এতে বেশ পরিমাণ স্পিরুলিনা তৈরি করা যায় যা ১৫ দিন পরপর খাওয়ার জন্য উত্তোলন করা যায়। ফলে স্পিরুলিনা এয়ার পিউরিফায়ারে মাধ্যমে একই সঙ্গে অল্পস্থানে বায়ু পরিষ্কার এবং আমাদের শরীরের জন্য সুপার ফুড পাওয়া সম্ভব।

অধ্যাপক জামাল আরও যোগ করেন, স্পিরুলিনা অন্যান্য গাছের মতোই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড খেয়ে ফেলে এবং অক্সিজেন দেয়। পানির মধ্যে হয় বলে আমরা এটিকে তরল গাছ বলছি। যেটি ঘরের মধ্যেই চাষ করে একই সঙ্গে কার্বনের মাত্রা কমিয়ে অক্সিজেন বৃদ্ধি করবে এবং সুপার ফুড হিসেবে স্পিরুলিনা পাওয়া সম্ভব। সার্বিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাস্তার পাশে বসার স্থানে, অফিসের করিডোরে বড় বড় কাচের পাত্রে স্পিরুলিনা চাষ হচ্ছে। স্পিরুলিনা যদি আমরা ঘরের ভেতর চাষ করি, তবে ঘরের কার্বন ডাই অক্সাইড অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারি। যা শরীরের সুস্থতার জন্য ভূমিকা রাখতে পারে।

- Advertisement -

এ বিভাগের আরও সংবাদ