স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিপাহ রোগ সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
সোমবার জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, নিপাহ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, সিডিসি অপারেশনাল প্ল্যানের জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম দেশব্যাপি বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, নিপাহ একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ। সাধারণত শীতকালে নিপাহ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কাঁচা খেজুরের রসে বাদুড়ের বিষ্ঠা বা লালা মিশ্রিত হয় এবং ওই বিষ্ঠা বা লালাতে নিপাহ ভাইরাসের জীবানু থাকে। ফলে খেজুরের কাঁচা রস পান করলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং আক্রান্ত হলে অধিকাংশই মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমান সময়ে বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরেরা নিপাহ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। দেশব্যাপী জনসাধারণকে নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে অবহিত করা হলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
নির্দেশনায় বলা হয়, সারাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিপাহ রোগ সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে রোগটির সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম কর্তৃক সরবরাহকৃত নিপাহ রোগ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য বার্তা সম্পর্কে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র/ছাত্রীদের মধ্যে আলোচনা করা এবং এতদ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা/অধ্যক্ষগণকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কিত জরুরী স্বাস্থ্য বার্তায় বলা হয়, নিপাহ একটি ভাইরাসজনিত মারাত্বক প্রাণঘাতী রেগ। বাংলাদেশে শীতকালে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয় এবং সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত নিপাহ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কাঁচা খেজুরের রসে বাদুড়ের বিষ্ঠা বা লালা মিশ্রিত হয় এবং ওই বিষ্ঠা বা লালাতে নিপাহ ভাইরাসের জীবাণু থাকে। ফলে খেজুরের কাঁচা রস পান করলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমান সময়ে বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরেরা নিপাহ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। খেজুরের কাঁচা রস সংগ্রাহ, বিক্রয় ও বিতরণের সাথে সংশ্লিষ্ট গাছীগণকে, শিক্ষার্থী এবং জনসাধারণকে প্রাণিব্যহিত সংক্রামক ব্যাধি নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে অবহিত করা হলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি। ২০০১-২৩ সালে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ৩৩৯ জন রোগীর মধ্যে ২৪০ জনই মৃত্যুবরণ করেন। ২০২৩ সালে দেশে এ রোগে আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই মৃত্যুবরণ করেন। তাই প্রতিরোধই হচ্ছে এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। খেজুরের রস কোন অবস্থাতেই খাওয়া যাবে না। খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় খেতে কোন বাধা নেই।
নিপাহ রোগের প্রধান লক্ষণ সমূহ:
১. প্রচণ্ড জ্বরসহ মাথা ব্যখ্য, পেশিতে ব্যথা;
২. খিঁচুনি;
৩. প্রলাপ বকা;
৪. অজ্ঞান হওয়া;
৫. কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হওয়া।
নিপাহ রোগ প্রতিরোধে করণীয়:
১. কোন অবস্থাতেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না;
২. কোন ধরনের আংশিক খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না;
৩. ফল-মূল পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে খেতে হবে;
৪. নিপাহ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে অতি দ্রুত নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে;
৫. আক্রন্ত রোগীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে এবং প্রয়োজনে রোগীর পরিচর্যা করার পর সাবান ও পানি দিয়েভালোভাবে হাত ধুতে হবে;
৬. রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে;
৭. রোগীর সেবা করার সময় মুখে কাপড়ের মাদ, হাতে গ্লাভস পরে নিতে হবে;
৮. যেহেতু নিপাহ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের প্রায় ৫ থেকে ১৪ দিন পর রোগের লক্ষন প্রকাশিত হয়, তাই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নিকট সময়ে সেই এলাকায় যারা খেজুরের রস খেয়েছেন, তাদের সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।