জাবি প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্ষণের ঘটনার পর অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ছাত্রলীগের শীর্ষনেতাদের নির্দেশনায় একটি আবাসিক হলে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঘটনার পর মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে পালিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের এক ছাত্রলীগ নেতার কক্ষে যান মোস্তাফিজ। সেখানে ভোর ৬টা পর্যন্ত অবস্থান করেন তিনি। পরিস্থিতি উত্তাল হতে শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষনেতাদের নির্দেশে কয়েকজন নেতাকর্মী মোস্তাফিজকে ক্যাম্পাস থেকে সাভারে নিয়ে যান।
রবিবার সকালে মোস্তাফিজকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এর আগে, শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সাভার মডেল থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাত ২টার দিকে ধর্ষণে অভিযুক্তদের পালাতে সহায়তার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে সাভার থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্বামীসহ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নেন বহিরাগত মামুন নামে এক ব্যক্তি। তার স্বামীকে মীর মশাররফ হোসেন হলের “এ” ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রেখে পাশের জঙ্গলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে মামুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী।
এদিকে, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর মোস্তাফিজুর পালিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে যান। সেখানে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে ভোর পর্যন্ত অবস্থান করেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে সোমবার দুপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে গিয়ে ওই রাতের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার অনুরোধ জানায়। তবে হল প্রশাসন জানায়, ফুটেজ নেই। হল প্রশাসনের দাবি, কারিগরি ত্রুটির কারণে চার দিন সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ ছিল।
এ ব্যাপারে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, “আমি ছুটিতে ছিলাম। হল ওয়ার্ডেন প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। কারিগরি ত্রুটির কারণে ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করেনি। পরবর্তীতে আবার ক্যামেরা ঠিক করেছি।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “রবিবার ভোরে সোহেল (ছাত্রলীগ সভাপতি) আমাকে জানায় মোস্তাফিজুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে চায়। আমি তাকে বলি, মোস্তাফিজ আত্মসমর্পণ করুক, আর না করুক পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করবে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের এক প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী জানান, মোস্তাফিজকে হলে রাত দেড়টার পরে দেখেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি বলেন, “আমরা শুনেছি মোস্তাফিজ ধর্ষণের ঘটনার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে গিয়েছিল। পরে ছাত্রলীগ সভাপতির নির্দেশে সে আত্মসমর্পণ করে।”
তবে মোস্তাফিজুর নিজে থেকেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে- ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল শুরুতে এমনটি দাবি করলেও পরে এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “ওইদিন আমি ঢাকায় ছিলাম। রাত ১টার পরে ক্যাম্পাসে আসি।”