তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিএফপি’র মিডিয়া তালিকাভুক্ত ঢাকা জেলার একমাত্র স্থানীয় পত্রিকা

মেজর সিনহা হত্যার রায় ঘোষণার ১ সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর চায় এক্স-ফোর্সেস

- Advertisement -

স্টাফ রিপোর্টার : মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া আসামিদের মৃত্যুদণ্ড (ডেথ রেফারেন্স) উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।একই সঙ্গে রায় ঘোষণার ১ সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে তারা।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সদস্য সচিব লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ বলেন, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান।এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) তদন্ত শেষে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

তিনি বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড ছাড়াও স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে, প্রদীপ কুমার দাশ তার কর্মকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টেকনাফে এক ভয়ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি তথাকথিত ‘ক্রসফায়ারে’ অন্তত ১৪৫ জনকে হত্যা করেছেন ও ক্রসফায়ার বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন। এমনকি ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় এক নারীর জমি দখলের চেষ্টা করায় তিনি বরখাস্তও হয়েছিলেন।’

সাইফুল্লাহ বলেন, ‘এসপি মাসুদের মতো অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাসহ কালো টাকার মালিকরা শত বাধা দেওয়া সত্ত্বেও প্রায় ১৮ মাসব্যাপী বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল মামলার রায় দেন।রায়ে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন এবং সাতজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে বাংলাদেশের আইন ও বিচারপ্রাপ্তির ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বর্তমানে এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি হাইকোর্টের বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে চলমান রয়েছে।’

সাইফুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা প্রধান বিচারপতির অগ্রাধিকারভিত্তিক নির্দেশনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আশা করছি, চলমান শুনানি আগামী সপ্তাহেই শেষ হবে এবং উচ্চ আদালত প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখবেন।’

তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে পলাতক ফ্যাসিস্টদের দোসর ইয়াবা ব্যবসায়ী বদিদের মতো অপরাধী ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির দীর্ঘদিনের সংশ্লিষ্টতা ছিল, যা বিচার কার্যক্রমকে বিলম্বিত এবং বাধাগ্রস্ত করেছে। বিপ্লব পরবর্তীতে দেখা গেছে, গণহত্যা, গুম-খুন ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া বারবার নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, এমনকি প্রধান উপদেষ্টাসহ বিচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টাইম বোমার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক হামলার চেষ্টাও হয়েছে। তাই আমরা জুডিশিয়ারি, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই- রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে কোনো হুমকি, প্রলোভন বা রাজনৈতিক চাপ যেন আপনাদের প্রভাবিত করতে না পারে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি যে, রায় ঘোষণার পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে। অন্যথায় এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন তাদের সাবেক সহকর্মী হত্যার রায় কার্যকর করার দাবিতে কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’

সাইফুল্লাহ খান বলেন, ‘একই সঙ্গে আমরা শিশু আছিয়া, পারভেজ ও তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডসহ জুলাই-আগস্টে গণহত্যার বিচারিক কার্যক্রম দ্রুততার ভিত্তিতে সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রমের প্রতি তীক্ষ্ম নজর রাখছি এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে যেকোনো চাপ উপেক্ষা করে বিচারিক কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার আহ্বান জানাচ্ছি। ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মতো নৃশংস, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে পারলেই বিচার বিভাগ ও সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হবে। একই সঙ্গে তা জুলাই অভ্যুত্থানে পলাতক ফ্যাসিস্টদের দোসর, গুম-খুন ও গণহত্যাকারীদের বিচার কাজ সুগম করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।’

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক লেফটেন্যান্ট (অব.) মো. মেহেদী হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব মেজর (অব.) মো. রাজীবুল হাসান, উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শাখাওয়াত, মুখ্য সংগঠক সৈনিক (অব.) মো. নাইমুল ইসলাম প্রমুখ।

- Advertisement -

এ বিভাগের আরও সংবাদ