তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিএফপি’র মিডিয়া তালিকাভুক্ত ঢাকা জেলার একমাত্র স্থানীয় পত্রিকা

অর্থনীতিতে শক্তি জোগাচ্ছে পোশাক খাত

- Advertisement -

স্টাফ রিপোর্টার : ডলার সংকট ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের কদর বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ এখন ডেনিম পোশাক রফতানির শীর্ষ দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ কারণে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা নতুন নতুন কারখানা স্থাপন করে চলেছেন। এর মধ্যে ২০৬টি সবুজ কারখানা নিয়ে সমগ্র বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।

এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই পোশাক খাতের হাত ধরেই অর্থনীতি আজ একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল। এই ছয় বছরে দেশে ৬০৩টি নতুন কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সদস্য পদ পেয়েছে ৫৬৫টি কারখানা; যার অর্ধেকই হয়েছে গত দুই বছরে, অর্থাৎ ২০২২ ও ২০২৩ সালে।

২০২৩ সালে ১৩৪টি নতুন তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপন করেছেন উদ্যোক্তারা। এই বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগই নতুন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীও রয়েছেন, যারা নিজেদের ব্যবসার পরিসর আরও বাড়াতে চান। এ বছরের মধ্যেই এসব কারখানার বেশির ভাগই উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারণ, বিশ্বের বড় যেসব ক্রেতা চীনের বাজার থেকে সরে এসেছেন, তারা এখন বাংলাদেশের প্রতি ঝুঁকছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক কারণেও অনেক ক্রেতা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছেন।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, নানামুখী সমস্যার মধ্যেও পোশাক খাত টিকে থাকার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। টিকে থাকতে পোশাকে বৈচিত্র্য আনতে হচ্ছে। নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হচ্ছে। সবুজ কারখানার দিকে যেতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে যেসব কারখানা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, তারা সবাই পোশাকশিল্পে নতুন নয়। বিদ্যমান ইউনিটগুলোর একটি অংশ ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে।

তিনি বলেন, গত দুই বছরে বেক্সিমকো গ্রুপ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কারখানার সদস্য পদ পেয়েছে। এ ছাড়া শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন, এমন পেশাজীবীরাও উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
রফতানি বাড়াতে বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরির জন্য সদস্যদের আধুনিক প্রযুক্তির কারখানায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার রফতানির ভিশন নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০২২ ও ২০২৩ সালে ২৭৮টি কারখানা বিজিএমইএর স্থায়ী সদস্য হয়েছে এবং ৩১৬টি কারখানা অস্থায়ী সদস্য পদ পেয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে বিজিএমইএতে সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৬০০-এর কাছাকাছি।
এখন পর্যন্ত এ খাতের ২০৬টি কারখানা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) সার্টিফিকেশন অর্জন করে বিশ্বব্যাপী সবুজ শিল্পের নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ। এই সবুজ কারখানাগুলোর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে গত পাঁচ বছরে। এ সময়ে ১২৯টি কারখানা এলইইডি সনদ পেয়েছে।
এদিকে পোশাক কারখানার সঙ্গে তৈরি পোশাক রফতানিও বাড়ছে। ছয় বছরে তৈরি পোশাক রফতানি প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সার্বিকভাবে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত ছয় বছরের প্রতিবছরই পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সক্ষমতাও বাড়ছে। এই খাতে মুনাফা আছে বলেই নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের ভাষ্য, করোনার সময় একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় পোশাক রফতানি বড় ধরনের হুমকির মধ্যে পড়ে। তখন তারা ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও নতুন নতুন কারখানা গড়ে উঠেছে।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, করোনার আগে ২০১৮ সালে নতুন কারখানা স্থাপন হয় ৬১টি। ২০১৯ সালে নতুন কারখানা স্থাপন হয়েছে ৮১টি। করোনার বছরে ২০২০ সালে নতুন কারখানা হয়েছিল ৫৮টি। পরের বছর ২০২১ সালে নতুন কারখানা স্থাপন হয়েছে ৮৬টি। এ ছাড়া ২০২২ নতুন কারখানা স্থাপন করা হয়েছে ১৮২টি এবং ২০২৩ সালে নতুন কারখানা হয়েছে ১৩৪টি।

ডেনিম বাজারে শীর্ষে বাংলাদেশ
২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ ডেনিম রফতানিকারক দেশ। এই অঞ্চলে প্রতি তিন জনের এক জন বাংলাদেশের উৎপাদিত ডেনিম প্যান্ট পরেন। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডেনিম খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। আর ডেনিম পোশাক তৈরির জন্য দেশে ৪২টি আধুনিক কারখানা গড়েছেন তারা। এসব কারখানা থেকে প্রতিবছর ৯০ কোটি মিটারের বেশি ডেনিম কাপড় উৎপাদন সম্ভব।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় এক দশক আগে ১২টি কারখানায় ডেনিম উৎপাদনে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল আট হাজার কোটি টাকা। তবে গত কয়েক বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম সরবরাহে বাংলাদেশ প্রতিবেশী চীনকে ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে ৭০ কোটি ডলারের ডেনিম রফতানির লক্ষ্য নিয়ে হবিগঞ্জে দুটি কারখানার জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

বিটিএমএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, গত ১০ বছরে বেশির ভাগ কারখানা প্রতিষ্ঠিত হলেও আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদার কারণে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হচ্ছে। বর্তমানে ডেনিম খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে বলে জানান তিনি।
এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ডেনিম জিনস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেনিম উৎপাদন ১২ শতাংশের বেশি বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তারা।

পোশাক রফতানি যুক্তরাষ্ট্রে কমলেও বেড়েছে যুক্তরাজ্যে
এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রফতানি ১১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। তবে স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস এবং পোল্যান্ডে আমাদের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ২ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৯ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। ইতালিতে পোশাক রফতানি ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমেছে। জার্মানিতে উল্লেখিত সময়ে রফতানি ২০২২-২৩ জুলাই-ডিসেম্বরের তুলনায় ১৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তৈরি পোশাক রফতানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যথাক্রমে ৪ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন এবং ৭৪১ দশমিক ৯৪ মিলিয়নে মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে যুক্তরাজ্যে রফতানি যথাক্রমে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ ২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে, অপ্রচলিত বাজারে আমাদের পোশাক রফতানি ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৪ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রফতানি যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে ভারতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে।

 

- Advertisement -

এ বিভাগের আরও সংবাদ